ঢাকা, 1 ডিসেম্বর: ধৃত সনাতনী নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের জামিনের শুনানি হবে 3 ডিসেম্বর, জানিয়েছে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ৷ তাঁকে 25 নভেম্বর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ চট্টগ্রামের একটি আদালত তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ করে দেয় ৷ অন্যদিকে রবিবারই দেশের হাইকোর্ট বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারিক রহমান, প্রাক্তন মন্ত্রী লুতফোজ্জামান বাবারকে মুক্তি দিয়েছে ৷
আগামী মঙ্গলবার বাংলাদেশের একটি আদালত চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের জামিনের আবেদন শুনবে ৷ চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার মফিজুর রহমান জানিয়েছেন, মেট্রোপলিটন সেশনস আদালতের বিচারক মহম্মদ সইফুল ইসলামের নেতৃত্বে চিন্ময়কৃ্ষ্ণ দাসের জামিনের শুনানি হবে ৷
বাংলাদেশের bdnews24.com-এ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, চট্টগ্রাম আদালতের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, শুনানির দিন আগেই স্থির হয়ে গিয়েছিল ৷ কিন্তু বৃহস্পতি ও শুক্রবার আইনজীবীরা আদলত বয়কট করেন ৷ তার ফলে শুনানির দিনটি ঘোষণা করতে দেরি হয় ৷
কেন গ্রেফতার চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ?
অক্টোবরের শেষ দিকে বন্দর শহর চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকায় হিন্দুদের একটি মিছিলে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছেন সম্মিলত সনাতনী জাগরণ জোট-এর মুখপাত্র চিন্ময়কৃষ্ণ দাস এবং অন্যরা ৷ এই অভিযোগে 30 অক্টোবর সনাতনী নেতা-সহ 19 জনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা দায়ের হয় ৷ এই মামলাতেই তাঁকে 25 নভেম্বর বাংলাদেশের একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ পরদিন, 26 অক্টোবর চট্টগ্রামের একটি আদালতে তাঁর জামিনের আবেদন করলেও, তা খারিজ হয়ে যায় ৷
এর প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা ৷ পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের খণ্ডযুদ্ধ বাধে ৷ পুলিশ লাঠিচার্জ করে ৷ এই হিংসার মাঝেই মৃত্যু হয় সরকারি কৌঁসুলি সইফুল ইসলাম আলিফের ৷ সনাতনী নেতাকে জামিন দিতে না চাওয়া নিয়ে সরব হয় ভারত সরকার ৷ হিন্দু-সহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর ধারাবাহিক অত্যাচারের সমালোচনা করে বিদেশ মন্ত্রক ৷ এমনকী চিন্ময়কৃষ্ণ-সহ 17 জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে বাংলাদেশের অর্থ দফতর ৷ গ্রেফতার হয়েছেন আরও কয়েকজন ইসকনের সাধু ৷
বাংলাদেশের সমালোচনায় সরব ভারত
29 নভেম্বর একদিকে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর এবং অন্যদিকে মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল দু'জনেই জোর দিয়ে জানান, হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়-সহ বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিককে সুরক্ষা দেওয়ার প্রাথমিক দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের ৷ 30 নভেম্বর রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএএস) একটি বিবৃতি জারি করে মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কড়া নিন্দা করে ৷ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তি দাবি করে ৷
মুক্ত শেখ হাসিনার মিছিলে হামলাকারীরা
2004 সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিছিলে গ্রেনেড হামলার মামলায় খালেদা-পুত্র তারিক রহমান ও অন্যদের দোষী সাব্যস্ত করেছিল বাংলাদেশেরই একটি নিম্ন আদালত ৷ রবিবার অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের তরফে এক মুখপাত্র বলেন, "হাইকোর্ট ট্রায়াল কোর্টের রায় খারিজ করে দিয়েছে ৷ তারিক রহমান-সহ সব দোষীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৷"
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পুত্র 57 বছর বয়সি তারিক রহমান বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ৷ গ্রেনেড হামলায় তাঁর বিরুদ্ধে খুন এবং বিস্ফোরণ আইনের আওতায় মামলা দায়ের হয়েছিল ৷ দু'দশক আগে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামি লিগের মিছিলে এই হামলার ঘটনায় 24 জনের মৃত্যু হয় ৷ প্রায় 300 জন আহত হন ৷ তারিক রহমানকে যাবজ্জীব কারাবাসের সাজা দিয়েছিল নিম্ন আদালত ৷
বাংলাদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চ 49 জন দোষীকেই মুক্তি দিয়েছে ৷ ট্রায়াল কোর্ট নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী হরকত-উল-জিহাদ আল-ইসলাম (এইচইউজেআই) দলের এক শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তারিক রহমান-সহ বাকিদের দোষী সাব্যস্ত করেছিল ৷ তাই দুই বিচারপতির বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, আদালতের রায় আইনসিদ্ধ নয় বলে জানায় ৷