কলকাতা, 8 অগস্ট: প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য । তাঁর সাংস্কৃতিক চেতনা নিয়ে অনেক অজানা কথা ইটিভি ভারতের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ ।
তাঁর কথায়, "আজ ওঁর নিথর দেহটা দেখে অনেক পুরনো কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল । একসঙ্গে অনেক কাজ করেছি আমরা ৷ অনেক স্মৃতি রয়েছে আমার । যেমন, তখন কালার ল্যাবরেটরি রূপায়ণ, রূপকলা কেন্দ্র তৈরির সঙ্গে আমিও যুক্ত ছিলাম । ফলে তখন অনেক আলাপ আলোচনা হতো ওঁর সঙ্গে । সব ব্যাপারে ওঁর উৎসাহ দেখেছি প্রবল । কাজ করতে গিয়ে অনেক সময়েই কথা কাটাকাটি, ভুল বোঝাবুঝি, মত পার্থক্য হয়েছে । আবার মিটেও গিয়েছে । কিন্তু, সব সময় খুব পজিটিভ থাকতেন সব ব্যাপারে ৷ চাইতেন, শেষ পর্যন্ত কাজটা যেন হয় ।"
তিনি আরও বলেন, "ময়দানে বইমেলা হওয়ার ব্যাপারেও ওঁর বিরাট অবদান ছিল । বিভিন্ন জেলাতেও বইমেলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ।সিনেমা নিয়েও ছিল বিপুল আগ্রহ । আজ অনেক বড় পরিসরে কলকাতার চলচ্চিত্র উৎসব পালিত হয় । কিন্তু শুরু হয় ওঁর উদ্যোগেই ৷ শুরুতে আমি চেয়ারম্যান ছিলাম । তারপর অনেকদিন আমি ছিলাম না । এবার আবারও আমাকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়ারম্যান হওয়ার প্রস্তাব দিলেন । নস্ট্যালজিক হয়ে যাচ্ছি ৷ সেই সব ফেলে আসা দিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে ।"
"বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অনেক কাজ করে গিয়েছেন ৷ আসলে উনি নিজেও ভালো কবি এবং প্রাবন্ধিক ছিলেন । এই জগতের লোকের সঙ্গেই বেশি মিশতেন । ওঁর আমলেই মুক্তি পায় 'হীরক রাজার দেশে', 'গণদেবতা', 'পরশুরাম', 'গৃহযুদ্ধ'র মতো সব ছবি । মুক্তি পায় আমার 'পদ্মা নদীর মাঝি'। বুদ্ধদেববাবুর পছন্দের লেখক ছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় । আমি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা 'পদ্মা নদীর মাঝি' বানাচ্ছি জানার পর খুব খুশি হয়েছিলেন উনি । দেখা হলেই জিজ্ঞেস করতেন, কবে বানাচ্ছি ছবিটা । আমি বলতাম 'পদ্মা নদীর মাঝি' তো পদ্মা ছাড়া হয় না", স্মৃতিচারণায় বলছিলেন গৌতম দেব ৷
উনি আমাকে বলতেন, "আপনি বাংলাদেশের প্রযোজক খুঁজুন । আমি খুঁজলাম । তখন ওখানে কপি রাইট নিয়ে অনেক সমস্যা হচ্ছিল । সেই সময় উনি পাশে ছিলেন আমার । স্বত্ব সংক্রান্ত সমস্যা উনিই মিটিয়েছিলেন । ছবিটা অবশেষে তৈরি হয় এবং দুই বাংলাতেই সাফল্য পায় । উনি সকলকে বলে বেরিয়েছিলেন ছবিটার কথা । এ ছাড়াও, নানা সময়ে ছবির বিষয়ে নানান সাহায্য ওঁর কাছ থেকে পেয়েছি । সব ব্যাপারে আগ্রহ ছিল অফুরান । আজ দিনটা বড় বেদনার । বাংলার চলচ্চিত্রজগৎ ওঁর কাছে ঋণী হয়ে থাকবে ৷"