অমৃতসর, 4 ডিসেম্বর: স্বর্ণমন্দিরের বাইরে বসেছিলেন পঞ্জাবের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা শিরোমনি অকালি দলের নেতা সুখবির সিং বাদল ৷ বুধবার সকালে হঠাৎ এক ব্যক্তি মন্দিরের বাইরে পকেট থেকে পিস্তল বের করে তাঁকে নিশানা করেন ৷ কিন্তু গুলি চালানোর আগেই ওই ব্যক্তিকে দেখতে পান সুখবিন্দর সিংয়ের কাছে থাকা এক ব্যক্তি ৷ তিনি অভিযুক্তকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন ৷ তাঁর নাম নারায়ণ সিং চৌড়া ৷ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নায়ারণ সিংয়ের খালিস্তানি যোগের কথা ৷
এই ঘটনার সময় এসএডি নেতা সুখবির সিং বাদল স্বর্ণমন্দিরের বাইরে 'সেবা' করছিলেন ৷ তিনি জেড+ ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন ৷ সাদা পোশাকের পুলিশ তৎক্ষণাৎ চৌড়াকে বন্দুক সমেত ধরে ফেলেন ৷ পুরো ঘটনাটিই বিভিন্ন মিডিয়ার ক্যামেরায় রেকর্ড হয়েছে ৷ কারণ 2007 সাল থেকে 2017 সাল পর্যন্ত পঞ্জাবে এসএডি সরকার থাকাকালীন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুখবির সিং বাদল যে ভুলগুলি করেছেন, এখন তার প্রায়শ্চিত্ত করছেন ৷ এদিন সেই প্রায়শ্চিত্তের দ্বিতীয় দিন ছিল ৷
কে এই বন্দুকবাজ ?
নারায়ণ সিং চৌড়া ডেরা গুরদাসপুরের বাবা নানক এলাকায় থাকেন ৷ অমৃতসরের পুলিশ কমিশনার গুরপ্রীত সিং ভুল্লার জানান, পুলিশ সজাগ ছিল ৷ তাই এই হামলা ব্যর্থ হয়েছে ৷ বেঁচে গিয়েছেন সুখবিন্দর সিং বাদল ৷ পুলিশ কমিশনার বলেন, "নারায়ণ সিং চৌড়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে ৷ খুনের চেষ্টায় ব্যবহৃত বন্দুকটিও পুলিশ উদ্ধার করেছে ৷"
অভিযুক্ত চৌড়ার স্ত্রী জসমীত কৌর সংবাদসংস্থা এএনআই-কে বলেন, "তিনি আজ যাওয়ার সময় বলেছিলেন যে অমৃতসরে একটি মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যাবেন ৷ আমি কিছুই জানি না ৷ রিপোর্টাররা দরজায় ডাকতে আসেন, তখন সব শুনলাম ৷ এর আগেও তিনি অমৃতসর, লুধিয়ানা এবং গুরদাসপুরে জেলে ছিলেন ৷ তিনি যা করেছেন, তা ঠিক হয়নি ৷"
1956 সালের 4 এপ্রিল গুরদাসপুরের ডেরা বাবা নানক-এর চৌড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করে নারায়ণ সিং ৷ এর আগে সে গরমখেয়ালি লিবারেশন ফোর্স এবং অকাল ফেডারেশন-এর সঙ্গে যুক্ত ছিল ৷ ডেরা বাবা নানক মার্কেট কমিটির চেয়ারম্যান নরেন্দ্র সিং চৌধরীর ভাই এই অভিযুক্ত চৌড়া ৷
2004 সালে চণ্ডীগড়ের বুরালি জেল ভেঙে চার জন খালিস্তানি জঙ্গি পালিয়ে যায় ৷ সেই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে নারায়ণ সিংয়ের বিরুদ্ধে ৷ ওই ঘটনায় সে জঙ্গিদের পালাতে সাহায্য করেছিল ৷ খালিস্তানি জঙ্গিরা 94 ফুট গভীর টানেল খুঁড়ে রাস্তা তৈরি করে জেল থেকে বেরিয়েছিল ৷ ইউএপিএ ধারার মামলা দায়ের হলেও আদালত ওই মামলায় চৌড়াকে জামিন দেয় ৷
এছাড়া চৌড়া 5 বছর অমৃতসর জেলে কাটিয়েছে ৷ খালিস্তান লিবারেশন ফোর্স এবং অকাল ফেডারেশন-এর সঙ্গে যুক্ত ছিল সে ৷ 2013 সালের 28 ফেব্রুয়ারি তাকে তরণ তারণ গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয় ৷ একই দিনে তার সঙ্গী সুখদেব সিং এবং গুরিন্দর সিংকেও গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ মোহালি জেলার কুরালি গ্রাম থেকে অনেক অস্ত্র, বিস্ফোরক উদ্ধার করে ৷
2010 সালে অমৃতসরের সিভিল লাইন পুলিশ স্টেশনে নারায়ণ সিংয়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে একাধিক মামলা দায়ের করা হয় ৷ পুলিশ জানিয়েছে, 1984 সালে চৌড়া পাকিস্তানে গিয়েছিল ৷ পঞ্জাবে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র, বিস্ফোরক আমদানিতে তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল ৷ জানা গিয়েছে, পাকিস্তানে নারায়ণ সিং গেরিলা যুদ্ধের উপর একটি বই লিখেছে ৷