হায়দরাবাদ, 21 এপ্রিল: অতিরিক্ত গরমে আর যাই খাই না কেন, বাজারচলতি রঙিন ঠান্ডা পানীয় খাওয়ার অভ্যাস পুরনো । ছোট থেকে বড় সকলেই গরমে গলা ভিজানোর জন্য নানা কোম্পানির কালো-সাদা সফট ড্রিঙ্কস ব্যবহার করেন। আর অজান্তেই ডেকে আনেন ডায়াবেটিস বা ক্যানসারের মতো মারণ রোগ । অতিরিক্ত সফট ড্রিঙ্কস পান করার ফলে শরীরে কী কী ক্ষতি হয়, জানালেন ইন্টারনাল মেডিসিন ও ক্রিটিকাল কেয়ারের চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার ও পুষ্টিবিদ শর্মিষ্ঠা রায় দত্ত ।
পুষ্টিবিদ শর্মিষ্ঠার মতে, অনেকেই জেনে খান এটা শরীরে জন্য খারাপ আবার অনেকে গরম পড়েছে ঠান্ডা খেতে হবে তাই কোল্ড ড্রিঙ্কস খাচ্ছেন । এই ধরনের সফট ড্রিঙ্কসের বোতলের পিছনে একটি লেবেল থাকে । যাতে কত পরিমাণ ড্রিঙ্কস সেবন করলে শরীরে কতটা ক্যালোরি যাচ্ছে তার গড় হিসাব পাওয়া যায় ৷ ফলে 100 মিলিতে যদি 10 গ্রাম চিনির ব্যবহার হয় অনুমান করা যেতে পারে কেউ 500 মিলি সফট ড্রিঙ্কস খেলে রক্তে কতটা অতিরিক্ত চিনি মিশল ৷
পুষ্টবিদ জানান, সফট ড্রিঙ্কস আসলে কার্বোনেটেড পানীয় ৷ এতে ব্যবহার করা অতিরিক্ত চিনি ও রঙ শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে ৷ ওবেসিটির দিকে ঠেলে দেয় ৷ রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায় ৷ হতে পারে টাইপ 2 ডায়বেটিস । পাশাপাশি, এই ধরনের পানীয়তে রঙ আনার জন্য ক্যারামেল জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করা হয় যা শরীরে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় ৷ এছাড়াও ত্বকের ক্ষতি, দাঁতের ক্ষয়, লিভারের রোগ হতেই পারে ।
অন্যদিকে, পুষ্টিবিদ শর্মিষ্ঠা বলেন, "ফসফরিক অ্যাসিড থাকে ফুড ড্রিঙ্কস বা কার্বোনেটেড ড্রিঙ্কসে। তাই একসময়ে ভাইরাল হয়েছিল কোল্ড ড্রিঙ্কস দিয়ে লোকে বাথরুম পরিষ্কার করছে । কারণ তাতেও ফসফরিক অ্যাসিড থাকে ৷ দুটো একই প্রোডাক্ট একবারও বলা হচ্ছে না । কিন্তু দুটোতেই একই জিনিস ব্যবহার করা হয় ফলে এটা কোনওভাবেই স্বাস্থ্যকর নয় ৷ পাশাপাশি জিরো সুগার সফট ড্রিঙ্কস বলে কিছু হয় না । পানীয়তে সুক্রোজ বা ফ্রুক্টোজ ব্যবহার করলে তার দাম বেশি হওয়া দরকার ৷ কিন্তু এক্ষেত্রে কম দামেও এই ধরনের পানীয় পাওয়া যায় ৷ তাই সেখানে কী কী দ্রব্য ব্যবহার করা হচ্ছে ভাবার বিষয় ৷"
শুধু তাই নয়, অনেকের ধারণা অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার পর সফট ড্রিঙ্কস পান করেন ৷ এতে কার্বন থাকার ফলে একটু সময়ের জন্য গ্যাস পাস করলেও তা শরীরের ক্ষতিই করে ৷ তাই ব্যতিক্রম হিসাবে ডাব, ব্র্যান্ডেড বাটার মিল্ক, লস্যি, ফলের জুস ইত্যাদি রাখা যেতে পারে ৷
অন্যদিকে, ইন্টারনাল মেডিসিন ও ক্রিটিকাল কেয়ারের চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার বলেন, "কার্বোনেটেড ওয়াটার কোনও অবস্থায় খেতে বলব না । বিশেষ করে যখন অতিরিক্ত গরম লাগছে ৷ কারণ গরমে যখন কার্বন ডাই অক্সাইড বেরিয়ে যাচ্ছে সেই সময় কার্বোনেটেড পানীয় খাওয়া ক্ষতিকর । কার্বোনেটেড ওয়াটার, কালার ওয়াটার আমাদের শরীরের পক্ষে কোনও সময়ই ভালো নয় । তৃষ্ণা নিবারনে সমস্যা হবে । শরীর ঠান্ডা হওয়ার জায়গায় উলটে গরম হয়ে যাবে ।"
তিনি আরও জানান, শরীর ভালো রাখতে বরং বেশি করে জল খাওয়া ভালো ৷ নুন-চিনির জল বা ওআরএস মেশানো জল খেতে পারেন ৷ খেতে পারেন মিছরির জলও ৷ তবে মাথায় রাখতে হবে তীব্র গরম থেকে এসেই কখনও ঠান্ডা জল খাওয়া উচিত নয় ৷ এতে হীতের বিপরীত হয় ৷ আগেকার দিনে কলসি বা কুয়োর জল সকলে খেতেন ৷ এখন ফ্রিজের জল খায় ৷ তাতে সমস্যা নেই ৷ তবে সেটা যেন একদম চিলড ঠান্ডা না হয়, সেদিকে নজর রাখা ভালো ৷
আরও পড়ুন
1. গরমের সকাল থেকে রাত, কেমন হবে ডায়েট চার্ট? শুনুন বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ
2. স্বাস্থ্যই সম্পদ, সচেতনতার বার্তা আইনজীবী থেকে চিকিৎসকের
3. সময়ে খাওয়া থেকে পর্যাপ্ত ঘুম- গরমে সুস্থ থাকার পথ বাতলালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক