কলকাতা, 10 ডিসেম্বর: 'ভারতের জাতীয় সিনেমা কী?' এমন বিষয় নিয়ে 30তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এক মনোজ্ঞ আলোচনা সভা বসে শিশির মঞ্চে। আলোচক হিসেবে ছিলেন ফিরদৌসুল হাসান, গৌরী রাম নারায়ণ, শৈবাল চট্টোপাধ্যায়, সুমন মুখোপাধ্যায়, ও.পি শ্রীবাস্তব। আলোচনায় একটা বিষয় খুব স্পষ্টভাবে উঠে আসে যে- সিনেমার একটা নিজস্ব ভাষা আছে। সেই ভাষাই তাকে জাতীয় স্তরে পৌঁছে দেয়। এদিনের আলোচনায় উঠে আসে হিন্দি গানের জনপ্রিয়তার বিবর্তনের কথাও।
নাট্যকার, অভিনেতা সুমন মুখোপাধ্যায় বলেন, "গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গোটা দেশ পেশীবহুল জাতীয়তাবাদের উত্থান দেখেছে। অথচ 'জাতীয়তা' বিষয়টি বহুমাত্রিক ও বহুস্তর বিশিষ্ট। তাই 'এক ভারত অভিন্ন ভারত' কথাটা নিতান্তই প্রহেলিকা। জোর করে জাতীয়তাবাদ চাপানোর মধ্যে ফ্যাসিবাদ আছে।" সুমন মুখোপাধ্যায়ের মতে, প্রেমচন্দ্র, জয়শঙ্কর প্রকাশ, মোহন রাকেশ মোটেও হিন্দি সংস্কৃতির প্রতিনিধি নন। বরং উত্তর ও মধ্য ভারত কেন্দ্রিক এক সংস্কৃতিকে তাঁরা আয়ত্ত করার চেষ্টা করেন।
প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসান বলেন, "জাতীয় সিনেমা কী তা নিয়ে এই মঞ্চে আলোচনা হচ্ছে। একটা ঘটনার কথা বলি, আমাকে একবার একটা অনুষ্ঠানে আঞ্চলিক ছবির প্রযোজক হিসেবে পরিচয় করানো হয়। আমি নিজেই উপযাচক হয়ে সেখানে বলি, আমি একজন ভারতীয় সিনেমার প্রযোজক। আমি বাংলা ছবির নির্মাতা। ভারত এমন একটা দেশ যেখানে নানা ভাষার ছবি তৈরি হয়। এবং তা নানা রাজ্যের মানুষ দেখেন। ফলে ভারতের সব ছবিই জাতীয় ছবি।"
তিনি আরও বলেন, "আমি মস্কো গিয়ে দেখেছি সেখানে রাজ কাপুরের ছবির গান চলছে 'মেরা জুতা হ্যায় জাপানি'। পাশাপাশি মস্কোবাসীরা 'জিমি জিমি জিমি আজা আজা আজা' গানেফ নাচে মোহিত হয়ে যাচ্ছেন। তা হলে কীসের জাতীয় সিনেমা?" চলচ্চিত্র সমালোচক শৈবাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, "পুষ্পা 2 মুক্তি পেয়েছে। যুগ এসেছে 'আরআরআর' ঘরানার ছবি বানানোর। আমি পূর্ববঙ্গের ছেলে। ছোটবেলাটা রাঁচিতে কেটেছে। তারপর কলকাতা। তা হলে আমি কী করে বুঝব জাতীয়তাবাদ কাকে বলে?"