ETV Bharat / bharat

সংবিধানের মুখবন্ধ থেকে বাদ যাচ্ছে না 'ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক' শব্দ দুটি, ঐতিহাসিক রায় সর্বোচ্চ আদালতের

বিচারপতিদের মতে, ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি সংবিধানের মূল ভাবনাকে ব্যাখ্যা করে। আর তাই ভারতীয় সংবিধানের মুখবন্ধ থেকে শব্দ দুটি বাদ দেওয়ার কোনও সঙ্গত কারণ নেই।

supreme-court-
সুপ্রিম কোর্ট (ইটিভি ভারত)
author img

By Sumit Saxena

Published : 3 hours ago

নয়াদিল্লি, 25 অক্টোবর: ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় সাম্য থেকে শুরু করে ন্যায় বিচারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি ধর্মনিরপেক্ষতা। সংবিধানে দেশকে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে তার সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতার নিবিড় যোগাযোগ। এমনই পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের। সংবিধানের মুখবন্ধ থেকে 'সমাজতান্ত্রিক' এবং 'ধর্মনিরপেক্ষ' শব্দ দুটি বাদ দেওয়ার আবেদন করে মামলা হয়েছিল সর্বোচ্চ আদালতে ।

আবেদন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার এই রায় দেওয়ার সময় দুটি পুরনো মামলার উল্লেখ করেন। প্রথমে 1973 সালে এবং পরে 1994 সালে হওয়া দুটি মামলায় আদালত জানিয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতের সংবিধানের ভরবিন্দু ।

বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ

আদালত মনে করে একটি রাষ্ট্র যদি ধর্মনিরপেক্ষ হয় তাহলে কোনও একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া নিয়ম-নীতি মানতে তার সমস্যা হবে না । তাছাড়া ধর্মনিরপেক্ষতার মতো বিষয় আসলে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা নেয়। সবার জন্য সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা ভারতীয় সংবিধানের অন্যতম মূল ভাবনা। সেদিক থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই বাদ দেওয়ার কারণ থাকেত পারে না।

2020 সালে এই আবেদন জমা পড়েছিল সর্বোচ্চ আদালতে । কিন্তু শব্দ দুটি সংবিধানের অংশ হয়েছে 44 বছর আগে 1976 সালে ( বর্তমান হিসেবে 48 বছর) । বিচারপতিরা মনে করেন এই সময়ের মধ্যে দেশের মানুষ এই দুটি শব্দ এবং তার সঙ্গে মিশে থাকা ভাবাবেগকে গ্রহণ করেছেন। এতদিন বাদে এই শব্দ দুটি বাদ দেওয়া নিয়ে চর্চা করারও প্রয়োজন নেই। তাছাড়া এতদিন বাদে মামলা কেন দায়ের হল সেটাও বিচারপতিদের কাছে একটা প্রশ্ন ।

আবেদনে কী বলা হয়েছিল?

আদালতে আবেদনকারীদের দাবি ছিল, ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি সংবিধান সভা ইচ্ছা করেই এড়িয়ে গিয়েছিল। আর সমাজতান্ত্রিক শব্দটি থাকায় সরকার বর্তমান সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় এমন বিভিন্ন আর্থিক সংস্কার করতে পারছে না। আর্থিক নীতি প্রণয়নে সমস্যা হচ্ছে। তাতে অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে । কিন্তু দেশের মানুষ আর্থিক সংস্কারের পক্ষে। তারা চান দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হোক ভারতের অর্থনীতি। সমাজতান্ত্রিক শব্দটি সেদিক থেকে সমস্যা তৈরি করছে।

সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন

আরও বলা হয়, এই দুটি সংশোধনী 1976 সালের 2 নভেম্বর সংসদে পাস করানো হয়েছিল। সে সময় জরুরি অবস্থা চলছিল। তার কয়েক মাস আগে 1976 সালের 18 মার্চ লোকসভার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। আর তাই আবেদনকারীরা মনে করেন, এই সংশোধনীতে দেশের সাধারণ মানুষের সায় ছিল না। সেই যুক্তিতেই এই দুটি শব্দ অবশ্যই বাদ দিয়ে দেওয়া উচিত ।

কিন্তু এই সমস্ত যুক্তি মানতে চাননি বিচারপতিরা । তাঁরা জানান সংশোধনের 44 বছর বাদে (বর্তমান হিসেবে 48 বছর) এই দুটি শব্দ বাদ দিতে হবে এমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। পাশাপাশি 1976 সালে পাস হওয়া সংবিধান আইনের ওই সংশোধনকে অসাংবিধানিক বলেও মনে করেননি দুই বিচারপতিরা । তাঁরা জানান,সংবিধানের 368নম্বর ধারা অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন করা যায় । এখানেও সেটাই হয়েছিল ।

নয়াদিল্লি, 25 অক্টোবর: ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় সাম্য থেকে শুরু করে ন্যায় বিচারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি ধর্মনিরপেক্ষতা। সংবিধানে দেশকে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে তার সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতার নিবিড় যোগাযোগ। এমনই পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের। সংবিধানের মুখবন্ধ থেকে 'সমাজতান্ত্রিক' এবং 'ধর্মনিরপেক্ষ' শব্দ দুটি বাদ দেওয়ার আবেদন করে মামলা হয়েছিল সর্বোচ্চ আদালতে ।

আবেদন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার এই রায় দেওয়ার সময় দুটি পুরনো মামলার উল্লেখ করেন। প্রথমে 1973 সালে এবং পরে 1994 সালে হওয়া দুটি মামলায় আদালত জানিয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতের সংবিধানের ভরবিন্দু ।

বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ

আদালত মনে করে একটি রাষ্ট্র যদি ধর্মনিরপেক্ষ হয় তাহলে কোনও একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া নিয়ম-নীতি মানতে তার সমস্যা হবে না । তাছাড়া ধর্মনিরপেক্ষতার মতো বিষয় আসলে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা নেয়। সবার জন্য সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা ভারতীয় সংবিধানের অন্যতম মূল ভাবনা। সেদিক থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই বাদ দেওয়ার কারণ থাকেত পারে না।

2020 সালে এই আবেদন জমা পড়েছিল সর্বোচ্চ আদালতে । কিন্তু শব্দ দুটি সংবিধানের অংশ হয়েছে 44 বছর আগে 1976 সালে ( বর্তমান হিসেবে 48 বছর) । বিচারপতিরা মনে করেন এই সময়ের মধ্যে দেশের মানুষ এই দুটি শব্দ এবং তার সঙ্গে মিশে থাকা ভাবাবেগকে গ্রহণ করেছেন। এতদিন বাদে এই শব্দ দুটি বাদ দেওয়া নিয়ে চর্চা করারও প্রয়োজন নেই। তাছাড়া এতদিন বাদে মামলা কেন দায়ের হল সেটাও বিচারপতিদের কাছে একটা প্রশ্ন ।

আবেদনে কী বলা হয়েছিল?

আদালতে আবেদনকারীদের দাবি ছিল, ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি সংবিধান সভা ইচ্ছা করেই এড়িয়ে গিয়েছিল। আর সমাজতান্ত্রিক শব্দটি থাকায় সরকার বর্তমান সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় এমন বিভিন্ন আর্থিক সংস্কার করতে পারছে না। আর্থিক নীতি প্রণয়নে সমস্যা হচ্ছে। তাতে অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে । কিন্তু দেশের মানুষ আর্থিক সংস্কারের পক্ষে। তারা চান দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হোক ভারতের অর্থনীতি। সমাজতান্ত্রিক শব্দটি সেদিক থেকে সমস্যা তৈরি করছে।

সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন

আরও বলা হয়, এই দুটি সংশোধনী 1976 সালের 2 নভেম্বর সংসদে পাস করানো হয়েছিল। সে সময় জরুরি অবস্থা চলছিল। তার কয়েক মাস আগে 1976 সালের 18 মার্চ লোকসভার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। আর তাই আবেদনকারীরা মনে করেন, এই সংশোধনীতে দেশের সাধারণ মানুষের সায় ছিল না। সেই যুক্তিতেই এই দুটি শব্দ অবশ্যই বাদ দিয়ে দেওয়া উচিত ।

কিন্তু এই সমস্ত যুক্তি মানতে চাননি বিচারপতিরা । তাঁরা জানান সংশোধনের 44 বছর বাদে (বর্তমান হিসেবে 48 বছর) এই দুটি শব্দ বাদ দিতে হবে এমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। পাশাপাশি 1976 সালে পাস হওয়া সংবিধান আইনের ওই সংশোধনকে অসাংবিধানিক বলেও মনে করেননি দুই বিচারপতিরা । তাঁরা জানান,সংবিধানের 368নম্বর ধারা অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন করা যায় । এখানেও সেটাই হয়েছিল ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.