গুয়াহাটি, 1 জুন: দেশের একটা বিস্তীর্ণ অংশ যখন তাপপ্রবাহে জেরবার, তখনই ভয়াবহ বন্যার কবলে অসম ৷ বন্যার কারণে এখনও পর্যন্ত আটজনের মৃত্যু হয়েছে । প্রথম বর্ষায় ইতিমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যের 11টি জেলা । রাজ্যের নদী ও উপনদীগুলোর জলস্তর ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন জেলা ও নতুন এলাকা প্লাবিত করছে । বিশেষ করে বরাক ও মধ্য অসমে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ।
অসমের রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, রাজ্যের 11টি জেলা বর্তমানে বন্যার কবলে এবং বন্যায় 3 লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত । তথ্যমতে, কপিলি নদী, বরাক নদী, কাটাখাল ও কুশিয়ারা নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে । এ দিকে, অসমের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ধার অভিযানের জন্য এনডিআরএফ-এর অতিরিক্ত দল পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷
বন্যায় মৃত্যু: ভয়াবহ বন্যায় অসমে এ পর্যন্ত আটজনের মৃত্যু হয়েছে । সম্প্রতি ছয়জনের প্রাণ যায় এবং এর আগেই দু'জন মারা গিয়েছিলেন । করিমগঞ্জ জেলার বন্যায় শিশু-সহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে । হাইলাকান্দি জেলায় শিশু-সহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে । পশ্চিম কার্বি আংলং জেলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে । এর আগে হাইলাকান্দি জেলার একজন এবং শিলচর জেলার রাম কৃষ্ণ নগরের একজনের মৃত্যু হয়েছিল ৷
বন্যার কবলে 11 জেলা: এখনও পর্যন্ত রাজ্যের 11টি জেলা বন্যার কবলে । কার্বি আংলং, ধেমাজি, হোজাই, কাছাড়, করিমগঞ্জ, ডিব্রুগড়, নগাঁও, হাইলাকান্দি, গোলাঘাট, পশ্চিম কার্বি আংলং এবং ডিমা-হাসাও জেলাগুলি ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে । এই 11টি জেলার 25টি রাজস্ব সার্কেলের 560টি গ্রাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । এর মধ্যে কাছাড় জেলার 192টি এবং করিমগঞ্জ জেলার 157টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । এছাড়া নগাঁও জেলার 106টি গ্রাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।
আক্রান্ত 3 লাখেরও বেশি: রাজ্যের 11টি জেলার 3,49,045 জন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন । এর মধ্যে রয়েছে 1,44,246 জন পুরুষ, 1,26,638 জন মহিলা এবং 78,161 জন শিশু । অন্যদিকে, কাছাড় জেলায় সবচেয়ে বেশি 1,19,997 জন আক্রান্ত হয়েছেন । জেলায় বন্যায় 49,752 জন পুরুষ ও 25,301 জন মহিলা এবং 17, 944 জন শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।
পাশাপাশি, ডিব্রুগড় জেলার 3,857 জন, ডিমা হাসাও থেকে 304 জন, হাইলাকান্দি থেকে 10,165 জন, হোজাই থেকে 77,030 জন, পশ্চিম কার্বি আংলং জেলার 6,252 জন, করিমগঞ্জ জেলায় 52,684 জন এবং নগাঁও থেকে 78,756 জন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ।
শহুরে বন্যা: রাজ্যের তিনটি জেলা শহর বন্যারও কবলে পড়েছে । কামরূপ, কাছাড় ও জোড়হাট জেলা শহর বন্যার কবলে । কামরূপের উত্তর গুয়াহাটি, কাছাড়ের শিলচর এবং জোড়হাটের পূর্ব জোড়হাট বন্যার কবলে পড়েছে। নগর বন্যায় 9859 জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিলচর শহর।
ত্রাণ ও আশ্রয় শিবির: বন্যা কবলিত রাজ্যের ১১টি জেলায় ১৮৭টি আশ্রয় শিবির স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে কাছাড় জেলায় সর্বোচ্চ 83টি, করিমগঞ্জে 28টি, হাইলাকান্দি-23টি, হোজাই জেলায় 33টি, ডিমা-হাসাও-4, নগাঁও-15টি এবং পশ্চিম কার্বি আংলং জেলায় 1টি আশ্রয় শিবির রয়েছে। এই শিবিরে 28,317 জন আশ্রয় নিচ্ছেন । এর মধ্যে রয়েছে 47 জন গর্ভবতী এবং 10 জন বিশেষভাবে সক্ষম ।
এছাড়াও আশ্রয় শিবিরে 11,606 জন পুরুষ, 11,137 মহিলা এবং 5.,517 শিশু রয়েছে । কাছাড় জেলায় সবচেয়ে বেশি 15,626 জন আশ্রয় শিবিরে রয়েছেন । এ দিকে, ত্রাণসামগ্রী বিতরণের জন্য স্থাপিত ক্যাম্পে 40,314 জন রয়েছেন ।