একটি ভালো এবং সুস্থ ইমিউন সিস্টেম শুধুমাত্র সুস্থ ও সক্রিয় জীবন যাপন করতে সাহায্য করে না বরং আমাদের অনেক গুরুতর রোগের দ্বারা আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে । শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পরলে বা এর সঙ্গে সম্পর্কিত কোনও রোগের দেখা দিলে সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতা কমে যেতে থাকে । এই কারণে, আক্রান্ত ব্যক্তি কেবল প্রায়শই অসুস্থ হতে শুরু করে না, এটি তার স্বাভাবিক জীবন এবং দৈনন্দিন রুটিনের সঙ্গে সম্পর্কিত কাজগুলি পরিচালনা করার ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করতে পারে ।
বিশেষজ্ঞরা জানান, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পরলে আমাদের শরীর নানা ধরনের সংকেত দিতে শুরু করে । এই লক্ষণগুলি অনেক ধরণের হতে পারে ৷ যেমন- একটি নির্দিষ্ট ধরণের অ্যালার্জি, ক্লান্তি বা ঘন ঘন অসুস্থতা ইত্যাদি । আমরা যদি সময়মতো এই লক্ষণগুলি বুঝতে পারি তবে আমরা কেবল চিকিৎসা এবং সতর্কতা অবলম্বন করে সেই সমস্যাগুলি সমাধান করার চেষ্টা করতে পারি না তবে ভবিষ্যতে আরও অনেক গুরুতর সমস্যায় আক্রান্ত হওয়াও এড়াতে পারি ।
ডাক্তাররা কী বলেন ?
নয়া দিল্লির লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ আশরির কোরেশি বলেন, "আমাদের ইমিউন সিস্টেম শরীরের প্রতিরক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ । আমাদের শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থের সংস্পর্শ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে । কিন্তু কোনও কারণে যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে বা এর সঙ্গে সম্পর্কিত কোনও রোগ দেখা দেয়, তাহলে কম-বেশি গুরুতর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার আশঙ্কা বেড়ে যায় । শুধু তাই নয়, এই অবস্থা আমাদের স্বাভাবিক জীবন এবং দৈনন্দিন রুটিনকেও প্রভাবিত করতে পারে ।"
ইমিউন সিস্টেমে ব্যাঘাতের লক্ষণ: তিনি ব্যাখ্যা করেন, যখন ইমিউন সিস্টেমে কোনও ব্যাঘাত বা সমস্যা হয়, তখন আমাদের শরীর বিভিন্ন উপায়ে সংকেত দিতে শুরু করে । কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই হয় তথ্যের অভাবে বা অসাবধানতার কারণে এই লক্ষণগুলি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ব্যাঘাতের লক্ষণ বুঝতে সক্ষম হন না । তাঁর মতে, অনেক সাধারণ উপসর্গ রয়েছে যা ইমিউন সিস্টেমে সমস্যা নির্দেশ করে । তাদের কিছু নিম্নরূপ ।
ঘন ঘন সর্দি-কাশি: আপনার যদি ঘন ঘন সর্দি হয় বা সাধারণ ফ্লু থেকে সেরে উঠতে বেশি সময় লাগে তবে এটি আপনার ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়ার লক্ষণ হতে পারে । একজন সুস্থ ব্যক্তি বছরে 2-3 বার ঠান্ডায় ভুগতে পারেন ৷ তবে এর চেয়েও বেশিবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে ।
ক্ষত নিরাময় হতে দেরি হওয়া: আমাদের শরীরে কোনও ক্ষত হলে তা দ্রুত সারিয়ে তুলতে ইমিউন সিস্টেম কাজ করে । কিন্তু যদি কোনও ক্ষত সারতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় নেয়, তাহলে এটা হতে পারে আপনার ইমিউন সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ করছে না ।
ঘন ঘন সংক্রমণ: একটি সুস্থ ইমিউন সিস্টেম শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম ৷ কিন্তু যদি সংক্রমণ বারবার ঘটতে শুরু করে, তবে এটি ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতার লক্ষণ হতে পারে । এই সংক্রমণ অনেক ধরনের হতে পারে ৷ যেমন-কানের সংক্রমণ, সাইনোসাইটিস, ফুসফুসের সংক্রমণ বা প্রস্রাবের সংক্রমণ ইত্যাদি ।
ক্লান্তি এবং দুর্বলতা: যদি ক্রমাগত ক্লান্ত বা দুর্বল বোধ করেন এবং বিশ্রাম নেওয়া সত্ত্বেও এটি ভালো না হয় তবে এটি ইমিউন সিস্টেমের সঙ্গে সমস্যার লক্ষণ হতে পারে ।
পেট সংক্রান্ত সমস্যা: পাচনতন্ত্র আমাদের ইমিউন সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ । রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাহত হলে পাকস্থলীতে ভালো ব্যাকটেরিয়ার অভাব দেখা দেয় ৷ যা হজমের সমস্যা সৃষ্টি করে । ঘন ঘন ডায়রিয়া, বদহজম, পেটে ব্যথা বা গ্যাসের সমস্যা ইঙ্গিত দিতে পারে ৷ আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে ।
অ্যালার্জি এবং ত্বকের সমস্যা: ত্বক আমাদের ইমিউন সিস্টেমের প্রথম প্রতিরক্ষামূলক প্রাচীর ৷ যখন ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়, তখন ত্বক প্রভাবিত হয় । এরফলে ঘন ঘন চুলকানি, লাল দাগ, ফুসকুড়ি বা ত্বকে ফুলে যাওয়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতার লক্ষণ হতে পারে ।
ঘন ঘন জ্বর: কোনও আপাত কারণ ছাড়াই ঘন ঘন জ্বর হওয়াও ইমিউন সিস্টেমে সমস্যার লক্ষণ হতে পারে ।
সতর্ক থাকুন সুস্থ থাকুন
ডাঃ আশরির কোরেশি বলেন, "আপনি যদি স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকেন তবেই সুস্থ থাকবেন । যদি উপরে উল্লিখিত উপসর্গ বা লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটি অনুভব করেন, তাহলে আপনার ইমিউন সিস্টেমের স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগ দেওয়ার এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া প্রয়োজন । এছাড়াও সঠিক খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম, ব্যায়াম এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে পারেন ।
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য শুধুমাত্র ধারণা আর সাধারণ জ্ঞানের জন্যই লেখা হয়েছে ৷ এখানে উল্লেখিত কোনও পরামর্শ অনুসরণের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ৷ যদি আগে থেকেই কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে থাকে, তা আগেই চিকিৎসককে জানাতে হবে ৷)