নয়াদিল্লি, 2 জুলাই: 2014 ও 2019 সালের মতো 2024-এ একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হতে পারেনি বিজেপি ৷ সরকার চালাতে তাই শরিকরাই বড় ভরসা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ৷ তাঁর সেই শরিক-নির্ভরতাকেই মঙ্গলবার লোকসভায় দাঁড়িয়ে নিশানা করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দু’টি ক্রাচ নিয়ে হাঁটছেন, একটি হল চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি এবং অন্যটি হল নীতীশ কুমারের জেডিইউ এবং এই সরকার যে কোনও সময় ভেঙে যেতে পারে ৷ বিজেপি দুর্নীতিগ্রস্ত শরিকদের ওয়াশিং মেশিন দিয়ে পরিষ্কার করেছে ৷ কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের কী ট্র্যাজেডি যে মোদি, যিনি রাজনৈতিক ব্যবস্থা স্বচ্ছ করার কথা বলেন, তিনি কলঙ্কিত রাজনীতিবিদদের নিয়ে সরকার গঠন করতে বাধ্য হয়েছেন ।"
অষ্টাদশ লোকসভার প্রথম অধিবেশনে এখন চলছে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ভাষণের উপর ধন্যবাদজ্ঞাপক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ৷ মঙ্গলবার সেই আলোচনাতেই অংশ নেন শ্রীরামপুরের সাংসদ ৷ আর সেই ভাষণেই তিনি মোদির শরিক-নির্ভরতা নিয়ে কটাক্ষ করেন ৷ পাশাপাশি বিজেপির আসন সংখ্যা নিয়েও কটাক্ষ করেন তিনি ৷
বিজেপি এবার চারশো পারের স্লোগান দিয়েছিল লোকসভা ভোটে ৷ তারা জিতেছে 240টি আসন ৷ সেই বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে চু-কিতকিত খেলার প্রসঙ্গ টানেন কল্যাণ ৷ তাঁর বলার ধরন ও সামগ্রিক বিষয়টি নিয়ে সংসদে হাসির রোল ওঠে ৷
তবে সেসবকে গুরুত্ব না দিয়ে একের পর এক ইস্যুতে মোদি সরকারের সমালোচনায় সরব হন তিনি ৷ কল্যাণের দাবি, নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট ৷ বাংলায় বিজেপি নেতাদের কথায় পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকদের বদলি করেছে ৷ সিআইএসএফ জওয়ানরা ভোটারদের বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য ভয় দেখিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি ৷
কল্যাণ বলেন, "লোকসভা নির্বাচনের সময় মোতায়েন করা সিআইএসএফ জওয়ানরা ভোটারদের বিজেপির পক্ষে ভোট প্রভাবিত করার হুমকি দিয়েছেন ৷ পঞ্চম পর্বের ভোটের সময়, পশ্চিমবঙ্গে আমার নির্বাচনী এলাকায় দুই সিআইএসএফ জওয়ান মহিলাদের শ্লীলতাহানি করেছেন ৷’’
তিনি আরও বলেন, "এটা অমিত শাহের জন্য লজ্জার যে যাঁরা ভোটারদের নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল, তাঁরা ভোটারদের প্রভাবিত করেছেন এবং মহিলাদেরও নির্যাতন করেছেন । আবার নির্বাচন কমিশনও বিজেপির পক্ষে ভোট প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল ।"
পাশাপাশি সাতদফায় ভোট হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি ৷ একই সঙ্গে অভিযোগ করেন, মোদি বিরোধীদের সঙ্গে প্রতিহিংসামূলক আচরণ করে বলেই মোদির জনপ্রিয়তা কমে যাচ্ছে ৷ তিনি ট্রেজারি বেঞ্চকে মনে করিয়ে দেন যে বিজেপির সরকারে এবার অনিশ্চিয়তা রয়েছে ৷ কিন্তু বিরোধীরা এখন শক্তিশালী ৷
এ দিন কল্যাণের বক্তব্য শেষ হতেই বলতে ওঠেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খান ৷ তিনি পালটা তোপ দাগেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে ৷ তাঁর কথায়, বাংলায় লোকসভা-বিধানসভা ছাড়া অন্য কোনও ভোট হয় না ৷ তৃণমূল কমিশন মানে না, রাজ্যপালকে মানে না, আদালতকে মানে না ৷ কেন্দ্রীয় বাহিনী-নির্বাচন কমিশন না থাকলে ভোটই হয় না ৷
সৌমিত্র অভিযোগ করেন, কোচবিহারে মহিলাকে নগ্ন করে হাঁটানো হয়েছে ৷ চোপড়ায় মহিলার উপর অত্যাচার হয়েছে ৷ পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের সম্মান নেই ৷ তৃণমূলের উদ্দেশ্যে সৌমিত্রর প্রশ্ন, 29 জন বেশি নাকি 240 বেশি ৷ জয় বাংলা বলে বিরোধীদের শেষ করছে ৷ এভাবে পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের সঙ্গে মিশে যাবে ৷ পশ্চিমবঙ্গে কিছুদিনের মধ্য়ে হিন্দুরা শেষ হয়ে যাবে ৷