হায়দরাবাদ: বিশ্বজুড়ে চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে গ্লুকোমায় আক্রান্ত বিপুল সংখ্যক মানুষ ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি হারান কারণ তাঁরা জানেন না যে তাঁদের এই সমস্যা রয়েছে । যার কারণে তাঁদের সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া হয় না । ওয়ার্ল্ড গ্লুকোমা অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য অনুসারে, এই সমস্যাটি বিশ্বব্যাপী 75 মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে প্রভাবিত করেছে । আশঙ্কা করা হচ্ছে, 2040 সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী 111 মিলিয়ন মানুষ এই সমস্যা দ্বারা প্রভাবিত হবেন (World Glaucoma Day 2024) ।
বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ, ওয়ার্ল্ড গ্লুকোমা অ্যাসোসিয়েশন এবং ওয়ার্ল্ড গ্লুকোমা পেশেন্টস অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই সময়কালে উদযাপিত বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস এমন একটি ইভেন্ট যা মানুষদের চোখের স্বাস্থ্য ও উন্নত দৃষ্টিশক্তির জন্য প্রচেষ্টা করতে উৎসাহিত করে ৷ এছাড়াও মানুষকে গ্লুকোমা সম্পর্কে শিক্ষিত করে । সচেতনতা তৈরি করা ও সর্বোত্তম সম্ভাব্য উপায়ে শিক্ষিত করার সুযোগ প্রদান করে । এই বছর 10 থেকে 16 মার্চ বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ পালিত হচ্ছে ৷ এছাড়াও 12 মার্চ বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস পালিত হচ্ছে ৷ এর উদ্দেশ্য হল গ্লুকোমাজনিত অন্ধত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিশ্বজুড়ে সম্প্রদায়গুলিকে একত্রিত করা। থিম হল "মুক্ত বিশ্বের জন্য ঐক্যবদ্ধ"।
গ্লুকোমা কী (What is glaucoma)?
বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্লুকোমা আসলে কোনও রোগ নয় ৷ বরং চোখের রোগের একটি গ্রুপ যা চোখের অপটিক নার্ভকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে । এই রোগের প্রভাবে আসার আগে ধীরে ধীরে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা ও পরে অন্ধত্বের মতো সমস্যা দেখা দিতে থাকে । সাধারণত গ্লুকোমা সম্পর্কিত অনেক চোখের সমস্যার সম্পূর্ণ চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না । যার জন্য অনেক ক্ষেত্রে সমস্যার লক্ষণ বুঝতে ও চিকিৎসা পেতে দেরি করাকেও দায়ী মনে করা হয় । কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, সমস্যা জেনে সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে অনেক ক্ষেত্রেই এর জটিল প্রভাব রোধ করা যায় ।
চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করার পাশাপাশি চোখ বা দৃষ্টি সংক্রান্ত কোনও সমস্যা, অস্বস্তি বা অস্বাভাবিকতা উপেক্ষা না করে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন । যাতে সময়মতো ওষুধ ও সার্জারির মাধ্যমে সমস্যাটির চিকিৎসা করা যায় ৷ নিয়মিত চেকআপ ও অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে রোগের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা যায় ।
বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহের ইতিহাস, উদ্দেশ্য এবং তাৎপর্য
বিশ্বব্যাপী গ্লুকোমাকে অন্ধত্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে বেশি দায়ী কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও ভারতে এটিকে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় । 2022 সালের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে অন্তত 1 কোটি 20 লাখ মানুষ গ্লুকোমায় ভুগছিলেন । যার মধ্যে অন্তত 12 লাখ মানুষ অন্ধত্বের শিকার হয়েছেন । চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে প্রায় 90% গ্লুকোমা রোগ শনাক্ত করা যায় না ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার 2021 সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রায় 45 লাখ মানুষকে গ্লুকোমার কারণে অন্ধত্বের সম্মুখীন হতে হয়েছে । CDC-এর সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় 30 লাখ মানুষ গ্লুকোমায় ভুগছেন । গ্লুকোমার গুরুতরতা এবং মানুষের মধ্যে এটি সম্পর্কে তথ্যের অভাবকে স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ব গ্লুকোমা অ্যাসোসিয়েশন 2020 সালে এই ইভেন্টটি শুরু করেছিল । সেই থেকে বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ এবং বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস প্রতি বছর সাপ্তাহিক কার্যক্রম ও বিশেষ দিবস হিসেবে আয়োজন করা হয় ।
এই উপলক্ষে, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ইভেন্ট যেমন চেক-আপ ক্যাম্প, শিক্ষামূলক কর্মশালা, গ্লুকোমা স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম, সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারাভিযান এবং অন্যান্য ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে গ্লুকোমার লক্ষণ, চিকিৎসা এবং ঝুঁকির কারণ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি ৷ জনগণকে শিক্ষিত করার প্রচেষ্টা করা হয় ।
আরও পড়ুন:
(পরামর্শগুলি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের ভিত্তিতে ৷ আপনার কোনও প্রশ্ন থাকলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন)