হায়দরাবাদ, 14 ফেব্রুয়ারি: 27 ফেব্রুয়ারি 15টি রাজ্যে রাজ্যসভার 56 জন সদস্য বাছাইয়ের জন্য দ্বিবার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৷ রাজ্যসভার সদস্যরা 5 বছরের জন্য নির্বাচিত হন ৷ ভারতের সংবিধানের 83 অনুচ্ছেদের ধারা (1) অনুসারে, রাজ্য কাউন্সিল (অর্থাৎ রাজ্যসভা) বিলুপ্ত হয় না ৷ তবে এর এক-তৃতীয়াংশ সদস্য প্রতি দ্বিতীয় বছরে অবসর নন ৷ এই পদ্ধতিতে যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে ।
গত কয়েক বছর ধরে, সদস্যদের 5 বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কখনও কখনও অবসর নিতে হয়। সময়ে সময়ে বিভিন্ন কারণে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি অথবা রাজ্য বিধানসভাগুলি ভেঙে দেওয়ার কারণে এমনটা ঘটে ৷ রাজ্যসভার দ্বিবার্ষিক নির্বাচনের সময় কিছু রাজ্য বিধানসভা এভাবে ভেঙে যাওয়ার অবস্থায় ছিল ৷ সেই কারণে সেই রাজ্যের থেকে রাজ্যসভার আসনগুলির নির্বাচন পরে হয়েছিল ৷
ভারতের সংবিধানের 80 নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির 238টির বেশি প্রতিনিধি এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত 12 জন সদস্যের সমন্বয়ে রাজ্যসভার বিধান রয়েছে ৷ 250 সদস্যের এই অনুমোদিত শক্তির বদলে, রাজ্যসভায় বর্তমানে 245 জন সদস্য রয়েছেন ৷ সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায়ে নির্বাচিত সদস্যের সংখ্যা 233-এ সীমাবদ্ধ করা হয়েছে ৷ বিভিন্ন রাজ্যের বরাদ্দকৃত রাজ্যসভার আসনের সংখ্যা এবং তাদের নিজ নিজ জনসংখ্যার উপর নির্ভর করে এই সংখ্যাটি তৈরি হয়েছে ৷
রাজ্যসভার নির্বাচনের পদ্ধতি
অনুচ্ছেদ 80-র ধারা (4) অনুসারে, রাজ্যসভার প্রতিটি রাজ্যের প্রতিনিধিরা "একক স্থানান্তরযোগ্য ভোটের মাধ্যমে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব" পদ্ধতি অনুযায়ী, রাজ্য বিধানসভার সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন ৷ সহজ ভাষায় 'আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব' মানে একটি রাজনৈতিক দল রাজ্যসভায় তার সদস্য সংখ্যার অনুপাতে এক বা একাধিক সদস্যকে নির্বাচিত করতে পারে ৷ আবার, রাজ্য বিধানসভার প্রতিটি সদস্যের ভোট 'একটি', কিন্তু এটি 'হস্তান্তরযোগ্য'। এভাবে, ব্যালট পেপারে সমস্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয় এবং নির্বাচকদের সেই মতো তাঁদের পছন্দের প্রার্থীদের ক্রম নির্দেশ করতে হয় ৷
ভোটদাতা বিধায়ককে অন্তত একজন প্রার্থীকে 1 নম্বর পছন্দ হিসেবে রাখতে হবে ৷ তার অন্যান্য পছন্দগুলি তখনই গণনার মধ্যে আসে, যখন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা সেই রাজ্যে বর্তমান শূন্য পদের চেয়ে বেশি হয় এবং গণনার প্রথম রাউন্ডে, এক বা একাধিক প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট না পান ৷
একজন প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম ভোটের সংখ্যা নির্ধারণের পদ্ধতি নিম্নরূপ:
একজন বিধায়ক সমান একটি ভোট ৷ অর্থাৎ, একজন প্রার্থীর একটি ভোট ৷ উদাহণ স্বরূপ, আসন্ন রাজ্যসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের দিকে নজর দেওয়া যাক ৷ প্রথমত, উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার আসন হল 403; সেখান থেকে রাজ্যসভার 10টি আসনে ভোট হবে ৷ সেখানে প্রত্যেক প্রার্থীর জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভোটের সংখ্যা 37 ৷ কারণ, সেখানে 403টি আসনের মধ্যে 4টি আসনে কোনও প্রতিনিধি এই মুহূর্তে নেই ৷ এর ভিত্তিতে সহজেই 7টি আসনে জয়ী হবে বিজেপি ৷
বিজেপির নিজের বিধায়ক সংখ্যা 252 ৷ আর এনডিএ সদস্য দলগুলির মধ্যে সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টির 6 বিধায়ক এবং নিষাদ পার্টির 6 জন বিধায়ক রয়েছেন ৷ সব মিলিয়ে 277 জন বিধায়ক রয়েছেন ৷ যেখানে এই সাতটি আসন পেতে বিজেপির প্রয়োজন 259 জন বিধায়কের ভোট ৷ অর্থাৎ, এনডিএ-র পক্ষে 8টি ভোট অতিরিক্ত রয়েছে ৷ সঙ্গে আরএলডি বিজেপির মনোনীত প্রার্থীদের সমর্থন করবে বলে জানিয়েছে ৷ ফলে তাদের 9 জন বিধায়কের ভোটও সেখানে যাচ্ছে ৷ অর্থাৎ, মোট 286টি ভোট রয়েছে এনডিএ শিবিরের পক্ষে ৷
অন্যদিকে, সমাজবাদী পার্টি রাজ্যসভার 2টি আসন নিশ্চিতভাবে পাচ্ছে ৷ অখিলেশ যাদবের দলের বিধায়ক সংখ্যা 108, আর সঙ্গে কংগ্রেসের 2 বিধায়কের সমর্থনে মোট ভোট দাঁড়াচ্ছে 110টি ৷ সমাজবাদী পার্টির পক্ষে রাজ্যসভার তিননম্বর আসনেও জেতা সম্ভব ৷ সেক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেবেন বিএসপি-র একজন এবং নির্দল 5 বিধায়ক ৷ উল্লেখ্য, সমাজবাদী পার্টির রাজ্যসভার তিনটি আসন জিততে 111 জন বিধায়কের সমর্থন প্রয়োজন ৷ সেক্ষেত্রে একটি ভোট এখান থেকে জোগাড় করতে হবে তাদের ৷ তবে, বিজেপিও 8টি আসন জিততে পারে ৷ সেক্ষেত্রে তাদের 10 বিধায়কের ভোট কম থাকছে ৷ কিন্তু, ভিতর থেকে ক্রস ভোটিং বা বিধায়কদের দলবদল করাতে পারলে বিজেপির রাজ্যসভায় এই নির্বাচনে 8টি সদস্যকে পাঠানো সম্ভব নয় ৷ সেক্ষেত্রে সমাজবাদী পার্টির কাছে তিনটি আসন জেতা অনেক বেশি করে সম্ভব ৷
আরও পড়ুন: