নয়াদিল্লি, 20 এপ্রিল: যৌন নির্যাতনের ফলে অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকার গর্ভপাত সম্ভব ? শুধু তাই নয়, ওই নাবালিকার গর্ভধারণের সময় 28 সপ্তাহ অর্থাৎ প্রসবের সময় দূরে নেই ৷ এমন পরিস্থিতিতে 14 বছর বয়সি নাবালিকার গর্ভপাত করা উচিত কি না, সেই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট ৷ আবার এর সঙ্গে ওই নাবালিকার শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা জরুরি ৷
ধর্ষিতা নাবালিকার পরিবার মেয়েটির গর্ভপাত করতে চেয়ে বম্বে হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিল ৷ তবে তা খারিজ হয়ে যায় ৷ তখন নাবালিকার মা শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন ৷ শুক্রবার সেই মামলার শুনানিতে দেশের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত দুই সদস্যের বেঞ্চ ওই নাবালিকার শারীরিক পরীক্ষার নির্দেশ দেয় ৷ প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পার্দিওয়ালা নির্দেশে জানান, শনিবারই সিওন হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট চিকিৎসকদের একটি বিশেষ বোর্ড তৈরি করে এদিনই ওই নাবালিকার শারীরিক পরীক্ষা করবে ৷
এছাড়া মহারাষ্ট্র সরকারকে দেওয়া নির্দেশে বেঞ্চ জানায়, শারীরিক পরীক্ষার জন্য 28 সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকাকে নিয়ে তার মা হাসপাতালে যাবেন ৷ তখন তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করবে মহারাষ্ট্র সরকার ৷ দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, "নাবালিকার শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে ৷ নাবালিকা 28 সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ৷ এই পরিস্থিতিতে তার গর্ভপাত করলে তাতে ওই নাবালিকার জীবনের কোনও ঝুঁকি থাকবে না তো ? এ বিষয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের মত কী, তা আদালতকে জানাতে হবে ৷" সোমবার সকালে প্রথমে এই মামলাটি তালিকাভুক্ত করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি ৷
এদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল (এএসজি) ঐশ্বর্যা ভাট্টি এই মামলাটিকে আদালতে 'খুব কঠিন মামলা' বলে উল্লেখ করেন ৷ তিনি জানান, ওই নাবালিকার মায়ের বয়সও খুব বেশি নয়, 34 বছর ৷ এর আগে চিকিৎসকরা ওই নাবালিকাকে পরীক্ষা করে জানিয়েছে, গর্ভবতী অবস্থায় তার শরীরে কোনও অস্বাভাবিক লক্ষণ পাওয়া যায়নি ৷ তাছাড়া নাবালিকা 28 সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা, অর্থাৎ প্রসবের সময় কাছাকাছি চলে এসেছে ৷ এই অবস্থায় জোর করে গর্ভপাত করানো যাবে না ৷ এএসজি বলেন, "আমার মনে হয়, নাবালিকা এ নিয়ে কী ভাবছে, তা জানা দরকার ৷"
তবে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে ভাট্টি এদিন নাবালিকার শারীরিক পরীক্ষার পক্ষেও সওয়াল করেন ৷ সন্তানসম্ভবা অবস্থায় মেয়েটির শারীরিক ও মানসিক দিয়ে কেমন আছে ? নাকি গর্ভপাত করলে সে ভালো থাকবে ? এই বিষয়টি যথাযথভাবে খতিয়ে দেখা দরকার বলে জোর দেন তিনি ৷
গত 4 এপ্রিল বম্বে হাইকোর্ট এই মামলার রায়ে মেয়েটির গর্ভপাতের আবেদন খারিজ করে দেয় ৷ নাবালিকার মা অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছিল ৷ সেই কারণে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে ৷ এ নিয়ে এফআইআর করা হয়েছে ৷ পকসো আইনে মামলাও চলছে ৷
এদিন শীর্ষ আদালত উল্লেখ করে যে, বম্বে হাইকোর্ট হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ডের মতামত মেনে গর্ভপাতের আবেদন নাকচ করেছিল ৷ মেয়েটির শারীরিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত দু'টি মেডিক্যাল রিপোর্ট রয়েছে ৷ তবে আবেদনকারী নাবালিকার মায়ের অভিযোগ, দ্বিতীয় রিপোর্টটি নির্যাতিতা নাবালিকাকে পরীক্ষা না-করেই তৈরি করা হয়েছে ৷ তাই সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, প্রাথমিকভাবে ওই মেডিক্যাল রিপোর্টে নাবালিকার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা খতিয়ে দেখা হয়নি ৷ বিশেষত যেখানে ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে ৷ তার ফলশ্রুতি এই পরিস্থিতি ৷
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এটা জানা জরুরি যে, নাবালিকার গর্ভপাত না-করলে তা তার শারীরিক ও মানসিক ভালো থাকাকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে ৷ তাতেই কি সে ভালো থাকবে ? প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ বলে, "হাসপাতালের তৈরি মেডিক্যাল বোর্ড আবেদনকারীর মেয়েকে পরীক্ষা করে দেখুক ৷"
আরও পড়ুন: