নয়াদিল্লি, 26 জুন: স্পিকার হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পরই জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে এনে লোকসভায় সরব হলেন ওম বিড়লা ৷ বুধবার স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাঠ করেন তিনি ৷ স্পিকারের এই আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে কংগ্রেস ৷
এদিন ওম বিড়লা উল্লেখ করেন, 1975 সালের 26 জুন জরুরি অবস্থার নিষ্ঠুর বাস্তবতায় জেগে উঠেছিল দেশ ৷ সেই সময় কংগ্রেস, বিরোধী নেতাদের জেলে বন্দি করেছিল ৷ সংবাদমাধ্যমের উপর অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল ৷ বিচার বিভাগের স্বায়ত্তশাসনকেও রোধ করা হয়েছিল । ওম বিড়লার কথায়, "আমরা জরুরি অবস্থার 50তম বছরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে এই 18তম লোকসভা বাবাসাহেব আম্বেদকর দ্বারা নির্মিত সংবিধানকে সমুন্নত রাখা এবং সংরক্ষণ করার প্রতিশ্রুতি পুনরায় তুলে ধরছি ৷"
জরুরি অবস্থার কথা উঠে আসার সঙ্গে সঙ্গেই কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা উঠে দাঁড়িয়ে এই বিষয় উত্থাপনের তীব্র প্রতিবাদ জানান ৷ তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লোকসভায় জরুরি অবস্থার বিষয়ে স্পিকারের উল্লেখকে স্বাগত জানিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, "এই বিষয়ের উল্লেখ যুবকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সংবিধান পদদলিত হলে কী ঘটে তার উপযুক্ত উদাহরণ সেই সময় ৷ এরকম হলে জনমতকে দমিয়ে রাখা হয় এবং প্রতিষ্ঠানগুলি ধ্বংস হয়ে যায় ৷ জরুরি অবস্থার সময় ঘটনাগুলি একটি স্বৈরাচারী শাসন কেমন হয় তার উদাহরণ দেয় ৷"
একদিকে যখন কংগ্রেস সদস্যরা লোকসভায় জরুরি অবস্থার উল্লেখের বিরুদ্ধে স্লোগান তোলেন, তখনই বিজেপি সাংসদরা 49 বছর আগে নাগরিক স্বাধীনতা স্তব্ধ করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সংসদ ভবনের বাইরে বিপুল সংখ্যায় জড়ো হন । এদিন বিড়লা তাঁর প্রস্তাব পাঠের সময় বলেন, "ভারত সর্বদা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রচার করেছে ? গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলি সর্বদা সুরক্ষিত হয়েছে, তাদের সর্বদা উৎসাহিত করা হয়েছে । এমন একটি ভারত ইন্দিরা গান্ধির দ্বারা স্বৈরাচারের শিকার হয়েছিল, ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলিকে চূর্ণ করা হয়েছিল ?? এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করা হয়েছিল ৷ এই হাউস 1975 সালে জরুরি অবস্থা জারি করার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করে । আমরা সেই সমস্ত লোকের সংকল্পের প্রশংসা করি, যাঁরা জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করেছিলেন, লড়াই করেছিলেন এবং ভারতের গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব পালন করেছিলেন ৷"
বিরোধী দলগুলির তীব্র শোরগোলের মধ্যেই স্পিকার বলেন, "1975 সালের 25 জুন সর্বদা ভারতের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসাবে পরিচিত হবে । এই দিনে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন এবং বাবাসাহেব আম্বেদকরের তৈরি সংবিধানকে আক্রমণ করেছিলেন । সেই সময়ে বিরোধী নেতাদের কারাগারে বন্দি করা হয়েছিল, পুরো জাতিকে একটি কারাগারে পরিণত করা হয়েছিল । তখনকার স্বৈরাচারী সরকার মিডিয়ার উপর বেশ কয়েকটি বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল এবং বিচার বিভাগের স্বায়ত্তশাসনের উপর সীমাবদ্ধতা ছিল ৷"
তিনি বলেন, ইন্দিরা গান্ধি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমলাতন্ত্র এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিচারব্যবস্থার কথাও বলেছিলেন, যা তার গণতন্ত্রবিরোধী মনোভাবের উদাহরণ । জরুরি অবস্থা তার সঙ্গে ভয়ানক অসামাজিক ও স্বৈরাচারী নীতি নিয়ে এসেছিল যা দরিদ্র, দলিত এবং বঞ্চিতদের জীবনকে ধ্বংস করেছিল বলে জানান ওম বিড়লা ৷