ঢাকা, 20 জুলাই: বাংলাদেশ জুড়ে কার্ফু জারি করল শেখ হাসিনার সরকার ৷ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, দেশে সেনা নামাচ্ছে সরকার । সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন অব্যহত ৷ আন্দোলনকারী-পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন বহু ছাত্র ৷ সবমিলিয়ে মৃতের সংখ্যা 28 ছুঁয়েছে ৷ ছাত্র আন্দোলনে ক্রমশ সরকারের আয়ত্বের বাইরে যাচ্ছে পরিস্থিতি ৷ তা সামাল দিতেই কার্ফু জারি হল দেশজুড়ে ৷
অনির্দিষ্টকালের জন্য় বন্ধ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৷ আন্দোলনকারী ছাত্রদের দেশব্যাপী ধর্মঘটে আরও খারাপ হয়েছে পরিস্থিতি ৷ শুক্রবারও আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চলেছে রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ৷ বাংলাদেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েচে ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা ৷ সংবাদসংস্থা এপি (অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস) সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত 28 জন আন্দোলনকারীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে ৷ তবে অসমর্থিত সূত্রের খবর, মৃতের সংখ্য়া 75 ছাড়িয়েছে ৷ যদিও সংবাদসংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, বাংলাদেশ হিংসায় এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা 105 ৷
শুক্রবার নিহতের সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত ছিল ৷ ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের রিপোর্ট বলছে, 17 জন মারা গিয়েছে ৷ সময় টিভি জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা 30 । যদিও সংবাদসংস্থা এপি’র (অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস) রিপোর্টার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে 23টি মৃতদেহ দেখেছেন, কিন্তু তাঁরা প্রত্যেকেই শুক্রবার মারা গিয়েছে কি না তা পরিষ্কার নয় ।
BREAKING Death toll in Bangladesh unrest reaches 105: hospitals pic.twitter.com/xVUB8P0jji
— AFP News Agency (@AFP) July 19, 2024
সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশে প্রতিবাদ চলছে ৷ গত সোমবার থেকে তা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে ৷ বিক্ষোভের জেরে কার্যত পুরো বাংলাদেশ অচল হয়ে পড়েছে ৷ বাংলাদেশের সরকারি সংবাদ সংস্থা বিএসএস জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য রাজধানী-সহ সারা দেশে আধা-সামরিক বর্ডার গার্ড নামিয়েছে । পাশাপাশি পুলিশ এবং অ্যান্টি ক্রাইম র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরের রাস্তায় টহল দিচ্ছে ৷ শুক্রবার ঢাকা পুলিশ জানিয়েছিল যে তারা রাজধানীতে সমস্ত জমায়েত ও বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করছে ।
প্রসঙ্গত বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় চার লক্ষ গ্র্যাজুয়েটদের জন্য প্রায় 3 হাজার সরকারি চাকরি খোলা হয় । সরকারি চাকরির 56 শতাংশ বর্তমান কোটা পদ্ধতিতে সংরক্ষিত । সর্বাধিক 30 শতাংশ 1971 সালের মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য, 10 শতাংশ অনগ্রসর প্রশাসনিক জেলাগুলির জন্য, 10 শতাংশ মহিলাদের জন্য, 5 শতাংশ জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জন্য এবং এক শতাংশ শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত । আন্দোলনকারীদের দাবি, এই সংরক্ষণের ফলে মেধা ছাত্রছাত্রীরা চাকরিতে যথেষ্ঠ সুযোগ পান না ৷
বাংলাদেশে বাড়তে থাকা অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে নির্দেশিকা জারি করেছে ভারত সরকারও ৷ ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘‘বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, ভারতীয়দের বাংলাদেশে ভ্রমণ এড়াতে এবং সেখানে বসবাসরত ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের বাসস্থানের বাইরে চলাচল কমানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ।’’ একই সঙ্গে কোনও জরুরি বা সাহায্যের প্রয়োজন হাই কমিশনের নম্বরে যোগাযোগ করার কথাও বলা হয়েছে ৷ পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় পড়ুয়াদের উদ্ধার করার কাজও শুরু করেছে ভারতীয় হাই কমিশন। স্থানীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভারতের যে সমস্ত পড়ুয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠরত তাঁদের ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে ।