কলকাতা, 24 অক্টোবর: থিয়েটার পাড়ায় ফের নারী নিগ্রহের অভিযোগ ৷ এক নাট্যকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন নির্যাতিতা ৷ এর আগেও একাধিক নাট্যকর্মীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে । আবারও একই ধরনের ঘটনার অভিযোগ সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরলেন এক যুবতী । পালটা জবাব দিলেন অভিযুক্ত নাট্যকর্মী রাজেশ দেবনাথও ।
নির্যাতিতা এক দীর্ঘ পোস্ট করেছেন সোশাল মিডিয়ায় । সেই পোস্টে তিনি দাবি করেন, গত বছর রাজেশ দেবনাথ নামে একজন নাট্য নির্দেশকের সঙ্গে তিনি কাজ শুরু করেছিলেন ৷ নির্যাতিতার নাট্যদল 'পথের মানুষ'-এও একটি নাটক পরিচালনা করেছিলেন রাজেশ । এরপর তিনি তাঁর পরিচালিত অন্য একটি নাটকে নির্যাতিতাকে অভিনয় করার কথা বলেন । নির্যাতিতা নিজেই জানিয়েছেন, রাজেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন তিনি । কাজ না থাকলেও তাঁর রিহার্সালে যেতেন ।
অভিযোগকারিণী আরও লিখেছেন যে, গত বছর দশমীর রাতে তাঁকে রাজেশ ফোন করে ডাকলে তিনি চলে যান । তখন রাজেশের দলের কয়েকজন লোকও সেখানে ছিলেন । রাজেশ তাঁকে আলাদা অফিসে ডেকে নেন । সেদিন সেই নির্যাতিতাও নেশাগ্রস্ত ছিলেন । অভিযোগ, রাজেশ তাঁকে শরীর উন্মুক্ত করতে বললে নানা টালবাহানার পর নির্যাতিতা রাজেশের কথা মেনে নেন । এবং এরপর, তিনি তাঁর দলের একজনকে ঘরে ডাকতে থাকেন । নির্যাতিতার বিশ্বাস ছিল, এমন কাজ রাজেশ তাঁর সঙ্গে করতে পারেন না । নিজেকে ঢাকতে চেয়েছিলেন নির্যাতিতা । কিন্তু তাঁকে পোশাক পরতে দেননি রাজেশ । সেই ব্যক্তি দরজার বাইরে থেকে আসতে হবে কি না জানতে চাইলে নির্যাতিতা না বললেও ভিতরে আসতে বলেন রাজেশ । লজ্জায় মুখ ঢাকেন নির্যাতিতা । তৃতীয় ব্যক্তির চোখে মুখে অপরাধবোধ দেখেন তিনি ।
অভিযোগকারিণীর কথায়, রাজেশ বলেছিলেন তাঁকে বিয়ে করতে হলে এরকম কাজ আরও করতে হবে । এরপর নাকি তর্ক হয় দু'জনের মধ্যে । সেই সময় নির্যাতিতাকে রাজেশ চড় মারতে থাকেন বলে অভিযোগ । এরপর নির্যাতিতা সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে যান । এবং আত্মহত্যার কথাও ভাবেন বলে তিনি লিখেছেন নিজের পোস্টে । ওই ব্যক্তি আরও অনেককেই এহেন নানা প্রস্তাব দিয়েছেন বলেও অভিযোগ নির্যাতিতার । তিনি অকপটে লিখেছেন যে, এই ঘটনার জন্য তিনি নিজেকেই দায়ী করেন ।
এরপরেও রাজেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন অভিযোগকারিণী ৷ পরে তাঁর কাছের মানুষেরা তাঁকে বলেন যে, রাজেশ যা করেছেন তা অন্যায় । তাঁর সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করতে বলেন অভিযোগকারিণীর কাছের মানুষেরা । অভিযোগকারিণী এখন শুধু চান রাজেশের এই কীর্তিকলাপের কথা সকলের সামনে আসুক । কেন এতদিন সেই ঘটনা সামনে আনেননি এই জাতীয় নানা কথা তাঁকে এখন যে শুনতে হবে, তাও বোঝেন তিনি ৷
ওদিকে আত্মপক্ষ সমর্থন করে লম্বা পোস্ট করেছেন অভিযুক্ত রাজেশ দেবনাথও । তিনি লিখেছেন, সবটা মিথ্যে অপবাদ । পরে তিনি সেই পোস্টটি মুছে দেন । অভিযোগকারিণীর পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর বন্ধু সঞ্জিতা । তিনি লিখেছেন, "খুব হাসি পাচ্ছে ??? খুব ??? ওর তখন 17 বছর বয়স ছিল । এটাই যথেষ্ট । লজ্জা ভয় দুটো থাকলে এসব কাজে নামা যায় না । আর নিজের ঘর না পুড়লে এর কষ্টও বোঝা যায় না । এবার ওকে নিয়ে মলেস্টার সমাজ একত্রিত হয়ে খাপ বসাবে । হেসে উড়িয়ে দেবে । আরে 'ও তো ওরকমই মেয়ে' বলে মজা লুটবে । এসব হবে জেনেই ও সাহস করেছে । আমি গর্বিত ও সেটা পেরেছে ।" নির্যাতিতার পাশে দাঁড়িয়েছেন আরও অনেকে । তাঁরাও ভাগ করে নিচ্ছেন অভিযোগকারিণীর সেই পোস্ট ।
এই ব্যাপারে নাট্যকর্মী দেবদাস ঘোষ বলেন, "মেয়েটি আমার কন্যাসম । আমার বন্ধুর মেয়ে। রাগ হচ্ছে রাজেশের উপর । একইসঙ্গে মেয়েটির উপর । তবে, দেরিতে হলেও মেয়েটা সবটা সামনে আনার সাহস দেখিয়েছে এর জন্য সাধুবাদ দিই । রাজেশ ক'টা নাটক করেছে ? আর ক'জনের সঙ্গেই বা কাজ করেছে ? রাজেশের মতো মানুষদের ফোকাস নাটক নয়, ওদের ফোকাস এই সব কাজের দিকেই । এদের শাস্তি হওয়া উচিত । বলতে বাধ্য হচ্ছি খুব একটা সুনাম নেই রাজেশের । এরকম নাট্যকর্মীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে দলে । এরা নাটকটা মন দিয়ে করতে আসেনি । অল্প কাজেই অনেকটা সময় যায় তাই আসল কাজটা আর বেশিদিন করতে পারে না ।..."
এদিন দেবদাস আরও একটি দিক তুলে ধরে বলেন, "সুমিত রায়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে । তবে, ওকে যতটুকু চিনতাম এমনটা মনে হয়নি । যদি সত্যিই অন্যায় করে থাকে শাস্তি দরকার উভয়েরই ।"