কলকাতা, 5 অগস্ট: বাংলার বিনোদন দুনিয়ায় 'রাহুল জট' কাটতে না কাটতেই হাজির আরও এক জটিল সমস্যা।অভিযোগ, বাংলার নাট্যদলগুলিকে ‘বঞ্চিত’ করেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফ থেকে বাংলার একাধিক নাট্যদলের কেন্দ্রীয় অনুদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে সামনে এসেছে অভিযোগ। জানা গিয়েছে পৌলমী চট্টোপাধ্যায়, মেঘনাদ ভট্টাচার্য, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের মতো নাট্য ব্যক্তিত্বদের নাটকের দলের অনুদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাতেই ক্ষিপ্ত নাট্যকর্মীরা ৷ সোমবার এই নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা নাট্যব্যক্তিত্বদের ৷
কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফ থেকে অনুদান বন্ধ করে দেওয়ার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, যে দলগুলি এখন অনেকটাই স্বাবলম্বী তাদের থেকে অনুদান সরিয়ে নিয়ে অপেক্ষাকৃত নতুন কিংবা দুর্বল দলগুলিকে অনুদান দেওয়া হচ্ছে ৷ নাট্যকর্মী পৌলমী চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, এখনও বাড়ি ভাড়া করে তিনি রিহার্সাল করেন, কোন দিক থেকে তাঁর দল স্বাবলম্বী?
এর মধ্যে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে বলে মনে করছেন প্রখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব দেবেশ চট্টোপাধ্যায় ৷ তাঁর দাবি, সেন্ট্রাল কালচারাল মিনিস্ট্রিতে যে এক্সপার্ট কমিটি রয়েছে সেখানে বাঙালি প্রতিনিধি নেই। সুতরাং বাংলার দলগুলির প্রচার, প্রসার, কাজ নিয়ে সম্যক ধারণা তাঁদের নেই। বিজেপির তরফ থেকে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, সেই ভিত্তিতেই অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র।
অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের মতে, এর মধ্যে কোনও রাজনৈতিক অভিসন্ধি নেই ৷ পুরোপুরি রাজনৈতিক রং মাখানোর চেষ্টা চলছে ৷ দুর্বল দলগুলির প্রচার এবং প্রসারের স্বার্থে এই নতুন ব্যবস্থা ৷ এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক কারণ নেই ৷ যাঁরা কোনও নির্দিষ্ট দলের হয়ে নাটক করে থাকেন তাঁদেরকেও অনুরোধ জানিয়েছেন অভিনেতা ৷ তিনি জানান, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বাইরে বেরিয়ে নিরপেক্ষ নাটক করা উচিত ৷
মঞ্চ অভিনেতা তথা নাট্য নির্দেশক দেবদাস ঘোষ বলেন, "আমি বিজেপি সমর্থক নই। তবুও আমি বলব, কিছু কিছু দলের ক্ষেত্রে অনুদান বন্ধ হওয়া দরকার ছিল। কেন না কেন্দ্রীয় সরকার যে টাকাটা দিত সেটা দুঃস্থ শিল্পীদের জন্য। অধিকাংশ দল তাঁদের হাতে সেই টাকা তুলে দিত না ৷ দিলেও ফিরিয়ে নিত। দলের মাথারাই ওই টাকা উপভোগ করতেন। বিজেপি সরকার এক্ষেত্রে আমি বলব, বাঘের বাচ্চার মতো কাজ করেছে।"
অভিযোগের পর পালটা অভিযোগে আজ জর্জরিত নাট্যমঞ্চ। মঞ্চ অভিনেতা দেবনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "যাঁরা নিয়মিত কাজ করছেন তাঁদের অনুদান তুলে নেওয়াটা ঠিক হয়নি। রাজনৈতিক অভিসন্ধি তো আছেই। অনেকেই এখান থেকে দিল্লিতে গিয়ে উসকেছেন। আগে অনুদান কুক্ষিগত করার ঘটনা দেখেছি। এখন কিন্তু সেটা আর হয় না।" উল্লেখ্য, নাটকের প্রচার এবং প্রসারের স্বার্থে কেন্দ্রের তরফে অনুদান দেওয়া হয়।
‘গুরু-শিষ্য’ পরম্পরায় দেওয়া হয় এই অনুদান ৷ সংস্কৃতি মন্ত্রক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর প্রধান এবং বাছাই করা সদস্যদের কাছে তুলে দেয় অনুদান। কোন দলের কত জন অনুদান পাবেন, তা ঠিক করে মন্ত্রকই। ওই প্রকল্পকে ‘গুরু-শিষ্য পরম্পরা’ অনুদান বলা হয়। সেই অনুদান কারা পাবেন তার একটা তালিকা থাকে ৷ সেই তালিকায় বেশ কিছু পুরনো দল বাতিল হয়েছে এবং নতুন নতুন সংযোজিত হয়েছে ৷ তারপরেই শুরু হয়েছে অভিযোগের পালা ৷