বারাণসী, 21 মে: বারাণসী লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃতীয়বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ স্বাভাবিকভাবেই এই আসনটির দিকে নজর গোটা দেশের ৷ এটি দেশের অন্যতম হটসিট ৷ তৃতীয়বারের মতো এখান থেকে নির্বাচনে জয়ী হলে রেকর্ড গড়বেন নমো ৷ তবে এই কেন্দ্র এ বার নিজেই আরেকটি রেকর্ড গড়েছে । এ বারই প্রথম এই আসনে সবচেয়ে কম প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন । 1967 থেকে 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে এই প্রথমবার বারাণসী আসন থেকে মাত্র 7 জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন । প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁদের অন্যতম ৷
বারাণসীতে নয়া রেকর্ড: বারাণসী আসনটিকে 2014 সাল থেকে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে বিবেচনা করা হয় । 2014 এবং 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে, বারাণসীতে এটি প্রথমবার দেখা গেল যখন এখানে প্রার্থীর সংখ্যা এত কম ৷ একজন প্রার্থীর বিপরীতে এখানে 40 জনেরও বেশি প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখা গিয়েছে । যদিও ফলাফল প্রত্যাশিতই হয়েছে ৷ দুই-তিনজন প্রার্থী ছাড়া বাকি সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে । সমাজবাদী পার্টি, কংগ্রেস, বহুজন সমাজ পার্টি-সহ ছোট-বড় দলগুলির নেতারা কেউই দাঁত ফোটাতে পারেননি ৷ আর এ বার বারাণসী থেকে মাত্র 7 জন প্রার্থী ভোটে লড়ছেন । প্রধানমন্ত্রী মোদি ও আরও 6 জন ৷ এ বার এটা নয়া রেকর্ড ৷
33 প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল: 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য কালেক্টরেটের জেলা নির্বাচন অফিসার এস. রাজালিঙ্গমের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন প্রার্থীরা । এর মধ্যে যাঁদের সব তথ্য দেওয়া ছিল না, তাঁদেরটা সংশোধন করা হয় । শেষ দিন পর্যন্ত মোট 41 জন মনোনয়নপত্র জমা দেন । মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে 33 জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় । অপরদিকে, জাতীয় সমাজবাদী জনক্রান্তি পার্টির পরস নাথ কেশরী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন । এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-সহ মাত্র 7 জন প্রার্থী এ বার ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন ৷ তাঁদের ভাগ্য ইভিএমে বন্দি হবে 1 মে ।
বারাণসীর 7 প্রার্থী: এ বার বারাণসীতে ভোটের ময়দানে রয়েছে বিজেপির (পদ্মফুল) নরেন্দ্র মোদি, কংগ্রেসের (হাত) অজয় রাই, বহুজন সমাজ পার্টির (হাতি) আতহার জামাল লরি, আপনা দল কামেরওয়াড়ির (খাম) গগন প্রকাশ যাদব, যুগ তুলসী পার্টির (রোড রোলার) কলি শেঠি শিবকুমার, নির্দল (বাঁশি) সঞ্জয়কুমার তিওয়ারি, নির্দল (ডাম্বেল) দীনেশ কুমার যাদব । 1967 থেকে 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে এই প্রথমবার বারাণসী আসন থেকে মাত্র 7 জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ।
1967-2019 পর্যন্ত প্রার্থীর সংখ্যা: যদি আমরা পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে, 1967 সালে বারাণসীতে লড়াইয়ে ছিলেন 12 জন প্রার্থী, 1971 সালে ছিলেন 14 জন প্রার্থী, 1977 সালে ছিলেন 11 জন প্রার্থী, 1980 সালে ছিলেন 22 জন প্রার্থী, 1984 সালে ছিলেন 19 জন প্রার্থী, 1989 সালে ছিলেন 18 জন প্রার্থী, 1991 সালে ছিলেন 24 জন প্রার্থী, 1996 সালে 47 জন প্রার্থী, 1998 সালে 13 জন প্রার্থী, 1999 সালে 12 জন প্রার্থী, 2004 সালে 18 জন প্রার্থী, 2009 সালে 15 জন প্রার্থী, 2014 সালে 42 জন প্রার্থী এবং 2019 সালে ছিলেন 26 জন প্রার্থী । এখন ইভিএম ব্যবহার করা হয় নির্বাচনে । ইভিএমের একটি ব্যালট ইউনিটে মোট 16টি বোতাম থাকে । 15 জন প্রার্থীর জন্য এবং নোটার জন্য একটি বোতাম রয়েছে ৷ যদি 15 জনের বেশি প্রার্থী থাকে, তবে ডাবল ব্যালট ইউনিট ব্যবহার করা হয় । যেটা বেশ কয়েকবার প্রয়োজন হয়েছে এই কেন্দ্রে ৷
2014 সালে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী 42 জন: 2014 সালে বারাণসী থেকে মোট 42 জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন । একজন প্রার্থী ছাড়া সবার জামানত বাজেয়াপ্ত হয় । 2014 সালের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদি মোট 5,81,022 ভোট পেয়েছিলেন, যেখানে দ্বিতীয় স্থানে থাকা অরবিন্দ কেজরিওয়াল 2,09,238 ভোট পান । কংগ্রেস প্রার্থী অজয় রাই 75,614 ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন । তবে জামিন বাঁচাতে পারেননি তিনি । সমাজবাদী পার্টি ও বিএসপির প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হয় । এর পাশাপাশি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয় ৷ সে বছর মোট 40 জন প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয় ।
2019 সালেও প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত: 2014 লোকসভা নির্বাচনে 16 জন প্রার্থী ছিলেন যাঁরা মাত্র 1.5 হাজার ভোট পান, আর 10 জন প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট মাত্র 3 সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল । শূন্যের কোঠায় আটকে পড়েন চারজন প্রার্থী । 2019 সালের নির্বাচনেও একই অবস্থা দেখা গিয়েছে । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি 4.75 লক্ষ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচনে জেতেন । প্রধানমন্ত্রী মোদি পান 6,74,664 (63.86%) ভোট, সপার শালিনী যাদব পান 1,95,159 (18.47%) ভোট, কংগ্রেসের অজয় রাই পেয়েছেন 1,52,548 (14.44) ভোট ৷ 2019 সালে প্রধানমন্ত্রী মোদির বিরুদ্ধে 25 জন প্রার্থীর মধ্যে 22 জন প্রার্থীর জামানত বাঁচানো যায়নি । 2014 এবং 2019 সালের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মোদি বিপুল ভোটে জয়ী হন ৷
2019 সালের প্রতিদ্বন্দ্বীরা: 2019 সালে বারাণসী আসন থেকে মোট 25 জন প্রার্থী ভোটে লড়েন ৷ অজয় রাই (কংগ্রেস), শালিনী যাদব (সমাজবাদী পার্টি), অনিল কুমার চৌরাসিয়া, অমরেশ মিশ্র, অশিন ইউএস, আশুতোষ কুমার পান্ডে, উমেশ চন্দ্র কাটিয়ার, ত্রিভুবন শর্মা, প্রেমনাথ শর্মা, ব্রজেন্দ্র দত্ত ত্রিপাঠী, রাকেশ প্রতাপ, রাজেশ ভারতী সূর্য, রামশরণ, শেখ সিরাজ বাবা, সুরেন্দ্র রাজভার, হরি ভাই প্যাটেল, হিনা শহীদ, আতিক আহমেদ, ঈশ্বর দয়াল সি, চন্দ্রিকা প্রসাদ, মনীশ শ্রীবাস্তব, মনোহর আনন্দরাও পাতিল, মানব সুন্নাম ইস্তারি এবং সুনীল কুমার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
আরও পড়ুন: