নয়াদিল্লি, 2 অক্টোবর: যে স্বপ্ন গান্ধিজি দেখেছিলেন, তা আমরা সবাই মিলে সফল করব ৷ 2 অক্টোবর আমি কর্তব্যেও যতটা অবিচল, ততটাই আবেগাপ্লুত ৷ স্বচ্ছ ভারত মিশনের 10 বছর পূর্তিতে সাফল্য়ের সাদামাটা তথ্যসমৃদ্ধ বক্তৃতা নয়, আবেগে ভাসলেন নরেন্দ্র মোদি ৷ প্রধানমন্ত্রী জানালেন, স্বচ্ছ ভারত মিশনের এই যাত্রা কয়েক কোটি ভারতবাসীর স্বপ্ন ৷ গত কয়েক বছরে কোটি কোটি ভারতীয় এর সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন ৷ একে জীবনের অঙ্গ করেছেন ৷
বুধবার স্বচ্ছ ভারত মিশনের 10 বছর পূর্তি হয়েছে ৷ 2014 সালে ক্ষমতায় আসার পরই দেশকে স্বচ্ছ রাখার জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছিল মোদি সরকার ৷ সেই উপলক্ষ্যেই এদিন নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে ‘স্বচ্ছতাই সেবা’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ৷ সেখানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন কেন্দ্রীয় গৃহ ও নগর বিষয়ক মন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর ৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আজ আমি দেশবাসী, আমাদের সাফাইবন্ধু, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, সাধারণ মানুষ প্রত্যেককে ধন্যবাদ দেব ৷ আপনারা সবাই মিলে এই অভিযানকে সাফল্য দিয়েছেন ৷’’
স্কুলে ড্রপ-আউট রেট কমেছে:
মোদি এদিন বলেন, ‘‘আমি যখন লালকেল্লা থেকে এই স্বচ্ছতার বিষয়ে বললাম, লোকে অনেক কিছু বলল ৷ বিরোধীরা বলেছিল, এই বিষয়ে কথা বলা দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাজ নয় ৷ প্রধানমন্ত্রীর কাজ কী জানেন ? সেই বিষয় নিয়ে বলা, যা দেশের মানুষের জীবন সহজ করে ৷ দেশের গরিবদের নিয়ে কাজ করতে হবে ৷ শৌচালয় না-থাকায় এতদিন আমাদের মা-বোনেদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছে ৷ শৌচালয়ে যাওয়ার জন্য অন্ধকারের অপেক্ষা করতে হত ৷ খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করায় অসুস্থতা বাড়ত ৷ এর ফলে প্রচুর লোকের মৃত্যু হয়েছে ৷
কোনও দেশ এই পরিস্থিতিতে কীভাবে এগিয়ে যাবে ? ফলে আমরা বুঝেছিলাম, যা হচ্ছে সেভাবে চলা যাবে না ৷ ইউনিসেফের রিপোর্ট বলছে, ঘরে শৌচালয় হওয়ায় 90 শতাংশের বেশি মহিলারা এখন সুরক্ষিত ৷ শুধু এই নয়, লক্ষ লক্ষ স্কুলে ছাত্রীদের জন্য শৌচালয় হওয়ায় ড্রপ-আউট রেট কমেছে ৷ গ্রামের লক্ষ লক্ষ পরিবারের অসুস্থতা-সহ বিভিন্ন খাতে টাকা বাঁচছে ৷
দিশা দেখাচ্ছে গোবর্ধন প্ল্যান্ট-নমামী গঙ্গে প্রকল্প:
মোদি বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিদের ধন্যবাদ ৷ তাঁরা প্রত্যেকে এই মিশনের সাফল্যে অন্যতম ভূমিকা নিয়েছেন ৷ আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকেরা নিজের গ্রাম, শহর, এলাকাকে আগ্রহের সঙ্গে পরিস্কার রাখছেন ৷ বহু রাজ্যের জনপ্রতিনিধিরা এর সঙ্গে জুড়েছেন ৷ দেশজুড়ে কোটি কোটি লোক স্বচ্ছতায় অংশ নিয়েছেন ৷ গত কয়েকদিনে দেশে 27 কোটির বেশি স্বচ্ছতা কার্যক্রম হয়েছে, তাতে 28 কোটি লোক অংশ নিয়েছেন ৷ আমি প্রত্যেক ভারতীয়কে ধন্যবাদ জানাতে চাই ৷ আজ 10 হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের সূচনা হয়েছে ৷ মিশন অমৃতের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন শহরে সিউয়েজের কাজ হবে ৷ গোবর্ধন প্ল্যান্ট, নমামী গঙ্গে স্বচ্ছ ভারতকে নয়া উচ্চতায় নিয়ে যাবে ৷ এই স্বচ্ছ ভারত মিশন যত সফল হবে, দেশ ততই উজ্জ্বল হবে ৷’’
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, আজ থেকে হাজার বছর পরেও স্বচ্ছ ভারত মিশন নিয়ে কথা হবে ৷ এই শতাব্দীতে এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে সফল জন আন্দোলন ৷ এই মিশন তাঁকে জনতার ঈশ্বর রূপের দর্শন করিয়েছে ৷ মোদি বলেন, ‘‘আজ অনেক কিছু মনে পড়ছে ৷ শুরুতে কীভাবে লক্ষ লক্ষ লোক একসঙ্গে সাফাই করতে বেরিয়ে পড়তেন ৷ কোথায় কোনও বৃদ্ধা নিজের সামান্য জিনিস বিক্রি করে, কেউ মঙ্গলসূত্র বিক্রি করে, কেউ শৌচালয় বানানোর জন্য জমি দিয়েছেন, কোনও শিক্ষক অবসরকালীন টাকা দিয়েছেন ৷ তাঁদের এই দান অনস্বীকার্য ৷ দেশ জানুক, যাদের নাম কখনও সামনে আসেনি, এরকম লক্ষ লক্ষ লোকের অবদান এই আন্দোলনকে এক নয়া দিশা দিয়েছে ৷’’
মোদি বলেন, ‘‘যখন আমি একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ছাড়ার কথা বলেছিলাম, বহু লোক জুটের ব্যাগ নিয়ে বাজার যাওয়া শুরু করেছিলেন ৷ তাঁদের এই উদ্যোগ আমাদের কাজ আরও সহজ করে দিয়েছেন ৷ আমার এই আবেদন প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রির লোক অনশন করতে পারতেন, বিক্ষোভে নামতে পারতেন ৷ তাঁরা মনে করতেই পারতেন, আমি তাঁদের পেটে লাথি মারছেন ৷ তাঁরা তা করেননি, তাঁরা আমার উদ্দেশ্য বুঝেছিলেন ৷ রাজনৈতিক দলগুলি আন্দোলন করতে পারত, লোককে ভুল বোঝাতে পারত ৷ তাদের এদিকে নজর পড়েনি ৷ তাদেরও ধন্যবাদ ৷’’
সিনেমা জগতকেও এদিন ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ৷ মোদির কথায়, ব্যবসার তোয়াক্কা না-করে তারা বিভিন্ন সিনেমা বানিয়েছে, সমাজকে সচেতন করেছে ৷ ‘মন কী বাতে’ আমি প্রায় 800 বার স্বচ্ছতার বিষয়ে বলেছি ৷ লক্ষ লক্ষ লোক চিঠি পাঠিয়েছেন, স্বচ্ছতা নিয়ে জানতে চেয়েছেন ৷ এখন আমি যখন তাদের দেখছি, এটাই মনে হচ্ছে, এটা আগে হয়নি কেন ? এই রাস্তা তো গান্ধিজি আমাদের স্বাধীনতার সময় দেখিয়েছিলেন ৷ তাহলে স্বাধীনতার পর এতদিন তা নিয়ে কোনও কাজ হল না কেন ? যারা এতদিন গান্ধিজিকে নিয়ে এত কথা বললেন, তাঁরা স্বচ্ছতার দিকে নজরই দিলেন না ৷ তারা সমাজকে নোংরার দিকে, অস্বচ্ছতার দিকে ঠেলে দিলেন ৷