নয়াদিল্লি, 6 জুন: ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর বুধবার দিল্লিতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বাড়িতে ইন্ডিয়া জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক বসে। সূত্রের খবর, সেখানে সিদ্ধান্ত হয় ইন্ডিয়া জোট সরকার গঠনের জন্য উদ্যোগী হবে। বিজেপি বিরোধী যে কোনও রাজনৈতিক শক্তি ইন্ডিয়া জোটে অংশগ্রহণ করতে চাইলে তাদের স্বাগত জানানো হবে বলেও খবর। গতকাল রাত পর্যন্ত বৈঠক হওয়ার পর ফের বৃহস্পতিবার দিল্লিতে একাধিক নেতার বাড়িতে ইন্ডিয়া জোটের প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। এদিন সকালেই সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবের বাড়িতে যান তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডেরেক ও'ব্রায়েন। তাদের মধ্যে প্রায় ঘণ্টাখানেক বৈঠকও হয়। একইভাবে আপ নেতা রাঘব চাড্ডার সঙ্গে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের বৈঠক করেছে।
অন্যদিকে, শিবসেনার উদ্ধব গোষ্ঠীর নেতা সঞ্জয় রাউতের সঙ্গে রাঘব চাড্ডার বৈঠক হয়েছে। সার্বিকভাবে ইন্ডিয়ার জোটের যারা অন্যতম বড় শরিক, তাদের এই আলাদা আলাদা বৈঠক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। বিশেষ করে, তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায় এবং সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের বৈঠকের বেশি গুরুত্ব বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, লোকসভা নির্বাচনের অনেক আগেই পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলোকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীতে কংগ্রেস-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি মিলিয়ে বিজেপি বিরোধী যে ইন্ডিয়া জোট তৈরি হয়েছে, সেখানে এই দুই রাজনৈতিক দল সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। এমনকী এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়া জোটের নামকরণ করেছেন বলেও বহুবার বলতে শোনা গিয়েছে। যদিও পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের শরিক বাম এবং কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল ঐক্যবদ্ধ হয়নি।
যদিও সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ভোট ফলাফলের নিরিখে দেখা যাচ্ছে, এ রাজ্যে বিজেপিকে পর্যদুস্তু করতে পেরেছে শাসকদল তৃণমূল। এর ফলে ইন্ডিয়া জোটে তৃণমূল কংগ্রেসের আরও গুরুত্ব বেড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ফলাফলের আগে ইন্ডিয়া জোটের এক বৈঠকের পর কেন সিপিএম প্রতিনিধি মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করেছেন সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরকম পরিস্থিতিতে ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের নিজেদের মধ্যে আলাদা আলাদা বৈঠক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের অভিমত, ইন্ডিয়া জোটে সিপিএমের এই যে খবরদারি করা একটা ভালোভাবে নিচ্ছে না বঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। লোকসভা ভোটে আসন সংখ্যা নিরিখে জাতীয় স্তরেও সিপিএম তথা বামেদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। ফলে আসন সংখ্যায় যারা অনেকটাই বেশি, তাদের বাদ দিয়ে সিপিএমের খবরদারি যাতে এড়ানো যায়, সেই চেষ্টাই হচ্ছে না তো? এমন প্রশ্নই তুলছেন অনেকে।
বিজেপি-বিরোধী যে ইন্ডিয়া জোট এই মুহূর্তে অবস্থান করছে তাদের অন্য কোনও শরিক আগামীতে এনডিএ-তে অংশগ্রহণ যাতে না-করে সেই দিকটাও গুরুত্বপূর্ণভাবে দেখা হচ্ছে। ইন্ডিয়া জোট সরকারের না-আসলেও আগামীতে তাদের যে পথচলা নতুন করে আন্দোলন গড়ে তুলতে রুট ম্যাপ তৈরির চেষ্টা চলছে। যদিও এই বৈঠকগুলি নিয়ে সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব এবং তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমের কাছে আলাদা ভাবে মুখ খলেননি। তাদের উভয়েরই যুক্তি, ইন্ডিয়া জোটের স্বার্থে তারা বৈঠক করছেন।