কলকাতা, 2 মার্চ: পর্দায় ফিরছেন উত্তর কুমার ৷ নেপথ্যের কারিগর সৃজিত মুখোপাধ্যায় ৷ চিরকালের ম্যাটিনি আইডলকে আধুনিক প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় করাতে প্রস্তুত পরিচালক ৷ গতকালই মুক্তি পেয়েছে 'অতি উত্তম' ছবির ট্রেলার ৷ তবে আর পাঁচটা ট্রেলারের থেকে এই ট্রেলার একদমই আলাদা ৷ কারণ পরিচালক সৃজিত পর্দায় তুলে ধরলেন উত্তম কুমারের 'ভূত'কে ৷
আসলে মহানায়কের একগুচ্ছ নানা স্বাদের চরিত্রের ছবি ভিএফএক্সে হাজির করেছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ক্যামেরার কারসাজিতে সেই চরিত্র নড়বে, চড়বে, কথা বলবে ছবির চরিত্রদের সঙ্গে। উত্তম কুমারের ছবি তো জোগাড় করা গেল। তাঁকে ভিএফএক্স-এর মাধ্যমে চলমানও করা গেল। কিন্তু তাঁর কণ্ঠে সংলাপ বলবে কে ? তাঁকে তো আর প্ল্যানচেটের মাধ্যমে সশরীরে নিয়ে আসা সম্ভব নয় ৷ সেই সমস্যার সমাধান করেছেন অভিনেতা সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কণ্ঠেই শোনা যাবে উত্তম কুমারের স্বর ৷
- " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="">
বাংলার নাট্যজগতে সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান কম নয়। ইটিভি ভারত-কে তিনি বলেন, "এই গুণের অধিকারী আমি একা নই। আরও অনেকে আছেন। তবে, নাট্যকার বিভাস চক্রবর্তী বলতেন, আমাদের থিয়েটার জগতে এই গুণ রমাপ্রসাদ বণিক এবং আমার নাকি সবথেকে বেশি আছে। শাঁওলি মিত্র রমা দা'র কাছে উৎপল দত্তের অভিনয়, অজিতেশের অভিনয় দেখতে চাইতেন। বিপ্লবদা আর আমি একসঙ্গে সিরিয়াল করেছি। সেই সূত্রে গ্রিনরুমে বসে প্রখ্যাত অভিনেতাদের নিয়ে আলোচনা হত ৷ বিপ্লবদা, উৎপল দত্তের স্ক্যানিং করতেন। আর আমি শম্ভু মিত্রের। এভাবেই বিপ্লবদা জানতে পারেন, আমার স্ক্যানিং করার ক্ষমতার কথা।"
তিনি আরও বলেন, "সৃজিতের ছবিতে আমার মহানায়কের কণ্ঠ দেওয়ার ব্যাপারে বিপ্লব দা'র ভূমিকা এক এবং অদ্বিতীয়। উনিই আমার নাম বলেন সৃজিতকে। বিপ্লব দা'র কাছে শুনে আমাকে সৃজিত ফোন করে বলেন, 'তোমার এই গুণটার কথা তো জানা ছিল না।' সৃজিত হোয়াটসঅ্যাপে উত্তম কুমারের একটা সংলাপ আমার কণ্ঠে ক্লিপ করে পাঠাতে বলে। আমি পাঠাই। এরপর ডাবিং-এর দিন ঠিক হয়। মহানায়কের অনেকগুলি বয়সের কণ্ঠের দরকার ছিল। তখনও আমার একটা বয়সেরই করার কথা। পরে যখন দেখা গেল আমি মহানায়কের সব বয়সেরই কণ্ঠ পারছি ৷ তখন বিপ্লবদা সৃজিতকে বলেন আর কাউকে খুঁজো না, সুরজিৎ করুক। আর সেটাই হয়েছে। শুধু তো গলা নয়, ডেলিভারি, পাংচুয়েশন সবই তো এর সঙ্গে যুক্ত।" অভিনেতা আরও বলেন, "সৃজিত আমার একাধিক থিয়েটার দেখেছে। বিভাস দা'র নির্দেশনায় 'হ্যামলেট'-এ আমার অভিনয় দেখেছে। কিন্তু আমার কোনও অভিনয়েই মহানায়কের ছাপ ছিল না। ফলে এই বিষয়টা ওর জানা ছিল না।"
অভিনেতার কাছ থেকেই জানা যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রথম দিকের গান শুনলে তিনি নাকি পঙ্কজ মল্লিক গাইছেন তা বোঝার উপায় ছিল না। একইভাবে কিশোর কুমার, সায়গল সাহেবের গলা এবং শচীন কর্তার গলায় গান গাইতে পারতেন। অভিনেতার মধ্যেও এই গুণ থাকলে তার প্রভাব অভিনয়ে পড়ে। প্রসঙ্গত, একবার 'দাদাগিরির মঞ্চে এসে ছবি বিশ্বাস, মহানায়ক উত্তম কুমারের কণ্ঠ শুনিয়েছিলেন সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গ তুললে অভিনেতা বলেন, "সৌরভকে কেউ বলেছিল আমার কথা। তাই শুনতে চেয়েছিল। আমিও শুনিয়েছিলাম।"
তিনি আরও বলেন, "মঞ্চে শম্ভু মিত্রের অভিনয় আমার কণ্ঠে শুনে ওঁর মেয়ে শাঁওলি মিত্রও একবার বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমি মিমিক্রি শিল্পী নই। এটা আমার অভিনয় চর্চার মধ্যে পড়ে। যাদের অভিনয় আমাকে মুগ্ধ করে, আমি তাঁদের কণ্ঠে কথা বলতে পারি। ছবি বিশ্বাস, উৎপল দত্ত, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শম্ভু মিত্র তাঁদের মধ্যে রয়েছেন। আমার মামা প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব স্বপন কুমারের কাছ থেকে এঁদের কথা শুনি। পরে এঁদের অভিনয়ও দেখি। এই গুণের অধিকারী খরাজ মুখোপাধ্যায়ও।"
ইতিমধ্যেই অনিন্দ্য সেনগুপ্ত, রোশনি ভট্টাচার্য, গৌরব চট্টোপাধ্যায়, শুভাশিষ মুখোপাধ্যায় ও লাবনী সরকার অভিনীত এই ছবি মুক্তি পাবে 22 মার্চ ৷ তার আগে ট্রেলারে মজেছে দর্শকরা ৷ উত্তম কুমারের নানা সময়ের নানা ভঙ্গি দর্শককে অন্যরকম বিনোদন দেবে তা নিশ্চিত ৷ তবে অনুরাগীদের মনে একটা প্রশ্ন উঠেছে, তা হল এতদিন উত্তম কুমার-সুচিত্রা সেনের রোম্যান্টিসিজমের সত্যতা কি সামনে আসবে ? তার উত্তর দিয়েছেন স্বয়ং উত্তম কুমার ৷ জানান, আমরা ছায়ার জগতে বিচরণ করি তো, কাজে কাজেই আমাদের রক্ত-মাংসের জ্যান্ত শরীরটা জনসাধারণের সামনে খুব বেশি করে তুলে না ধরাই ভালো ৷
আরও পড়়ুন
1. শিল্পী কেজি সুব্রহ্মণ্যকে নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র দেখানো হল বিশ্বভারতীতে, নেপথ্যে গৌতম ঘোষ
2. দিদির ঘরে 'বাংলার দিদি', মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে নিয়ে আসছে নাচ-গানে আড্ডায় জমজমাট পর্ব
3. উদ্ধার হল তিন দশক আগে হারিয়ে যাওয়া সিনেমা, দেখানো হবে এসআরএফটিআইয়ে