কলকাতা, 14 জানুয়ারি: কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী তথা সুরকার শ্যামল মিত্রের আজ অর্থাৎ 14 জানুয়ারি 96তম জন্মদিন। গতকাল 13 জানুয়ারি ছিল আরেক কিংবদন্তি, চলচ্চিত্র পরিচালক শক্তি সামন্তর জন্মদিন। দারুণ সখ্যতা ছিল সামন্ত এবং মিত্রর মধ্যে। দুজনে সমবয়সি হলেও একে অপরকে 'আপনি' করেই সম্বোধন করতেন। গুণগ্রাহী ছিলেন একে অপরের।
শক্তি সামন্ত পরিচালিত 'অমানুষ' এবং 'আনন্দ আশ্রম' ছবির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন শ্যামল মিত্র। দু'টি ছবির গানই হিট হয় সেই সময়। এমনই হিট যে আজও মানুষের ঘরে ঘরে বাজতে শোনা যায় 'আনন্দ আশ্রম'-এর 'তিনটি মন্ত্র নিয়ে যাদের জীবন, সত্যম শিবম সুন্দরম' কিংবা 'অমানুষ'-এর ' কী আশায় বাঁধি খেলাঘর'। এরপর হঠাতই ছন্দপতন। 'দেয়ানেয়া'র রিমেক 'অনুরোধ'-এর সঙ্গীত পরিচালনার কাজ বন্ধ করে মুম্বইয়ের পাট চুকিয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন শ্যামল মিত্র। কিন্তু কেন? কী হয়েছিল সেদিন সন্ধ্যায়? বাবা শ্যামল মিত্রর কাছ থেকে শোনা ঘটনার স্মৃতি আওড়ালেন সঙ্গীত শিল্পী সৈকত মিত্র।
ইটিভি ভারতকে সৈকত বলেন, "কাছ থেকেই দেখেছি শক্তি সামন্তকে। প্রথম দেখা আমাদের পুরনো বাড়ির সরস্বতী পুজোতেই ৷ আমাদের বাড়ির দু'পাশের ছাদ জুড়ে সরস্বতী পুজো হত। সালটা 1975 কি '76 হবে। ঠিক মনে পড়ছে না। শক্তি সামন্ত এসেছিলেন আমাদের বাড়িতে। বাবার সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল ওঁর। বাবা শক্তি সামন্তর পরিচালনায় 'আনন্দ আশ্রম' এবং 'অমানুষ' ছবির সুর করেন। এরপর শক্তি সামন্ত বাবুর হঠাতই ইচ্ছে হয় উনি 'দেয়ানেয়া' ছবির হিন্দি রিমেক করবেন।"
শ্যামল মিত্রের ছেলে আরও বলতে থাকেন, "সকলেই জানেন 'দেয়ানেয়া' বাবার জীবনের গল্প নিয়েই লেখা। বাবাই প্রযোজনা করেছিলেন ছবিটার। বাবা 'দেয়ানেয়া'র হিন্দি রিমেকের জন্য গানের সুর করা শুরু করলেন। রাজেশ খান্না হলেন সেই ছবির নায়ক। রাজেশ জি তো তখন সুপারস্টার। বাবাকে রাজেশ জি বলেছিলেন, 'কী শক্তি জি'র সঙ্গে ঘোরেন, আমার সঙ্গে থাকুন। দেখবেন কোথা থেকে কোথায় চলে যাবেন।...' উনি এভাবেই কথা বলতেন সবসময়। পরদিন সন্ধ্যায় গিরিজা সামন্ত মানে শক্তি সামন্তর ভাইয়ের বাড়িতে বাবা সুর নিয়ে বসেছেন।"
সঙ্গীত শিল্পীর কথায়, "পরিচালক শক্তি সামন্ত এসে বাবাকে আরও তিনটে ছবির গানের সুর করতে বলেন। বাবা বলেন, ধুর মশাই একসঙ্গে করব কীভাবে? একে একে করব। তখন উনি বাবাকে 'দেয়ানেয়া' ছেড়ে দিতে বলেন। বাবা খুব অবাক হন এবং আহত হন সেদিন মনে মনে। ওটা বাবার নিজের জীবনের গল্প। বাবা বলেছিলেন, আমি তা হলে কোনওটাই করব না। এগুলো তখন মুম্বইতে চলতই। এখন এখানে হয়। বাবা তারপর মুম্বই ছেড়ে দিলেন এক প্রকার শক্তি বাবুর সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণেই। মুম্বইয়ের ফ্ল্যাটটাও বেচে দিয়েছিলেন। সব পিছুটান ভুলে চলে এসেছিলেন কলকাতায়।" |
সৈকত নিজের সঙ্গে শক্তি সামন্তর স্মৃতি আওড়ে বলেন, "এরপরে আমাদের দেখা হয় বাবা মারা যাওয়ার পর। 1989 সালে মুম্বইয়ের বান্দ্রা পার্কে পুজোর সময়ে একটা অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলাম। আমার গান দূর থেকে শুনেছিলেন উনি। শোনার পর বলেছিলেন, 'ভালোই তো গান করেছো। কিন্তু বাবাকে এত ফলো কোরো না।' উনি আমাকে গুলশন কুমারের সঙ্গে দেখা করতে বলেন মুম্বইতে। গুলশন কুমার নতুনদের সুযোগ দিতেন। উনি চিঠি লিখে দিয়েছিলেন গুলশন কুমারকে। নটরাজ স্টুডিয়োতে এরপর দেখা হয় আমার শক্তি বাবুর সঙ্গে। হ্রাসভারী লোক ছিলেন। কম কথা বলতেন।"