কলকাতা, 5 সেপ্টেম্বর: রাত দখলে সামিল হতে চেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তাই বুধবার সন্ধে হতেই পৌঁছে গিয়েছিলেন শ্যামবাজারে। কিন্তু চরম হেনস্থার শিকার হতে হল তাঁকে। এক নারীর উপর অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে এসে আরেক নারীকে অসম্মান করা অপরাধ। এই বলেই অভিনেত্রীর পাশে দাঁড়াল টলিউডের একাংশ। ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন, সুদীপ্তা চক্রবর্তী থেকে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়।
সুদীপ্তা চক্রবর্তী সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, "আপনারা তাঁর অবস্থানটা দেখলেন না। অথচ ভুয়ো ভিডিয়োটি দেখে ঘৃণা উগরে দিলেন। আপনার তাঁকে লক্ষ্য করে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিলেন। তিনি তাও মেনে নিলেন। এলাকা ছেড়ে দিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি যখন গাড়িতে বসে রয়েছেন তখন হামলা চালালেন। কী ভয়াবহ পরিস্থিতি ! আমি এই ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করি। আপনারা কী ভুলে গিয়েছেন নারীদের রাত দখলের লড়াইয়ে সামিল হয়েছিলেন ? মহিলাদের সম্মান, অধিকার রক্ষার দাবিতে যে আপনারা মিছিলে সামিল হয়েছিলেন ভুলে গিয়েছিলেন ? কীভাবে এটা করতে পারলেন ? ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে যা হয়েছে, আমি তার তীব্র প্রতিবাদ করি।"
অনন্যা চট্টোপাধ্যায় লেখেন, "ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর অপমানের তীব্র সমালোচনা করছি। এখম আমাদেরকে অনেকেই লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে চাইবেন। তাঁদের সফল হতে দেবেন না প্লিজ।" কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় লেখেন, "ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে এই অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সবাই আন্দোলনে সামিল হতে পারেন। কেউ কাউকে আটকাতে পারেন না। আপনি তাঁর অবস্থান পছন্দ করেননি। আপনি তার সংহতি দেখানো তাঁর সম্পাদিত ভিডিয়ো ঘৃণা করতেই পারেন। ফাইন। আপনি তাঁকে একটি জোরে এবং স্পষ্ট 'গো ব্যাক' স্লোগান দেন। গৃহীত। এমনকী, সে তা মেনে নিয়ে স্থান ত্যাগ করেন। কিন্তু গাড়ির ভেতরে বসে থাকা অবস্থায় তার গাড়ির কাঁচের দরজা ধাক্কা দিচ্ছেন ? এটা কতটা ভয়াবহ !! আমি এর নিন্দা জানাই।"
পরিচালক কমলেশ্বর আরও লেখেন, "আপনি কি ভুলে গিয়েছেন যে, শুধু মহিলাদের জন্য রাত পুনরুদ্ধার করতে রাস্তায় এসেছিলেন ? আপনি কি ভুলে গিয়েছেন, সকলেই একজন নারীর মৌলিক মর্যাদা, সম্মান এবং একজন মানুষ হিসাবে অধিকার নষ্ট করার জন্য বিচার চাইতে রাস্তার দায়িত্ব নিচ্ছেন ? আপনি কীভাবে করতে পারেন ? প্রিয় কলকাতাবাসী, আপনি আজ ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে যা করেছেন তার নিন্দা করছি।"
চৈতি ঘোষাল লেখেন, "একজন মহিলার প্রতি হিংসার প্রতিবাদ চাইতে রাস্তায় নেমে আরেকজন মহিলার প্রতি দুর্ব্যবহার করলেন? আমরা মহিলার সুরক্ষা, মহিলার সম্মান নিয়ে রাস্তায় নেমেছি ? ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত প্রতিবাদ থামিও না।"
অন্যদিকে উলটো সুর রূপাঞ্জনা মিত্রর। তিনি লেখেন, "আশা করি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত তাঁর নৈতিকতা/মানব মনোবিজ্ঞানের পাঠ কঠিনভাবে শিখেছেন। কেন এই সুপার ইন্টেলিজেন্ট নাটক করলেন যেখানে সাধারণ মানুষ তাঁর (রোজভ্যালি) এবং তিলোত্তমার জন্যও নকল শাঁখ বাজানোতে রেগেছে। ভিকটিম কার্ড খেলছেন?"
রূপাঞ্জনার এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন অভিনেতা, বাচিক শিল্পী সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, "রূপাঞ্জনা মিত্র আমি একমত যে তিনি এমন কিছু করেছিলেন যা লোকেরা পছন্দ করেননি এবং তার জন্য যথেষ্ট 'আক্রমণ' করা হয়েছে তাঁকে। তবে আপনি যাকে নাটক বলছেন তা হল সংহতি যা তিনি আজ রাতে আমাদের প্রত্যেকের মতো সেখানে উপস্থিত থেকে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন। আপনি একজন সহ-শিল্পী এবং আপনি যা করেন তার জন্য সম্মানিত এবং আপনি একজন বন্ধু। আমরা আমাদের সিনিয়রদের সম্বন্ধে এভাবেই কথা বলি ?...আপনি যা পোস্ট করেছেন তাতে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। আমরা মানুষকে পছন্দ করি না এবং এটা আমাদের জন্মগত অধিকার কিন্তু এভাবে নয়।"
উল্লেখ্য, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। জলশঙ্খ বাজিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী। এরপরেই নেট নাগরিকবৃন্দের ট্রোলের মুখে পড়তে হয় অভিনেত্রীকে ৷ কটাক্ষের মুখে পড়ে সেই ভিডিয়ো সরিয়েও নেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী ৷ এরপরেও প্রতিবাদ করেছেন তিনি। গিয়েছেন আর্টিস্ট ফোরামের গণ অবস্থানে। বুধবার রাত দখলের কর্মসূচিতে যোগ দিতে শ্যামবাজারে যান ঋতুপর্ণা । সেসময়ে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান সাধারণ মানুষ।