কলকাতা, 4 অগস্ট: বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কান পাতলে শোনা যায়, "এখানে কেউ কারও বন্ধু হয় না ।’’ খুব সংখ্যক লোক এর উলটো বলেন। তার হিসেব নিকেশ না-করে আজ ফ্রেন্ডশিপ-ডে'তে ইটিভি ভারত এমন দু'জনের সঙ্গে কথা বলল যাঁরা একই সময়ে অন্য জায়গায় চাকরি করা কালীনই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছেন অভিনয়ের নেশায়। দু'জনেই 'জন্মভূমি' ধারাবাহিকের মাধ্যমে পৌঁছে গিয়েছেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। একই ধারাবাহিকের মাধ্যমে জিতে নিয়েছিলেন কত তরুণীর হৃদয়, গ্রিনরুমে একসঙ্গে কাটিয়েছেন অনেকটা সময়। তাঁরা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় এবং জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
একটা সময়ে তাঁদের দু'জনকে নিয়ে দর্শকের মনে আগ্রহের অন্ত ছিল না। কার অভিনয় বেশি ভালো মানুষের মধ্যে চর্চাও হত সেই নিয়ে। যেহেতু সমসাময়িক তাই বাস্তবে তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক কেমন এও এক বড় প্রশ্ন। কেননা একজনের নাম নিলে আরেকজনের নাম আজও ঘটনাক্রমেই চলে আসে।
- বন্ধুত্বের এই বিশেষ দিনে, ভাস্বর-জয়জিৎ নামক রসায়ন নিয়ে আলোচনা করতে গেলে ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় বলেন, "জয়জিতের সঙ্গে আমার আলাপের বছর ছাব্বিশ হয়ে গেল। রোজ যে আমাদের কথা হয় বা আড্ডা হয় বা একে-অপরের খোঁজ নিই তা নয়। তবে, আমি কোনও বিপদে পড়লে জয়জিৎ আমার পাশে দাঁড়াবে না এটা হতে পারে না। এর থেকে বড় বন্ধুত্ব হতে পারে? এটাই তো বন্ধুত্ব। আমিও ওঁর বিপদ দেখলে ছুটে যাব না এটা হবে না কখনও।"
- অভিনেতার আরও বলেন, "কত সময় কেটেছে আমাদের একসঙ্গে। কত মজার মুহূর্ত আছে, বলে শেষ করতে পারব না। জয়জিৎ আমাকে 'বড়' বলে ডাকে আমি ওকে 'ছোট' বলে ডাকি। আর আমাদের 'মেজ' হল সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়। সবটাই 'জন্মভূমি' সিরিয়ালের সূত্র ধরে। আমরা সোশাল মিডিয়াতেও এই নামেই ডাকি একে অপরকে। আমি, মনামী আর জয়জিৎ 'পরিণীতা' নামের একটা টেলিফিল্ম করতাম একটা সময়ে। অনেক দূরে আমাদের শুটিং হত। গাড়ি পাঠানো হত আমাদের জন্য। শুটিংয়ে যেতে ভালো লাগত না-বলে এক-একদিন এক-এক জনের বাড়িতে ব্রেকফাস্ট করে আমরা অনেক দেরিতে পৌঁছতাম। শুটিংয়ে ফাঁকি দিতাম আমরা।"
- ভাস্বরের আরও সংযোজন, "এরপর যখন নন্দিনী সিরিয়াল করছি আমি আর জয়জিৎ একসঙ্গে, তখন এনটিওয়ান থেকে ব্রেকের সময়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জয়জিতের বাড়িতে চলে যেতাম। জিমে কাটিয়ে আসতাম। আর আমাদের সেট থেকে খুঁজত। ডেকে পাঠাত । কী সব দিন ছিল তখন। আমরা কেউ কোনওদিন কারোর জায়গা নিইনি, কেউ কারোকে প্রতিযোগী ভাবিনি। তার একটা কারণ অবশ্য আমাদের দু'জনের অভিনয়ের ধরন আলাদা।"
- জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ভাস্বর তো আমার 'বড়' হয় আর আমি ওর 'ছোট'। আমাদের 'মেজ' হল সুমন। 'জন্মভূমি' সিরিয়াল চলাকালীন আমাদের তিনজনের বন্ধুত্ব জমে ওঠে। একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটত। সেই সেদিন যে আমরা একে-অপরকে বড়, মেজ, ছোট ডাকতে শুরু করি সেই অভ্যাস আজও ছাড়িনি ছাড়তে চাই না। কেউ কাউকে কোনও কারণে উইশ করতে চাইলেও ওই নামেই ডাকি ৷ এভাবেই অভ্যস্ত আমরা। আমরা কেউ কাউকে কোনওদিন প্রতিযোগী ভাবিনি। এতদিনের বন্ধু আমরা একে অপরের পাশে থাকি সবসময়। আগামীতেও থাকব। তার জন্য রোজ আড্ডা বা ফোনাফুনির প্রয়োজন পড়ে না। 'পরিণীতা' টেলিফিল্ম করার সময় সে এক দিন ছিল। কোনওদিন ভুলব না আমরা।"
- জয়জিতের কথায়, "আমি মনে করি না ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ কারও বন্ধু হয়। তবে, একসঙ্গে এত বছর ধরে কাজ করতে করতে একটা সম্পর্ক কোথাও না কোথাও তৈরি হয়েই যায়। সেটাই হয়ে গিয়েছে ভাস্বর, সুমন, মনামী, রূপাঞ্জনা, দেবলীনা, বিশ্বনাথ, সোনালীদের সঙ্গে। একে আত্মিক সম্পর্ক বলে। এছাড়াও শঙ্কর দা, ভাস্কর দা, প্যাট দা, কুশল দা-এরকম বন্ধু প্রতীম দাদাদেরও পেয়েছি। কুণাল দা'কে ভীষণ মিস করি ৷ এই সম্পর্কগুলো রক্তের সম্পর্ককে ছাপিয়ে গিয়েছে কোথাও গিয়ে।..."
বন্ধু দিবসে বন্ধুত্ব নিয়ে নিজেদের ধ্যান ধারণা স্পষ্ট করলেন টলিউডের দুই জনপ্রিয় অভিনেতা। যাঁদের নিয়ে গত 25 বছর ধরে দর্শকের আগ্রহ তুঙ্গে। যাঁরা আজও নতুন। আবালবৃদ্ধবনিতা তাঁদের সামনাসামনি দেখলে দু'মিনিট দাঁড়িয়ে কথা বলতে চায় কিংবা কথা বলার সাহস দেখায় তাঁদের অভিব্যক্তিতে মুগ্ধ হয়ে। সেই ভাস্বর এবং জয়জিৎ একে-অপরের পাশে থাকাকেই বলেন 'বন্ধুত্ব', রোজ আড্ডা দেওয়া বা খানাপিনাকে নয়।