মুম্বই, 13 অক্টোবর: এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকীর আচমকা প্রয়াণ তোলপাড় ফেলে দিয়েছে বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে । গুলিতে তাঁর হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া মাত্রই শনিবার গভীর রাতেই বলিউডের সুপারস্টার সলমন খান সোজা চলে যান মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে । সলমন এবং বাবা সিদ্দিকী ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন ৷ তিনি ছিলেন সলমনের নির্বাচনী এলাকারই বাসিন্দা ৷ রাতেই স্বামী রাজ কুন্দ্রার সঙ্গে হাসপাতালে যান শিল্পা শেট্টি ও বলিউডের মুন্নাভাই সঞ্জয় দত্তও ৷
কোভিডে গরিবের মসিহা: মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকী রাজনীতির পাশাপাশি বলিউডের সেলিব্রিটি মহলেও একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন ৷ কোভিড অতিমারি চলাকালীন রোগীদের জীবনদায়ী ওষুধ সরবরাহ করার জন্য মানুষের দরাজ প্রশংসা পেয়েছেন তিনি ৷ কোভিড পরিস্থিতিতে যখন দেশজুড়ে পরপর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, সেই সময় 66 বছর বয়সি এই নেতা দুঃস্থ রোগীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থা করেছিলেন ।
গ্র্যান্ড ইফতার পার্টির আয়োজক: তাঁর গ্র্যান্ড ইফতার পার্টির জন্যও মায়ানগরীতে বেশ পরিচিত ছিলেন বাবা সিদ্দিকী ৷ তাঁর আয়োজিত ইফতার পার্টিতে বলিউডের নামী-দামি তারকারা উপস্থিত থাকেন । মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বান্দ্রা (পশ্চিম) আসন থেকে তিনবার প্রতিনিধিত্ব করা বাবা সিদ্দিকী মুম্বইয়ের একজন বিশিষ্ট মুসলিম নেতা হিসেবে পরিচিত ৷ সলমন খান, শাহরুখ খান এবং সঞ্জয় দত্ত-সহ বলিউডের নামী তারকাদের কাছের মানুষ ছিলেন এই এনসিপি নেতা ৷
লীলাবতী হাসপাতালে সেলিব্রিটিরা: রাজনীতিবিদ বাবা সিদ্দিকীর হত্যার খবর পাওয়ার পরই বলিউডের সুপারস্টার সলমন খান তাঁর রিয়েলিটি শো 'বিগ বস 18'-এর শুটিং বাতিল করে মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতালের দিকে রওনা হন । ভাইজানকে হাসপাতালের বাইরে দেখে বেশ আবেগপ্রবণ বলে মনে হয়েছে ৷ তিনি ছাড়াও যান সঞ্জয় দত্ত ৷ রাজ কুন্দ্রার সঙ্গে হাসপাতালে যান শিল্পা শেট্টি । তাঁর চোখের জল ক্যামেরায় ধরা পড়েছে ৷ জহির ইকবালও বাবা সিদ্দিকীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে গিয়েছেন ৷
বাবা সিদ্দিকীর দৌলতে কাটে শাহরুখ-সলমন দ্বন্দ্ব: বাবা সিদ্দিকীর ইফতার পার্টি ভারতের বিনোদন রাজধানীতে হাই-প্রোফাইল ইভেন্টগুলির মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হয় । 2013 সালে বাবা সিদ্দিকীর ইফতার পার্টি বলিউডের দুই সবচেয়ে বড় সুপারস্টার সলমন খান এবং শাহরুখ খানের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী দ্বন্দ্বের অবসান ঘটায় । পাঁচ বছর ধরে চলা এই দ্বন্দ্ব পুরো বলিউডকে দুটি শিবিরে বিভক্ত করে রেখেছিল ।
রাজনৈতিক কেরিয়ার: রাজনৈতিক কেরিয়ারের দিকে চোখ রাখলে দেখা যায়, বাবা সিদ্দিকীর ছেলে জিশান সিদ্দিকী বর্তমানে মুম্বইয়ের কংগ্রেস বিধায়ক । এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে কংগ্রেস ছেড়ে এনসিপিতে যোগদান করেন বাবা সিদ্দিকী ৷ তবে কংগ্রেস ছাড়ার কোনও কারণ উল্লেখ করেননি তিনি ৷ শুধুমাত্র কিছু জিনিস অপরিবর্তিত রাখাই ভালো বলে তিনি উল্লেখ করেছিলেন ।
টানা তিনবারের বিধায়ক, সামলেছেন মন্ত্রীত্ব: তাঁর এনসিপিতে যোগদানের মাধ্যমে অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপি লোকসভা নির্বাচনের আগে বেশ চাঙ্গা হয়ে ওঠে ৷ এনসিপি নেতারা বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে নির্বাচনের জন্য মুম্বইতে বিশেষ করে মুসলিম অধ্যুষিত ওয়ার্ডগুলিতে দলকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সিদ্দিকীর উপর ভরসা করেছিলেন ৷ বাবা সিদ্দিকী 1999, 2004 এবং 2009 সালে টানা তিন মেয়াদে বিধায়ক ছিলেন । তিনি রাজ্য সরকারের খাদ্য ও বেসামরিক সরবরাহ, শ্রম এবং এফডিএ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন (2004-08), এবং পরপর দুই মেয়াদে পৌরসভার কর্পোরেটরও ছিলেন ।
ইন্দিরা-রাজীবের সঙ্গে কাজ: তিনি মুম্বই আঞ্চলিক কংগ্রেস কমিটির চেয়ারপার্সন ও সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং মহারাষ্ট্র প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সংসদীয় বোর্ড সদস্য হিসাবেও কাজ করেছেন । এনসিপিতে যোগ দেওয়ার আগে কংগ্রেসে তাঁর 48 বছরের সফর নিয়ে তিনি বলেছিলেন, "আমার সফর ছিল ইন্দিরা গান্ধি-রাজীব গান্ধি-সঞ্জয় গান্ধির সঙ্গে । বর্তমান কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আমার বাবার মতো । কিন্তু কখনও কখনও ব্যক্তিগত জীবনে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয় ৷"
শনিবার দশেরায় রাত 9.30 টার দিকে বাবা সিদ্দিকীকে তিনজন দুষ্কৃতী মুম্বইয়ের খের নগরে তাঁর ছেলের অফিসের বাইরে গুলি করে ৷ তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা ৷