কলকাতা, 22 মার্চ: ‘বুকের মধ্যিখানে শাড়ি পরার ধরন ল্যাম্পপোস্টের নীচে দাঁড়ানো মেয়েদের মতো’ ৷ সম্প্রতি অভিনেত্রী তথা নৃত্যশিল্পী মমতা শঙ্করের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে নেটপাড়ায় ৷ জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রীর এহেন মন্তব্য নিয়ে সরব টলিপাড়ার সেলেব থেকে সাধারণ মানুষ ৷ এই বিষয়ে কী বলছেন অন্যান্য পেশার প্রমিলাবাহিনী ? খোঁজ নিল ইটিভি ভারত।
ডোনা গঙ্গোপাধ্যায় (নৃত্যশিল্পী): যে যার ইচ্ছামতো শাড়ি পরবেন। যেমনভাবে খুশি পরবেন। এই নিয়ে বলার কিছু নেই আমার।
কৌশানি মুখোপাধ্যায় (অভিনেত্রী): একটা মেয়ে তাঁর ইচ্ছা এবং রুচির উপর নির্ভর করে পোশাক পরে। আজ যে সরু প্লিট করে কোমর দেখিয়ে শাড়ি পরছেন কাল তাঁরই ইচ্ছা হতে পারে যে এয়ারহোস্টেস গলার কিংবা হাই নেক ব্লাউজের সঙ্গে সাবেকিভাবে শাড়ি পরবেন। এখানে কারও কিছু বলার থাকতে পারে না। অনেক বছর আগে মেয়েরা কাচুলি পরতেন। তারই উন্নতমাত্রা হল অফ শোল্ডার ব্লাউজ। সাধারণ মেয়ে হোক বা অভিনেত্রী, সবাই ট্রেন্ডের সঙ্গে পা মেলান ।
একজন সাধারণ মেয়ে কোনও অভিনেত্রীর সাজগোজ পোশাক পরার ধরন অনুসরণ করবে না তা তো হয় না। কেউ যদি কষ্ট করে ভালো ফিগার বানান, তিনি শোকেস করতেই পারেন । একইভাবে একজন স্বাস্থ্যবতী মহিলাও চাইবেন নিজেকে যতটা সম্ভব ঢেকে রাখতে । এটা যার যার রুচির উপর নির্ভরশীল । এখানে পুরুষের আকৃষ্ট হওয়ার কথা আসতেই পারে না। আর কোনও পুরুষ যদি একজন খোলামেলা পোশাকের মহিলাকে দেখে আকৃষ্ট হন, সেটা তাঁর সমস্যা বলেই মনে হয় আমার।
রায়তী ভট্টাচার্য (অভিনেত্রী): শাড়ির পড়ার ক্ষেত্রে স্থান কাল পাত্র এক্ষেত্রে নির্ভর করে। আমি পার্টিতে যে ভাবে শাড়ি পরব সেভাবে আমি স্কুলের কোনও অনুষ্ঠানে কিংবা কলেজের প্রোগ্রামে পরব না। উনি যেভাবে বিষয়টাকে জেনারালাইজ করেছেন সেখানে আমার আপত্তি আছে, উনি 'ল্যাম্পপোস্টের ধারে দাঁড়ানো মেয়ে' বলেছেন সেখানে আমার আপত্তি আছে ৷ পুরনো যা কিছু তার একটা ভার আছে, ওজন আছে, নতুন সবই ওজনহীন খারাপ এখানে আমার আপত্তি আছে।
উনি তো নিজে একজন নৃত্যশিল্পী এবং অভিনেত্রী ৷ উনিও তো জানেন যে বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারে নাচ, অভিনয় ব্যপারটাও ভালো চোখে নেওয়া হত না। উনি যে সনাতনীর কথা বলছেন এক সময় উনি নিজেই তো সেটার বাইরে ছিলেন। এর বেশি কিছু আর বলার নেই।
ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় (সঙ্গীত শিল্পী): মমতা শঙ্করের কথার প্রতিবাদ জানিয়ে শিল্পী বলেন, ‘‘যে যার ইচ্ছামতো শাড়ি পরবেন। এটা নিয়ে কিছু বলার থাকতে পারে না। চারদিকে অনেককিছু ঘটে চলেছে যা নিয়ে অনেককিছু বলা যায় । সন্দেশখালি, গার্ডেনরিচ নিয়ে অনেক কিছু বলার আছে । সেগুলো নিয়ে বলা হোক । মম'দি আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধার একজন মানুষ । অত্যন্ত পরিশীলিত, রুচিশীল। উনি ওনার বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে যে শব্দ চয়ণ করেছেন তা কীভাবে পারলেন আমি বুঝতে পারছি না । হয়তো মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন উনি। তবে, এটাও ঠিক মমতা শঙ্কর মানেই উনি সব ঠিক কথা বলবেন আর সেটাই বেদবাক্য এমনটা নয়।’’
উল্লেখ্য, মমতা শঙ্করের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কিছুই বলতে রাজি হননি অভিনেত্রী অঞ্জনা বসু। অভিনেত্রী তথা নৃত্যশিল্পী ইন্দ্রাণী দত্ত বলেন, "মম দি'কে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। ওনাকে নিয়ে এত কথা মানুষ বলছেন আমার ভালো লাগছে না। উনি কাউকে খাটো করে কিছু বলতে চাননি বলে আমার মনে হয়। এই ব্যাপারে আর কিছু বলার নেই আমার।"
সম্প্রতি মেয়েদের শাড়ি পরার ধরন নিয়ে প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী তথা অভিনেত্রী মমতা শঙ্করের একটি মন্তব্য ঘিরে তোলপাড় সামাজিক মাধ্যম। তিনি এক সংবাদ মাধ্যমকে আজকালকার মেয়েদের শাড়ি পরার বিষয় নিয়ে বলেন, "শাড়ি পরব অথচ আঁচল জায়গামতো থাকবে না কেন ? যারা পেশার জন্য ল্যাম্পপোস্টের নীচে দাঁড়ান, তাঁদেরকে শ্রদ্ধা করেই বলছি তাঁরা ওভাবে শাড়ি পরেন। সেটা তাঁদের পেশার জন্য। কিংবা গ্রামের মেয়েদের কাজ করতে গিয়ে আঁচলটা সরে যায় ।"
তিনি আরও বলেন, "এদের কোনও দোষ আমি বলছি না। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে আজকাল মেয়েরা আঁচলটা সঠিক জায়গায় না রেখে শাড়ি পরেন। অকারণে কেন মেয়েরা নিজেদের আব্রু ভাঙবে? এরপর কেউ কিছু বললে তাঁরা বলবেন মেয়েদের নীচু করা হচ্ছে। আমরা মেয়েরা নিজেরাই নিজেদের নীচু করি। একটা জায়গায় আমাদেরকে পুরুষ সম্মান করবেন। আমরা নিজেদেরকে প্রথম দর্শনেই যদি খারাপভাবে স্থাপন করি তা হলে তাঁরা আমাদের সম্মান করবেন কী ভাবে।?"
এহেন মন্তব্যের প্রতিবাদে সোশাল মিডিয়ায় সরব হন অভিনেত্রী শ্রীদেবী থেকে শুরু করে সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন ৷ এমনকী, সাধারণ মানুষও এই মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন ৷ বিতর্কের এই জল কতদূর গড়ায় এখন সেটাই দেখার ৷
আরও পড়ুন
1. দেবের ছবি 'খাদান' থেকে সরে দাঁড়ালেন বনি, কারণ কী?
2. বিজয় দেবেরাকোন্ডাকে চুম্বন শাহিদ কাপুরের, ব্রোম্যান্সের ভিডিয়ো ভাইরাল
3. স্বাধীনতা সংগ্রামী ঊষা মেহতার চরিত্রে সারা, অভিনেত্রীকে কত মার্কস দিলেন অনুরাগীরা