কোটা, 27 নভেম্বর: যে বয়সে বাচ্চারা যোগার নামও জানে না, সেই বয়সেই যোগায় বিশ্বরেকর্ড করেছে প্রত্যক্ষ বিজয় ৷ পাঁচ বছর বয়স থেকেই যোগ শিক্ষক হয়ে উঠেছে সে ৷ শিশু ও বয়স্ক মানুষকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে । এবার সেই খুদে শিক্ষক বিশ্ব রেকর্ড গড়ল ৷ 2024 সালের অক্টোবরে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ যোগ শিক্ষক হওয়ার রেকর্ড গড়েছে প্রত্যক্ষ । পুরো প্রক্রিয়া শেষে তাকে একটি সার্টিফিকেট দিয়েছে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ।
প্রত্যক্ষ পরিবারের সঙ্গে বোরখেড়ার সিটিতে থাকে ৷ মা দীক্ষা বিজয়ের থেকেই যোগ শেখার শুরু তার ৷ এরপরই প্রত্যক্ষ নিজে ক্লাস নিতে ও শেখাতে শুরু করে ৷ প্রত্যক্ষের বাবা গৌরব বিজয় জানান যে, তার ছেলে 4 বছর বয়সে যোগ শেখা শুরু করে ৷ 5 বছর বয়স থেকেই শিক্ষকতা শুরু করে ৷ তারপর 6 বছর বয়সে কনিষ্ঠ যোগ শিক্ষক হওয়ার এই রেকর্ড গড়ে ৷ বর্তমানে প্রত্যক্ষর বয়স 7 বছর । গত বছর রেকর্ডের জন্য আবেদন করেছিল । এর আগে এই রেকর্ডটি ছিল দুবাইয়ের এক মেয়ের নামে । মেয়েটির বয়স তখন ছিল সাড়ে সাত বছর ।
প্রত্যক্ষর যোগব্যায়াম শেখানো শুরু: প্রত্যক্ষর বাবা গৌরব বিজয় কোচিং ক্লাস চালান ৷ তিনি একজন কমার্স ফ্যাকাল্টি । মা দীক্ষা গৃহবধূ ৷ তিনি আয়ুষ মন্ত্রকের একজন প্রত্যয়িত যোগ শিক্ষক ৷ তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই যোগাভ্যাস শুরু প্রত্যক্ষর ৷
প্রত্যক্ষর মা দীক্ষা জানান, তিনি স্বাস্থ্যের জন্য যোগব্যায়াম এবং প্রাণায়াম করতেন । বাড়ির সবাইকে এমন করতে দেখে প্রত্যক্ষও যোগ প্রাণায়াম করতে শুরু করে । ওর আগ্রহ দেখে প্রফেশনাল কোর্সে ভর্তি করানো হয় ৷ এরপর ও অন্যদেরও শিক্ষা দিতে থাকে । প্রত্যক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের যোগ অ্যালায়েন্স সংস্থা থেকে যোগ প্রশিক্ষণ করেছে এবং শংসাপত্র নিয়েছে । সেখানে যোগাসন অনুশীলন করে এবং নতুন যোগাসন শেখে ।
অনলাইনে যোগ প্রশিক্ষণ দেয়: প্রত্যক্ষ বিজয় বরাণ রোডে অবস্থিত একটি বেসরকারি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে ৷ লঘু বজ্রাসন, গর্ভাসন, একপদাসন, উষ্ট্র বক্রাসন এবং সূর্য নমস্কার-সহ প্রায় তিন ডজন যোগ করতে পারে প্রত্যক্ষ । সোশাল মিডিয়ায় নিজের চ্যানেল তৈরি করেছে সে । স্কুল থেকে আসার পর নিজের চ্যানেলে ভিডিয়ো আপলোড করে এবং যোগব্যায়ামের জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে । একই সঙ্গে ছুটির দিনেও সে একইভাবে প্রশিক্ষণ নেয় । মায়ের মতো, ক্যাম্পে যায় এবং মানুষকে যোগব্যায়াম শেখায় । অনলাইনে যোগব্যায়াম শেখায় এই খুদে শিক্ষক ৷ প্রত্য়ক্ষও আয়ুষ মন্ত্রকের একজন প্রত্যয়িত প্রশিক্ষক ।
বয়স্ক ব্যক্তিদের যোগব্যায়ামের সূক্ষ্মতা শেখানো: প্রত্যক্ষ এখনও পর্যন্ত 8 থেকে 10 টি ক্যাম্পে ক্লাস নিয়েছে । এছাড়াও নিজের স্কুল এবং গায়ত্রী পরিবারের ক্যাম্পেও গিয়েছে । তার স্কুলে সিনিয়র-জুনিয়র পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের যোগব্যায়াম শিখিয়েছে । কোটার কোচিং ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি অনেক সামাজিক সংগঠনের কর্মসূচিতেও অংশ নিয়েছে । এছাড়াও তার কলোনির প্রবীণ নাগরিকদের যোগের সূক্ষ্মতা ব্যাখ্যা করেছে প্রত্যক্ষ । তাদের সামনে এমন যোগাসন করে দেখায় যে লোকেরা সেগুলি দেখে অবাক হয় ।
খুদে যোগ শিক্ষকের পরামর্শ: প্রত্যক্ষ জানায়, শিশুদের স্মার্টফোন থেকে দূরে থাকতে হবে । সে নিজেও স্মার্টফোন ব্যবহার করে না । তার পরামর্শ মা এবং বাবার ফোনেও হাত দেবেন না । শুধু কথা বলার জন্য ফোন নিন । অন্যান্য শিশুদের মতো গেম এবং কার্টুন পছন্দ করে না প্রত্যক্ষ । পারলে কিছু সময় টিভি দেখুন । শিশুদের জাঙ্ক ফুড থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে সে ৷ সর্বকনিষ্ঠ যোগগুরুর খেতাব পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করতে চায় প্রত্যক্ষ ।
প্রত্যক্ষর রোজনামচা: মা দীক্ষা বিজয় জানান, প্রত্যক্ষ প্রতিদিন সকাল 6 টায় ঘুম থেকে ওঠে ৷ তারপর হাঁটে এবং দৌড়তে যায় । কিছুক্ষণ ধ্যান ও প্রাণায়াম করার পর সে স্কুলে যায় । এরপর এসে বিকেলে বিশ্রাম নেয় এবং 5 থেকে সন্ধ্য়া 7টা পর্যন্ত যোগ অনুশীলন করে । স্কুল ছুটির দিনে অর্থাৎ, শনি ও রবিবার যোগ অনুশীলন শিবিরে যায় প্রত্যক্ষ ।
প্রত্যক্ষর খাদ্যাভ্যাস: প্রত্যক্ষর ঠাকুমা চন্দ্রকান্তা জানান, প্রত্যক্ষ জাঙ্ক এবং ফাস্টফুড থেকে দূরে থাকে । শুরু থেকেই ও এসবে অভ্যস্ত হয়নি । মাঝে মাঝেও জাঙ্ক এবং ফাস্ট ফুড তার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় না । প্রত্যক্ষ কেবল বাড়িতে রান্না করা সাধারণ খাবার খায় ৷ তার মধ্যে কেবল সবজি এবং চাপাটি পছন্দ করে সে । এমনকি শাকসবজির মধ্যেও বেশিরভাগ শুকনো এবং সবুজ শাকসবজি খায় । এমনকি চকোলেট ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড থেকেও দূরে থাকে প্রত্যক্ষ ।
এখনও পর্যন্ত প্রত্যক্ষার রেকর্ড :
- 2023 সালের মার্চ মাসে অনলাইনে অনুষ্ঠিত জাতীয় প্রতিযোগিতায় 2 মিনিটে 27টি যোগাসন করে জিতেছে ।
- 2023 সালের জুন মাসে কোটায় অনুষ্ঠিত নবরাষ্ট্র যোগ প্রতিযোগিতায় তাকে চ্যাম্পিয়ন অফ চ্যাম্পিয়নের খেতাব দেওয়া হয় ।
- 2023 সালের জুলাই মাসে, অনলাইনে সবচেয়ে কম বয়সে ফালাক আসন করে আন্তর্জাতিক যোগ বুক অফ রেকর্ডসে নিজের নাম নথিভুক্ত করে।
- 2024 সালের ফেব্রুয়ারিতে, ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস তাকে ভারতের সর্বকনিষ্ঠ যোগগুরুর খেতাব দেয় ।
- 2024 সালের অগস্টে জেলা পর্যায়ে যোগ প্রশিক্ষণের জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে ।
- 2024 সালের অক্টোবরে, গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাকে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ যোগগুরুর খেতাব দিয়েছে ।