হায়দরাবাদ, 11 জুন: সন্তানসম কর্মীদের জন্য অনুপ্রেরণার উইল করেছেন রামোজি রাও ৷ সন্তানের আগামী সুরক্ষিত করতে আজীবন পরিশ্রম করেন বাবা-মা। জীবনের সায়াহ্নে এসে তাঁদের কথা ভেবে তৈরি করেন উইল। সাধারণত উইলে লেখা হয় স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পদের বিবরণ । ব্যতিক্রম নন, সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তী রামোজি রাও। সন্তানসম কর্মীদের কথা ভেবে তিনিও উইল করেছেন । খোলা চিঠিতে লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন কর্মীদের নানাবিধ করণীয়।
কী বলা আছে খোলা চিঠিতে?
আমার জীবনের আকাশে মেঘ জমছে। আমি চাই প্রতিটি কর্মচারী দক্ষ এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সৈনিকের মতো কাজ করবেন। সৃজনশীলতাকে পাথেয় করে কর্মজীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠবেন। আমার অঙ্গীকার, চিরকালের জন্য যে প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছি তার ভিত্তি কর্মীরাই । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, 'আমার সন্ধ্যার গোধূলির নতুন রঙ বৃষ্টির জন্য বা ঝড়কে রাঙানোর জন্য নয় ।' বিশ্বকবির কথা এলে আমার মনে হয় - যুগ যুগ ধরে দশকের ব্যবধান ভুলে অবিরাম কর্মী হিসেবে ছুটে চলেছি। আমার বয়স হয়েছে। তবুও আমার মনে নতুন নতুন ভাবনা আসতে থাকে। সেই সব ভাবনা সোচ্চারে ঘোষণা করে, 'পরিবর্তন চিরন্তন... পরিবর্তনই সত্য'।
রামোজি পরিবারের প্রধান হিসেবে এবং কোনও অদেখা বিশ্বকে উন্মোচন ও উপলব্ধি করার ইচ্ছা নিয়েই আমি আপনাদের সকলকে এই চিঠিটি লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছি । একদিক থেকে এটা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা । রামোজি গ্রুপ অফ কোম্পানির কর্মচারী হিসেবে আপনাদের সকলেরই নিজস্ব কিছু লক্ষ্য আছে ৷ চাওয়া পাওয়া আছে ৷ এই সমস্ত মহান লক্ষ্য সংস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে ৷ আর তার জন্যই আপনাদের সকলেরই অভিনন্দন প্রাপ্য। রামোজি গ্রুপের সব কোম্পানিই আমার ভাবনার ফসল ৷ কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষ পছন্দ করেন বলেই সংস্থাগুলি শক্তিশালী হয়েছে । আমি অনেক কর্মচারীকে জানি যাঁরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের উন্নতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁরা পেশাগত মূল্যবোধের প্রতি নিবেদিত। তাঁরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সমাজে পরিচিতিও পেয়েছেন ৷
রামোজিতে চাকরি করা পদমর্যাদার বিচারে অবশ্যই সম্মানের বিষয়। আমি গর্বিত এখানে এমন বহু কর্মী আছেন যাঁরা সংস্থার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছেন। তাঁদের পরিশ্রমেই সংস্থা আজকের অবস্থায় এসে পৌঁছেছে ৷ আমরা কয়েক দশক ধরে প্রবল বিশ্বাসের সঙ্গে মেনে এসেছি, "কঠোর পরিশ্রম দিয়ে সব কিছুকে জয় করা যায়।" এটি একটি কার্যকরী ব্যবসায়িক নীতিও বটে । আমার সমস্ত সংস্থা সরাসরি জনস্বার্থের সঙ্গে যুক্ত। ব্যাপক মানব সম্পদের ব্যবহারের সঙ্গে মিলিত। পাশাপাশি, কাজের মানের সঙ্গে উচ্চ মূল্যবোধও জড়িত ৷ কয়েক দশক ধরে আমার পাশে দৃঢ়ভাবে থেকে কাজ করার জন্য এবং আমার উচ্চাকাঙ্ক্ষা অর্জনে সাহায্য করার জন্য সমস্ত কর্মীকে ধন্যবাদ !
জীবনের প্রতিটি স্তরে যে কোনও কাজ বা প্রজেক্ট শুরু করলে সেটিকে অনন্য পর্যায়ে নিয়ে যেতে চেয়েছি। দ্বিতীয় হয়ে থাকতে চাইনি কখনও ৷ সেই আকাঙ্খা নিয়ে, আমি আক্ষরিক অর্থেই দু'দিক থেকে জীবনের আলো জ্বালিয়েছি এবং তেলুগু জাতির পতাকাকে উঁচুতে ওড়াতে মার্গদর্শী থেকে ইটিভি ভারত পর্যন্ত সবকিছুকেই সেরা করে তুলেছি । আমার তৈরি ও সংস্থা এবং ব্যবস্থা চিরস্থায়ী হবে- এটাই আমার আকাঙ্খা । আমি রামোজি গ্রুপের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করার জন্য শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা তৈরি করেছি। তার উপর সরাসরি হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান নির্ভর করে। পরোক্ষভাবে আরও হাজার হাজার মানুষের জীবিকা নির্ভর করে । আমার পরেও, আমি চাই আপনারা কাজের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকুন । প্রতিষ্ঠানের সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্য সবসময় বজায় রাখতে এবং সুনাম আরও বৃাড়াতে নিরন্তর পরিশ্রম করুন। তথ্য, বিজ্ঞান, বিনোদন, উন্নয়ন - এই চারটি মূল ক্ষেত্র যা যে কোনও দেশের আগামীকে উজ্জ্বল করে তোলে । রামোজি গ্রুপের সমস্ত সংস্থাগুলিও সেই চারটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। জনগণের আস্থা অটুট রাখাই আমাদের লক্ষ্য ।
ভয়ডরহীন সাংবাদিকতাই ইনাডুর জয়যাত্রার মূলমন্ত্র। তাছাড়া আমাদের বিভিন্ন প্রকাশনার খ্যাতি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা কোটি কোটি বিনিয়োগকারীর কাছে 'মাগদর্শী' আক্ষরিক অর্থেই সোনা । আমাদের শক্তি হল 'ইটিভি' এবং 'ইটিভি ভারত' নেটওয়ার্ক যা সারা দেশে পৌঁছে গিয়েছে । প্রিয়ার তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী বহু মানুষের প্রথম পছন্দ। আর রামোজি ফিল্ম সিটির জনপ্রিয়তা দেশের সীমানা ছাড়িয়েছে সেই কবে । আপনার চাকরি সরাসরি প্রতিষ্ঠানের ভালোমন্দর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছে। চাকরির পাশাপাশি আপনাদের জীবনকে আরও উন্নত করে গড়ে তুলুন । সৃজনশীল শক্তি দিয়ে কর্ম জগতের সমস্ত চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠুন। রামোজি গ্রুপের যাত্রা অপ্রতিরোধ্য হোক। প্রতিটি কর্মচারীর দক্ষ ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সৈনিক হিসেবে চলা উচিত ! রামোজি গ্রুপ অফ কোম্পানিজ হল একটি অটল বিশ্বাসের ঠিকানা। আমি দায়িত্ব নিয়ে একটি উইল লিখছি। আগামীর ভার আপনাদের দিচ্ছি ।