নয়াদিল্লি, 4 জুন: তাঁর লক্ষ্য ছিল চারশোরও বেশি আসন পাওয়া। সেই লক্ষ্যমাত্রার থেকে অনেক দূরে থামতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। এনডিএ-র অন্য শরিকদের নিয়ে সরকার গঠনের জায়গায় থাকতে হচ্ছে। পাশাপাশি গত এক দশকের সেরা ফল করেছে কংগ্রেস। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কমবেশি একশো আসন জিতেছে দেশের শতাব্দী প্রাচীন দল। তবে ফল প্রকাশের পর সন্ধ্যায় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সামনে নিজের চেনা মেজাজেই ধরা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সদর দফতর থেকে বিজেপি কর্মীদের বার্তা দেওয়ার সময় ঠারেঠরে বুঝিয়ে দিলেন, তৃতীয়বারের জন্য তাঁরাই সরকার গঠন করবেন । মানুষের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা পূরণ করার চেষ্টা করবেন। দীর্ঘ ভাষণে তিনি বারবার এনডিএ-র শরিকদের কথা উল্লেখ করেছেন। এমনটা আগে বিশেষ শোনা যায়নি। এখান থেকেই স্পষ্ট সরকার গঠন করতে সহযোগীদের সক্রিয় সমর্থন যে চাই তা ভালোই বুঝেছেন নমো। পাশাপাশি ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, 'জয় জগন্নাথ'। ওড়িশায় বিজেপি দারুণ ফল করেছে। আর তাই ভাষণের শুরুতে এভাবে ওড়িশাবাসীর আবেগকে কুর্নিশ জানালেন প্রধানমন্ত্রী।
লোকসভা নির্বাচনের সব খবর পড়ুন এখানে
দুপুরের দিকে জানা যায়, সন্ধ্যায় বিজেপির সদর দফতরে আসবেন মোদি । 2014 এবং 2019 সালের ভোটের পরেও এই ছবি দেখা গিয়েছে। শুরুতেই কর্মী-সমর্থকদের বার্তা দেন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা। সেখানেও বার বার ফিরে আসে মোদির প্রসঙ্গ । নাড্ডা বুঝিয়ে দেন নরেন্দ্র মোদিকে সামনে রেখেই তৃতীয়বার জিতেছে এনডিএ।
এরপর বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে মোদি বলেন, "আজ বড় মঙ্গলবার। পবিত্র দিনে এনডিএ-র তৃতীয় সরকার তৈরি হতে চলেছে। আমারা দেশের কাছে ঋণী । দেশ বিজেপি আর এনডিএ-র উপর বিশ্বাস রেখেছে। এই জয় ভারতের গণতন্ত্রের জয়। সব কা সাথ সব কা বিকাশ মন্ত্রে জয়। আমি দেশের নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাব। কমিশন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় নির্বাচন ভালোভাবে শেষ করেছে। আমাদের নিরাপত্তা রক্ষীরা নিজেদের দায়িত্ব বোধের পরিচয় দিয়েছেন। নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে গোটা দেশ গর্ব করে। গোটা দুনিয়ার কোথাও এভাবে নির্বাচন হয় না। এটা ভারতের গণতন্ত্রের শক্তি।"
সরকার গঠনে কী ভূমিকা নেবে কংগ্রেস, জল্পনা জিইয়ে রাখলেন রাহুল-খাড়গেরা
দীর্ঘ ভাষণের বিভিন্ন অংশে ফিরে ফিরে আসে বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে জয়ের প্রসঙ্গ। লোকসভার সঙ্গে ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে। চারটিতেই হয় বিজেপি না হয় তার সহযোগী দলের জয় হয়েছে। এই প্রসঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশের শরিক দল টিডিপির প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডুর কথা উল্লেখ করেন মোদি। জানিয়ে দেন, এই প্রথম বিজেপি ওড়িশায় সরকার গড়বে। এই প্রথম মহাপ্রভুর ভূমিতে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। তাঁর ভাষণে উঠে আসে কেরলের প্রসঙ্গও। এই প্রথম কেরলে খাতা খুলেছে বিজেপি।
প্রধানমন্ত্রীর আত্মবিশ্বাসী হলেও সরকার গঠন করতে এখনও যে খানিকটা হলেও জটিলতা থেকে যাচ্ছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলগুলি বুধবার বৈঠকে বসছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে থেকে শুরু করে রাহুল গান্ধিরা জানিয়েছেন সরকার গঠনে তাদের ভূমিকা কী হবে তা ওই বৈঠক থেকে ঠিক হবে। অন্যদিকে, কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলন থেকে মমতা দাবি করেন, এই বৈঠকের ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। তাঁকে কেউ কিছু জানায়নি। তবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বৈঠকে যোগ দিতেও পারেন। এমনই আবহে বিজেপি কর্মীদের মুখোমুখি হলেন মোদি। তাঁকে আত্মবিশ্বাস দেখালেও মাত্র এক বছর আগে তৈরি ইন্ডিয়া জোট যে দশ বছরের এনডিএ সরকারকে চরম অস্বস্তিতে ফেলেছে তাতে সন্দেহ নেই।