কলকাতা, 31 অগস্ট: হেমা কমিটির রিপোর্ট আসার পরেই সরব বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। নারী সুরক্ষা কমিটির দাবি সামনে রেখে একটি চিঠিও তৈরি করে 'উইমেনস ফোরাম ফর স্ক্রিন ওয়ার্কার্স'। সেই আবেদনে সাড়া দিল 'ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া'৷ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে তৈরি হল 'সুরক্ষা বন্ধু কমিটি' ৷ ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের নেতৃত্বে বিনোদন ইন্ডাষ্ট্রিতে মেয়েদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে তৈরি হল এই কমিটি ৷
ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, "শুক্রবার থেকেই কাজ শুরু হয়ে গেল সুরক্ষা বন্ধুর। আমরা মেইল আইডি দিয়েছি অভিযোগ জানানোর জন্য ৷ পাশাপাশি ফেডারেশনের হেল্পলাইন নম্বর 8017066666-ও চালু করা হয়েছে এদিন থেকেই ৷" তবে এদিনের মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন না আর্টিস্ট ফোরামের কোনও সদস্য ৷ এই বিষয়ে ফেডারেশন সভাপতি বলেন, "আর্টিস্ট ফোরামকেও আহ্বান জানিয়েছি। আমাদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই। তাঁরা আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতেই পারেন।"
নতুন কমিটি গঠন নিয়ে ধারাবাহিকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ফিল্ম বা টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ কয়েকটি গিল্ড আছে। প্রত্যেক গিল্ডে ছেলে এবং মেয়েরা সমানভাবে কাজ করছে। তাই এমন একটা ফোরাম সত্যিই দরকার যেখানে পুরুষদের দ্বারা কোনওরকমভাবে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হলে মেয়েরা অভিযোগ জানাতে পারবেন অকপটে এবং নির্ভয়ে। বুক চিতিয়ে বলতে পারে নিজেদের কথা। অনেকেই কাজ না পাওয়ার ভয়ে বলতে চান না। সেটাও যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখলে ভালো।"
এদিন ফেডারেশনের তরফে জানানো হয়েছে, মহিলাদের সঙ্গে অভব্য আচরণ সমর্থন করে না ফেডারেশন। এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে, কানে এসেছে। এরপর থেকে এরকম কিছু ঘটলে লিখিত বা মেল করে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অভিযোগকারীর নাম গোপন রাখবে ফেডারেশন। বিভিন্ন গিল্ডের সদস্যদের মধ্য থেকে মহিলা প্রতিনিধিদের নিয়ে ফেডারেশন একটি কমিটি বা নির্বাহী সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছে।
ফেডারেশনের তরফে এদিন আরও জানানো হয়েছে, কর্মক্ষেত্রের যে কোনও জায়গায় শুটিং হোক বা প্রি-প্রোডাকশন, পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজ করতে গিয়ে কোনও মহিলা সদস্য যদি কোনওরকম লিঙ্গ বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হোন তাহলে অভিযোগ জানান ৷ অশালীন ইঙ্গিত বা আচরণের শিকার হলে, যে কোনও প্রকার অসুরক্ষিত পরিস্থিতিতে পড়লে বা যে কোনও বৈদ্যুতিন মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যদি উত্যক্ত করার চেষ্টা করেন তা হলে সঙ্গে সঙ্গে সেই মহিলা 'সুরক্ষা বন্ধু' কমিটির সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে 'সুরক্ষা বন্ধু' কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ জানাতে হবে বা মেলের মাধ্যমে অভিযোগ পাঠাতে হবে।"
ফেডারেশনের এই উদ্যোগে পাশে রয়েছে কলকাতা পুলিশ, কয়েকজন আইনজীবী এবং শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল। এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়েছে অভিযোগকারী যদি আদালতে ব্যয় এবং আইনজ্ঞের পেশাদারি পারিশ্রমিক দিতে অপারগ হন তা হলে সেই খরচ ফেডারেশন বহন করবে কিংবা আইনজীবীরা বিনা পারিশ্রমিকে এই আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।
অন্যদিকে, বেসরকারি হাসপাতালে অভিযোগকারীর কোনওরকম মনোবিজ্ঞানগত সহায়তার প্রয়োজন হলে অথবা অন্যান্য কোনও চিকিৎসাগত প্রয়োজন পড়লে সেক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। এই উদ্যোগে 'ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশন'-কে পাশে পেয়েছে ফেডারেশন। আহ্বান জানানো হয়েছে 'ওয়েস্ট বেঙ্গল মোশন পিকচার আর্টিস্টস ফোরাম'কে।