কলকাতা, 8 জুলাই: জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্রের রয়েছে এক অদ্ভূত নেশা ৷ ছবির কাজে হোক বা অন্য কোনও কারণ, যখন যেখানে গিয়েছেন পূরণ করেছেন নিজের শখ ৷ 'দেবী চৌধুরানী' ছবির পরিচালকের শখ এমনই যে. ঘরে বানিয়ে ফেলেছেন ছোট্ট এক মিউজিয়াম ৷ আসলে শুভ্রজিতের দুর্মূল্য প্রাচীন জিনিস সংগ্রহের প্রতি অমোঘ টান বহুদিনের ৷ যেখানেই গিয়েছেন সেখান থেকে নিয়ে এসেছেন ঐতিহাসিক নানা জিনিস, তা বিরল হোক বা প্রাচীন। কী কী রয়েছে তাঁর সংগ্রহশালায়, ঘুরে দেখল ইটিভি ভারত ৷
প্র: প্রাচীন জিনিস সংগ্রহ করার শখ কবে থেকে?
শুভ্রজিৎ মিত্র: আমার মামাদাদু শোভাবাজার রাজবাড়ির মানুষ। ওর কয়েন জমানোর প্রতি আগ্রহ ছিল। দাদু তাঁর ভাণ্ডার আমাকে দিয়ে গিয়েছেন। আমারও এদিকে ঝোঁক বরাবরের। ইতিহাস আর আর্কিওলজি নিয়ে আগ্রহ থাকার কারণে এসবের প্রতি ঝোঁক দিন দিন বাড়ে আমার। নিজের সংগ্রহে রাখার ইচ্ছা জন্ম নেয় তখন। যেগুলো আছে সেগুলো তো দোকান থেকে গিয়ে কিনে আনার জিনিস নয়। বিভিন্ন মিউজিয়ামে গিয়ে আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে তবে সংগ্রহ করতে হয়েছে। যা দেখছেন সবই রেপ্লিকা। তাই সরকারি অনুমতির দরকার পড়ে না। আসলটি রাখা যায় না কারণ ওগুলি দেশের সম্পত্তি।"
প্র: কী কী রয়েছে সংগ্রহশালায়?
শুভ্রজিৎ মিত্র: কিছু দুর্মূল্য ফ্যাক্সিমিল এডিশন যার মধ্যে অন্যতম 1700 শতাব্দীর ঐতিহাসিক ফ্ল্যাভিয়াস জোসেফাসের 'অ্যান্টিকুইটি অফ জিউস'-এর রেপ্লিকা ৷ একজন ফরাসি পর্যটকের 1800 শতাব্দীতে ভারতে যাত্রাপথের ডায়েরি ৷ প্রথম ইউরোপীয় পর্যটকের তিব্বত এবং কাশ্মীরে যাত্রাপথের ডায়েরি এবং মার্কোপোলোর ট্রাভেলগ। এছাড়া 1700 শতাব্দীতে মেবারের রাজার পটচিত্রে রামায়ণের স্ক্যানড কপিও রয়েছে সংগ্রহশালায়। রাজপুত মিনিয়েচার আর্টের উপরে তৈরি এই পটচিত্রগুলি। লেখা হয়েছে হায়ারোগ্লিফিকে। এছাড়াও 'ইজিপশিয়ান বুক অফ দ্য ডেড'-সহ হরেক রকমের দুর্মূল্য বই রয়েছে সংগ্রহে।
প্র: তালিকা তো নেহাত ছোট নয়...
শুভ্রজিৎ মিত্র: হ্যাঁ, আমার প্রাচীন জিনিস সংগ্রহ করতে ভীষণ ভালোলাগে ৷ আমার কাছে রয়েছে অ্যাজটেক গোল্ড ক্যালেন্ডার (2012-তে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা যেখানে লেখা আছে), রোম সাম্রাজ্যের সোনার মোহর, শশাঙ্কের শাসনকালের কয়েন, আলেকজান্ডারের ড্রাকমা, জুলিয়াস সিজার এবং ক্লিওপেট্রার নামাঙ্কিত রুপোর মোহর ৷ এর মধ্যে অন্যতম 1840 সালে সিপাহী বিদ্রোহের আগের সময়ের মুদ্রা ৷ রয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কয়েন, ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম থেকে পাওয়া কিছু প্রাচীন ভারতীয় ভাস্কর্যের রেপ্লিকা, পাকিস্তানের সিন্ধ মিউজিয়াম থেকে আনা ইন্দাস ভ্যালি সিভিলাইজেশনের কিছু ভাস্কর্যের রেপ্লিকা, নন্দলাল বসুর আঁকা পার্থসারথি।
এছাড়া, সোনার জলে আঁকা প্যাপিরাস, চিনের টেরাকোটার যোদ্ধা, প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার নিদর্শন, মাইকেল অ্যাঞ্জেলো ডেভিডের স্কেল ডাউন রেপ্লিকা। এখানেই শেষ নয়, নালন্দার চারটে স্টেজের ইটের টুকরো। বখতিয়ার খিলজির পোড়ানো কালো ইটের অংশ, মুঘল ও সুলতানি রূপোর মোহর। আকবর তথা শেরশাহদের তিব্বত থেকে আনা সোনার মুখওয়ালা অবলোকিতেশ্বর বুদ্ধমূর্তি, চিনের হাতির দাঁতের দাবার ঘুঁটি। রয়েছে রাজস্থানের ফোর্ট থেকে আনা প্রায় আড়াইশো-তিনশো বছরের পুরনো একটি তলোয়ার। আমেরিকান সংবিধানের প্রথম পাতা থেকে আব্রাহাম লিঙ্কনের চিঠি, 1776 সালে আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণা, 1789 সালে আমেরিকা থেকে দাস প্রথা উঠে যাওয়ার সনদ-সহ আরও অনেক কিছু!
প্র: আরও কী কী সংগ্রহে চান রাখতে চান?
শুভ্রজিৎ মিত্র: ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা তৈরি করতে চাই। তবে, তার জন্য সবার আগে একটা বাড়ি বানানো দরকার ৷ সেখানে একটা আসল মমি রাখার বাসনা রয়েছে। ইজিপ্টের প্রতি একটা আলাদা টান রয়েছে আমার ৷
উল্লেখ্য, 'দেবী চৌধুরানী' এবং 'কালমৃগয়া' ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র ৷ অপু ট্রিলজির পরের অংশ নিয়ে বাংলা সিনেমা 'অভিযাত্রিক' বানিয়ে দর্শকমহলে সাড়া ফেলেছেন তিনি। একাধিক বিভাগে জাতীয় পুরস্কারও জিতেছে সেই ছবি। পাশাপাশি, পরিচালকের এই গুণ অনেক অনুরাগীদের কাছেই অজানা ৷