কলকাতা, 21 জুলাই: সালটা 1958 সাল, তারিখ 24 সেপ্টেম্বর ৷ দমদমের এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয় শিপ্রা রায়চৌধুরীর ৷ বাবা নীলাঞ্জন রায়চৌধুরী ছিলেন একজন নৃত্যশিল্পী ৷ আর্থিক অনটনের কারণে খুব বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি শিপ্রা ৷ মিষ্টি-স্নিগ্ধ সেই মেয়েটি নজরে আসে পরিচালক তরুণ মজুমদারের ৷ ঘোরে ভাগ্যের চাকা ৷ সেদিনের শিপ্রা হয়ে ওঠেন সকলের কাছের মহুয়া রায়চৌধুরী ৷ তাঁর খ্যাতি ও সাফল্যের শিখরে পৌঁছনো খুব কাছ থেকে দেখেছেন অভিনেত্রী রত্না ঘোষাল ৷ 22 জুলাই মহুয়া রায়চৌধুরীর মৃত্যুদিন ৷ 39 বছর পর আজও মহুয়ার সঙ্গে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত তরতাজা প্রবীণ অভিনেত্রী রত্না ঘোষালের স্মৃতিতে ৷
মহুয়ার সঙ্গে আলাপের ঘটনার স্মৃতিচারণ করছিলেন অভিনেত্রী রত্না ৷ তিনি বলেন, "মহুয়ার সঙ্গে আমার আলাপ ভীষণ সুন্দরভাবে ৷ তখন আমার 'পান্না-হীরে-চুনী' মুক্তি পেয়েছে ৷ দর্শকরা আমাকে চিনতে শুরু করেছে ৷ আমার ফ্ল্যাটের পাশে সুদর্শন নামে এক দাদা থাকতেন ৷ তিনি আবার সম্পর্কে ছিলেন মহুয়ার দাদা ৷ তিনি একদিন আমাকে জানান, মহুয়া আমার সঙ্গে দেখা করতে চান ৷ আমি জানালাম, নিয়ে আসতে ৷ মৌ এসে আমাকে জানায়, আমার ছবি ওর ভীষণ ভালো লেগেছে ৷ তাই তোমার সঙ্গে আলাপ করার ইচ্ছে হয়েছিল ৷ আমি ওকে প্রশ্ন করলাম, তুমি কী করো ? মহুয়া জানাল, পড়াশোনার পাশাপাশি নাচ শেখে ৷ ভালো ভরতনাট্যম নাচতে পারে ৷"
প্রথম দেখার পর ফের দেখা হয় দুই অভিনেত্রীর, রত্নার কথায়, "মাসখানেক বাদে এক স্টুডিয়োপাড়ায় আবার মহুয়ার সঙ্গে দেখা হয় ৷ তখন মৌ বলে, তরুণ মজুমদার ওকে ডেকেছিলেন ৷ কিন্তু তখনও ফাইনাল হয়নি তনুদা মহুয়াকে ওনার ছবিতে নেবেন কি না ৷ এইভাবেই শুরু আমাদের সম্পর্ক ৷ আমাকে আর মৌ দিদি বলত না, মাটু বলে ডাকত ৷ বন্ধু বলো, ছোট বোন বলো, সেই থেকেই আমাদের সম্পর্কের সূত্রপাত ৷"
মহুয়ার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন রত্না ঘোষাল ৷ অভিনেত্রীর প্রেমও দেখেছিলেন কাছ থেকে ৷ এই প্রসঙ্গে প্রবীণ অভিনেত্রী আরও বলেন, "নহবতে আমার সঙ্গে নাটকও করত মৌ ৷ শুটিং করতে গিয়ে তিলকের সঙ্গে প্রেম ৷ আমার সঙ্গেও আলাপ করায় ৷ অদ্ভুতভাবে তিলকের সঙ্গে আমি আবার প্রথম ছবি 'রাজা রামমোহন'-এ অভিনয় করি ৷ সেখানে রামমোহনের ছোটবেলার চরিত্রে দেখা যায় তিলককে ৷ তিলক-মহুয়া একে অপরকে খুব ভালোবাসত ৷"
অভিনেত্রী জানান, মহুয়ার বাবা কিন্তু তিলকের সঙ্গে বিয়ে দিতে চাননি ৷ তিনি বলেন, "মৌ ছিল ওদের বাড়ির সোনার ডিম ৷ মৌয়ের রোজগারে সংসার চলত ৷ বিয়ে হলে ওদের সংসার কীভাবে চলবে ৷ তাই সোনার ডিম কি কেউ ছেড়ে দিতে চায়! এরপর মৌ ঠিক করে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে ৷ আর উঠবে আমার বাড়িতে ৷ ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার ৷ তরুণ কুমার মানে বুড়োদা একসপ্তাহের মধ্যে রেজিস্ট্রি ম্যারেজের ব্যবস্থা করেন ৷ আমি ছিলাম কন্যাপক্ষ ৷ বুড়োদা ছিল পাত্রপক্ষ ৷ সেখান থেকে দাদা মানে উত্তম কুমারের বাড়ি যাই ৷ তিনি মহুয়াকে দেখে অবাক ৷ দাদা বলেন, না-খেয়ে যাওয়া যাবে না ৷ এরপর বেণুদি খাবারের ব্যবস্থা করেন ৷ সেইদিন ভীষণ আনন্দ করেছিলাম আমরা ৷" আরও নানান স্মৃতি অভিনেত্রী রত্না ঘোষাল ভাগ করে নিলেন ইটিভি ভারতের সঙ্গে ৷