কলকাতা, 26 অগস্ট: আন্তর্জাতিক সারমেয় দিবসে ফের একবার নেওয়া হোক শপথ ৷ কুকুরদের আর নয় অবহেলা, আর নয় প্রাণ নেওয়া, চারপেয় 'অবলা'কে আর নয় অত্যাচার ৷ সেই 2004 সাল থেকে 26 অগস্ট দিনটিকে সারমেয়দের (Dog) দিন হিসেবে পালন করা হয়। বিশ্বাসঘাতক নয় বরং এতটাই বিশ্বাসযোগ্য এবং ভরসার যে, নিজের জীবন বিপন্ন করেও প্রভুর প্রাণ এরা হামেশাই বাঁচিয়ে থাকে। মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু।এমন ঘটনার নিদর্শন আমরা প্রায়শই পাই । জানুন আজকের দিনের গুরুত্ব ৷
দিনটি পালনের কারণ, প্রতিদিন নানা কাজ করে জীবন অতিবাহিত করে কুকুররা ৷ নিজেদের সুরক্ষা, আইনি সুরক্ষা, বিশেষভাবে সক্ষমদের সাহায্য, আমাদের স্বাধীনতা ও সুরক্ষা, বোমা নিষ্ক্রিয় করার আগে সুরক্ষা, ধ্বংসাবশেষ থেকে দুর্গতদের তুলে আনা। কি না, করে ওরা ৷ যেমন সারাদিন অফিসের কাজ সেরে বাড়িতে ফিরবেন, কোনও কারণে প্রচণ্ড মন খারাপ, কিন্তু একটা প্রাণী সারাদিন ধরে আপনার ফেরার অপেক্ষায় বসে থাকবে ৷
কখন আপনি বাড়ি ফিরবেন, আর কখন সে আদর, আবদার, অভিমান, ভালোবাসা, সারাদিনের জমে থাকা কতকথা মুখে না বলেলেও সবটাই আপনি বুঝে যাবেন ৷ একটু ভালোবাসা পেলেই আপনার জন্য প্রাণ দিতেও রাজি ওরা। এরপরও কত হিংস্রতার শিকার রোজ হতে হয় ওদের!
আন্তর্জাতিক সারমেয় দিবসের ইতিহাস-
- আন্তর্জাতিক কুকুর দিবস প্রথম 2004 সালে পশুপ্রেমী কোলিন পেইগ প্রতিবছর 26 অগস্ট দিনটিকে সারমেয় দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি একজন পশুপ্রেমীর পাশাপাশি এবং ফ্য়ামিলি লাইফস্টাইল এক্সপার্ট ৷ তিনি তাঁর 10 বছর বয়স ছিল তখন থেকে তিনি অন্যদের কুকুর না-কিনে দত্তক নিতে বলেন ৷ মালিকদের কুকুরদের প্রতি সঠিক যত্ন এবং দায়িত্বশীল হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে এই দিনটি পালন করতে বলেন ৷
আন্তর্জাতিক সারমেয় দিবসের উদ্দেশ্য-
- এদিনে আরও একবার আমরা সচেতন হয়ে এই শপথ নিই, ওদের অবহেলা না-করে যত্ন নিই ৷
- এই দিনে বিশ্বজুড়ে কুকুরদের অধিকার, উন্নত পশু কল্যাণ আইন এবং পোষ্যের মালিকদের দায়িত্বশীল হওয়ার বার্তা দেওয়া হয় ৷ তাঁদের সচেতন করতেই এইদিনটিকে বিশেষ মঞ্চ হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে ৷
কুকুর রাখার বৈজ্ঞানিক সুবিধা-
- যখনই আপনি নিজেকে একা অনুভব করবেন কিংবা হয়তো আপনার মনটা খারাপ রয়েছে, আপনার পোষ্য সারমেয়টি কিন্তু মোটেই আপনাকে একা ছেড়ে দেবে না। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কুকুর আমাদের মনের ভাব বুঝতে পারে। তাই এরকম পরিস্থিতিতে আপনার মন ভালো করার এবং আপনাকে সঙ্গে দেওয়ার চেষ্টা করবে।
- নিজের জীবন বিপন্ন করেও প্রভুর প্রাণ এরা হামেশাই বাঁচিয়ে থাকে।
- গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কুকুর স্ট্রেস এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করতে পারে ৷
- কুকুরের সঙ্গে বেড়ে ওঠা আসলে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে অ্যালার্জির ঝুঁকি কমাতে পারে।
- ওরা আমাদের আরও বন্ধু তৈরি করতে এবং আমাদের সামাজিক দক্ষতা উন্নত করতে সহায়তা করে।
- আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে কুকুরের মালিকরা দীর্ঘজীবী হতে পারে এবং স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে আরও ভালোভাবে পুনরুদ্ধার করতে পারে।
- কুকুরের সঙ্গে বেড়ে ওঠা শিশুরা পশুদের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল হয় ৷
- স্ট্রেস, অবসাদ কিংবা মানসিক যে কোনও চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞরা বাড়িতে কুকুর রাখার পরামর্শ দেন। বহু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আত্মহত্যার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয় সারমেয়র সঙ্গ।
9. শত প্রতিকূলতার মধ্যেই জীবনকে কীভাবে উপভোগ করে বাঁচতে হয়, তা আমাদের শেখায় সারমেয়রা, এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাস্তার কুকুরদের সমস্যা-
- স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা: রাস্তার কুকুর অপুষ্টি, সংক্রামক রোগ এবং যানবাহনের ধাক্কায় মারা যায় ৷ জলাতঙ্কের মতো রোগও ছড়াতে পারে, যার কারণে অনেকের মৃত্যু হয় ৷
- আক্রমণ: রাস্তার কুকুররা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে ৷ যার ফলে অনেকের প্রাণ যায় ৷ অনেক কুকুর রেগে গিয়ে মানুষকে কামড়ে দেয় ৷
- মানুষের নিষ্ঠুরতা: রাস্তার কুকুরও মানুষের নিষ্ঠুরতার শিকার হয় ৷ যেমন ধর্ষণ, ধারালো অস্ত্রের আঘাত, বিষ প্রয়োগ এবং অ্যাসিড আক্রমণ।
কুকুরকে নিরাপদ রাখতে ভারত সরকারের উদ্যোগ-
- অ্যানিমাল বার্থ কন্ট্রোল (ABC) প্রোগ্রাম: কুকুরদের জীবাণুমুক্ত করা হয়, টিকা দেওয়া হয় এবং রাস্তার কুকুরের সংখ্যা কমাতে যা কামড়ানো বন্ধ এবং জলাতঙ্ক নির্মূল করার একমাত্র কার্যকর পদ্ধতি।
- এনজিওগুলির সঙ্গে সহযোগিতা: সরকার রাস্তার কুকুরের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য এনজিও ও প্রাণী কল্যাণ গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে দল গঠন করে ৷
- সচেতনতা প্রচার: সরকার পোষ্যের মালিকদের দায়িত্বশীল এবং রাস্তার কুকুরকে যাতে অত্যাচার না-করা হয় তার সচেতনতামূলক প্রচারণা চালায়। দিল্লি সরকার "মানুষ হও, জীবন বাঁচাও" নামে একটি প্রোগ্রাম শুরু করেছে ৷ যার লক্ষ্য হল রাস্তার কুকুর দত্তক নেওয়া এবং তাদের সংখ্যা পরিচালনা করা।
- আইনি নির্দেশিকা: সরকার পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা এবং দুর্ব্যবহার রোধ করতে এবং আইন প্রণয়ন করেছে ভারত সরকার ৷ কুকুর নিয়ন্ত্রণ প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমাল অ্যাক্ট 1960 এবং স্টেট মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্টস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।