ডিগ (রাজস্থান), 15 অক্টোবর: ডিপথেরিয়ার প্রকোপে নাজেহাল রাজস্থান ৷ গত এক মাসে মরু রাজ্যের ডিগ জেলায় এই রোগে 7টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে ৷ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এবার এলাকায় পৌঁছলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর সদস্যরা ৷ সংক্রমণ রুখতে এলাকায় টিকাকরণের কাজও শুরু করছেন তাঁরা ৷ সেই সঙ্গে, সন্দেহজনক শিশুদের নমুনা পরীক্ষা করার জন্যও সংগ্রহ করা হয়েছে বলে খবর ৷
জানা গিয়েছে, গত এক মাস ধরে ডিপথেরিয়া প্রকোপে চিন্তায় পড়েছে রাজস্থানের স্বাস্থ্য দফতর ৷ এখনও পর্যন্ত যে 7 জন মারা গিয়েছে, তাদের সকলের বয়স 3 থেকে 7 বছরের মধ্যে ৷ ডিগ জেলার নগর, কামান ও পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা তারা ৷ ইতিমধ্যেই, জেলায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ৷
ডিগের সিএমওএইচ বিজয় সিঙ্ঘল জানান, 14 সেপ্টেম্বর সুমিত নামে 7 বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয় ডিপথেরিয়ায় ৷ তারপর থেকেই কামান ও তার আশেপাশের এলাকায় পরীক্ষা শুরু করা হয় ৷ 14 সেপ্টেম্বর থেকে 12 অক্টোবরের মধ্যে আরও 6 শিশুর মৃত্যু হয় এই রোগে, যা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় স্বাস্থ্য দফতরের ৷
স্বাস্থ্য আধিকারিকদের মতে, এখনও পর্যন্ত 24 জন শিশুর নমুনায় ডিপথেরিয়ার জীবাণু পাওয়া গিয়েছে ৷ ইতিমধ্যেই তাদের চিকিৎসা শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ সিএমওএইচ বলেন, "সরকার বিনামূল্যে এই রোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য টিকাকরণের ব্যবস্থা করে রেখেছে ৷ কিন্তু অনেকেই নিজেদের বাচ্চাদের সঠিক সময়ে সেই টিকা দেন না ৷ করিনেয়ব্যাকটেরিয়ামের (Corynebacterium) সংক্রমণে এই রোগ হয়ে থাকে ৷ ব্যাকটেরিয়া প্রথমে গলার ক্ষতি করে । তারপর শ্বাসযন্ত্রের উপর হামলা করে এই ব্যাকটেরিয়া ৷ তবে সঠিক সময়ে এর টিকাকরণ করা হলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম ৷" তিনি আরও জানান, এই রোগ প্রতিরোধের লক্ষ্যে প্রতি মাসে প্রতিটি গ্রামে ঘরে ঘরে গিয়ে টিকাকরণ দেওয়া হয় ৷
ডিপথেরিয়া কী ?
WHO-এর মতে, ডিপথেরিয়া হল 'Corynebacterium diphtheriae' ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট সংক্রামক রোগ । এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি সাধারণত সংক্রমণ হওয়ার 2-5 দিন পরে শুরু হয় ৷ গলা ব্যথা এবং জ্বর দিয়ে শুরু হয় এই রোগ ৷
ব্যাকটেরিয়াটি প্রথমে গলায় একটি টক্সিন তৈরি করে ৷ এর ফলে গলার পিছনে একটি ঘন ধূসর বা সাদা প্যাচ সৃষ্টি হয় । এটি শ্বাসনালীকে অবরুদ্ধ করে শ্বাস নিতে বা খাবার গিলতে বাধা দেয় ৷ গলা ফুলে যাওয়ার কারণে ঘাড়ও কিছুটা ফুলে যেতে পারে । এই ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে হৃদপিণ্ডের পেশীর প্রদাহ এবং ক্ষতি, স্নায়ুর প্রদাহ, কিডনির সমস্যা এবং রক্তের প্লেটলেট কম হওয়ার কারণে রক্তপাতের সমস্যা দেখা দেয় ৷
কীভাবে ছড়ায় এই রোগ ?
সাধারণত বাতাসের মাধ্যমেই ছড়ায় এই রোগ ৷ আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশি থেকেও এই রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে ৷ এমনকী, নোংড়া জামাকাপড় থেকেও ছড়াতে পারে এই রোগ ৷
ডিপথেরিয়ার মূল কিছু বৈশিষ্ট্য
ডিপথেরিয়া একটি ভ্যাকসিন-প্রতিরোধযোগ্য রোগ ৷ তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে একাধিক ডোজ এবং বুস্টার ডোজের প্রয়োজন রয়েছে ৷
যাঁদের টিকা দেওয়া হয়নি বা কম দেওয়া হয়েছে, তাঁদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি সবথেকে বেশি ।
টিকা না দেওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ও সঠিক চিকিৎসার অভাবে প্রায় 30 শতাংশ ক্ষেত্রে ডিপথেরিয়া মারাত্মক হতে পারে ৷ এই রোগে ছোট বাচ্চাদের মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি ।
2023 সালে বিশ্বব্যাপী আনুমানিক 84 শতাংশ শিশু শৈশবকালে প্রস্তাবিত 3 ডোজ ডিপথেরিয়ার টিকা পেয়েছে ৷