অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা, 1 সেপ্টেম্বর: প্রবল বৃষ্টিতে নাজেহাল দক্ষিণের দুই রাজ্য । অবিরাম বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা ৷ এর মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়া এবং গুন্টুর শহরে প্রবল বৃষ্টি বিপর্যস্ত জনজীবন ৷ এখনও পর্যন্ত 19 জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে ৷ ভারী বর্ষণের জেরে নদী ও বিভিন্ন বাঁধ উপচে পড়েছে । বিজয়ওয়াড়া শহরে দুই দশক ধরে এমন রেকর্ড বৃষ্টি হয়নি ৷ শুক্রবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে অনেক এলাকা ও সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ৷ ভূমিধসে মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের । আহতের সংখ্যা 4 ৷ বন্যার জেরে জাতীয় সড়কে আটকে পড়েছে যানবাহন ।
বিজয়ওয়াড়ার ইয়ানামালাকুদারুতে ভূমিধসে 20টি ছাগল ও ভেড়া মারা গিয়েছে । তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র ভবনে পাথর পড়ে অফিস ভেঙে পড়ে ৷ সৌভাগ্যক্রমে, সেই সময় কর্মীরা অফিসের বাইরে মধ্যাহ্নভোজ করতে গিয়েছেন বলে প্রাণহানি এড়ানো গিয়েছে ৷ বিজয়ওয়াড়ার বেশ কয়েকটি জায়গায় ভূমিধসের জেরে ঘরবাড়ি পড়ে গিয়েছে ৷ তবে দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার কারণে কেউ হতাহত হয়নি । যাঁরা পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান করছেন তাঁদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে । এদিকে শহরের বিভিন্ন জায়গার বাসস্ট্যান্ডগুলি জলমগ্ন হয়ে পড়ায় বাস চলাচলও বন্ধ হয়ে যায় ৷ যার জেরে স্বাভাবিকভাবেই সমস্যায় পড়েন নিত্যযাত্রীরা ৷
তেলেঙ্গানায় ভারী বর্ষণ : এদিকে ভারী বৃষ্টির কারণে বিপর্যস্ত তেলেঙ্গানাও ৷ হায়দরাবাদ-সহ তেলেঙ্গানার অনেক জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত । প্রায় সব জেলাতেই মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে । যার জেরে এখনও পর্যন্ত 9 জনের মৃত্যু হয়েছে ৷ ওয়ারাঙ্গল জেলার কাজিপেটের কাছে রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত ৷ বন্ধ হয়ে গিয়েছে ট্রেন চলাচল ৷ রেল বিভাগ হায়দরাবাদ ও বিজয়ওয়াড়ার মধ্যে চলা অনেক ট্রেন বাতিল করেছে।
ভারী বৃষ্টির কারণে বিজয়ওয়াড়া-সেকেন্দ্রাবাদ এবং গুন্টুর-সেকেন্দ্রাবাদের মধ্যেও বহু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে ৷ বিজয়ওয়াড়া-গুন্টুর হয়ে হায়দরাবাদগামী অনেক ট্রেন ঘুরপথে চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দক্ষিণ-মধ্য রেলওয়ে ৷ আধিকারিকদের দাবি, অনেক ট্রেন অন্য এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে । রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে কয়েকটি ট্রেন বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে আংশিকভাবে বাতিল করা হয়েছে । যাত্রীদের সহায়তার জন্য রেলওয়ে স্টেশনগুলিতে হেল্পলাইন স্থাপন করা হয়েছে । সেখানে ফোন করে ট্রেনের সময়সূচি জানতে পারবেন যাত্রীরা ৷
হায়দরাবাদ-সহ তেলেঙ্গানার অনেক জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে । প্রায় সব জেলাতেই মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে । আইএমডি তেলেঙ্গানার আদিলাবাদ, নির্মল, নিজামবাদ, কামারেডি, মাহাবুবনগর, নাগারকুরনুল, খাম্মাম ওয়ানাপার্টি, নারায়ণপেট, জোগুলাম্বা গাদওয়াল, মাহবুবাবাদ, জানগাঁও, সূর্যপেট জেলায় 2 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একটি নতুন লাল সতর্কতা জারি করেছে ।
ভারী বৃষ্টি এবং ট্র্যাকের উপর জল জমার কারণে 30টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে এবং 25টি ট্রেন ঘুরপথে চালানো হয়েছে । মুষলধারে বৃষ্টির কারণে যৌথ খাম্মাম জেলার অনেক এলাকা তলিয়ে গিয়েছে । ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু বাড়ি ৷ ওয়ারাঙ্গল জেলার নেককোন্ডা মণ্ডলের ভেঙ্কটাপুরম শহরতলিতে বন্যার জলে আটকে পড়ে একটি আরটিসি বাস । শনিবার রাতে ভেমুলাওয়াদা থেকে মাহাবুবাবাদ যাওয়ার সময় এই ঘটনা ঘটে। ফলে সারারাত বাসের মধ্যে আটকে পড়েন প্রায় 40 জন যাত্রী ৷ উদ্ধারের জন্য তাঁরা স্বজন ও কর্তৃপক্ষকে খবর দেন । বিষয়টি জানতে পেরে গ্রামে পৌঁছন জেলাশাসক । ট্রাক্টরের সাহায্যে যাত্রীদের উদ্ধার করে গ্রামের সরকারি স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয় ।
মুখ্যমন্ত্রী রেভান্থ রেড্ডি শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে একটি টেলিকনফারেন্স করেছেন এবং মুখ্য সচিব, ডিজিপি এবং রাজ্য পৌর প্রশাসন, শক্তি, পঞ্চায়েতি রাজ, HYDRAA এবং সেচ বিভাগের আধিকারিকদের আগামী 24 ঘণ্টা সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে । সোমবার সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি কালেক্টর, এসপি, রাজস্ব, সেচ এবং মিউনিসিপ্যাল কর্মকর্তাদের বন্যা কবলিত আবাসস্থল পরিদর্শন করার নির্দেশ দেন । রাজস্ব মন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন যে জরুরি অবস্থা না হলে লোকেরা যেন বাইরে না আসে । রাজ্যে ভারী বৃষ্টিপাত নিরীক্ষণের জন্য রাজ্য সচিবালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে ৷
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বান্দি সঞ্জয় এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তেলেঙ্গানায় ভারী বর্ষণ এবং খাম্মাম জেলার পরিস্থিতির খবর নিয়েছেন । জবাবে, অমিত শাহ মোট 9টি এনডিআরএফ টিম যার মধ্যে চেন্নাই, ভাইজ্যাগ এবং অসম থেকে 3টি করে এনডিআরএফ তেলেঙ্গানায় পাঠানোর নির্দেশ দেন ।