নয়াদিল্লি, 10 ডিসেম্বর: রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়ের অপসারণের দাবিতে সংসদের উচ্চকক্ষে আস্থা ভোটের নোটিশ দিল বিরোধী দলগুলি ৷ চেয়ারমান রাজ্যসভার কাজকর্ম পরিচালনায় পক্ষপাত করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা সাংসদরা ৷
মঙ্গলবার কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ এবং নাসির হুসেন উচ্চকক্ষের মহাসচিব পিসি মোদির কাছে এই নোটিশ জমা দেন ৷ সূত্রের খবর, 'ইন্ডিয়া' ব্লকের কংগ্রেস, আরজেডি, তৃণমূল, সিপিআই, সিপিআই-এম, জেএমএম, আপ, ডিএমকের সাংসদরা এই নোটিশে স্বাক্ষর করেছেন ৷
ALL parties belonging to the INDIA group have had no option but to formally submit a no-confidence motion against the learned Hon'ble Chairman of the Rajya Sabha for the extremely partisan manner in which he has been conducting the proceedings of the Council of States. It has…
— Jairam Ramesh (@Jairam_Ramesh) December 10, 2024
যদিও কংগ্রেসের কয়েকজন শীর্ষ নেতা রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে আনা আস্থা ভোটের নোটিশটিতে স্বাক্ষর করেননি ৷ সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, সংসদীয় কমিটির চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধি এবং বিভিন্ন বিরোধী দলের কয়েকজন সংসদীয় দলনেতা এই তালিকায় রয়েছেন বলে সূত্রে জানা গিয়েছে ৷
রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এই প্রথম, জানান কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ ৷ তিনি বলেন, "বিগত 72 বছরে এই প্রথম যে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিরোধীরা অনাস্থা আনল ৷ তাহলে বোঝাই যাচ্ছে পরিস্থিতি কতটা খারাপ হয়েছে ৷ তিনি যেভাবে রাজ্যসভা চালাচ্ছেন, তাতে বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনতে বাধ্য হয়েছে ৷" বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তিনি আরও বলেন, "সংসদের দুই কক্ষে সচল থাকুক, এটা সরকার একেবারেই চায় না ৷ এটা পরিষ্কার ৷ গতকাল সংসদীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু নিজে চেয়ারম্যান ধনকড়কে বলেছেন, লোকসভায় আদানি ইস্যুতে গোলমাল হচ্ছে ৷ এরকম হলে আমরাও রাজ্যসভা চলতে দেব না ৷ সেখানে জেপি নাড্ডাও ছিলেন ৷ এমনটা এই প্রথম শুনলাম ৷ চেয়ারম্যানও এই বিষয়টিকে সমর্থন জানাচ্ছেন ৷ তাঁর নিরপেক্ষ থাকা উচিত ৷" |
সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয় 25 নভেম্বর ৷ প্রথম থেকেই আদানি-সহ একাধিক ইস্যুতে আলোচনার দাবিতে উত্তাল হয় সংসদের দুই কক্ষ ৷ কংগ্রেসের নেতৃত্বে আনা এই নোটিশটি এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন কংগ্রেসের মিডিয়া ইনচার্জ জয়রাম রমেশ ৷ তিনি জানান, "রাজ্যসভার সম্মানীয় চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করা ছাড়া ইন্ডিয়া শিবিরের সদস্য দলগুলির কাছে আর কোনও উপায় নেই ৷ তিনি অত্যন্ত একপেশে ভাবে রাজ্যসভা পরিচালনা করছেন ৷ 'ইন্ডিয়া'র দলগুলির কাছে এটা খুবই বেদনাদায়ক ৷ সংসদীয় গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা এই পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছি ৷"
কী বলছে সংবিধান ?
সংবিধানের অনুচ্ছে 67(বি) অনুযায়ী, রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদরা প্রস্তাবের মাধ্যমে উপ-রাষ্ট্রপতিকে তাঁর কার্যালয় থেকে অপসারণ করতে পারেন ৷ সংসদের উচ্চকক্ষ তো বটেই, নিম্নকক্ষের সাংসদদেরও এই প্রস্তাবে সম্মতি জানাতে হবে ৷ দুই কক্ষের সর্বসম্মতিক্রমে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা সম্ভব ৷ এর জন্য ন্যূনতম 14 দিন আগে এই নোটিশ দিতে হবে ৷
সংসদে শীতকালীন অধিবেশন শেষ হবে আগামী 20 ডিসেম্বর ৷ হাতে রয়েছে মাত্র 10 দিন ৷ অন্যদিকে উচ্চকক্ষের 245টি আসনের মধ্যে এনডিএ জোটের কাছে রয়েছে 124টি ৷ সুতরাং হাতে সময় 14 দিনের কম থাকায় অনাস্থা প্রস্তাবের উপর আলোচনা নাও হতে পারে ৷ অন্যদিকে, সংখ্যাগরিষ্ঠতার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে বিরোধীরা ৷ তাই পরাজয় নিশ্চিত জেনেও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে বিরোধী শিবির ৷
অনাস্থা প্রসঙ্গে বিরোধীদের বক্তব্য
এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ এবং রাজ্যসভায় দলের উপনেতা সাগরিকা ঘোষ বলেন, "সবাই এই নোটিশে স্বাক্ষর করেছেন ৷ উপ-রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে এই প্রস্তাব আনা হয়েছে ৷ আমাদের কাছে জেতার যথেষ্ট সংখ্যা নেই ৷ কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য এটা একটা শক্তিশালী বার্তা ৷ এই লড়াই কোনও ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে নয়, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৷"
এর আগে সংসদের বাদল অধিবেশনেও বিরোধীরা চেয়ারম্যান ধনকড়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার তোড়জোড় করেছিল ৷ সেবার অধিবেশন হওয়ার কথা ছিল 12 জুলাই থেকে অগস্টের 12 তারিখ পর্যন্ত ৷ কিন্তু একদিন আগেই অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করেন উচ্চকক্ষের চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড় ৷
বিরোধীদের দাবি, সেবার উপ-রাষ্ট্রপতিকে অপসারিত করতে 80 জন বিরোধী সাংসদ নোটিশে স্বাক্ষর করে ফেলেছিলেন ৷ এদিকে একদিন আগেই সংসদ মুলতুবি হয়ে যাওয়ায় বিরোধীরা প্রস্তাব আনতে পারেননি ৷ ভারতের সংসদীয় ইতিহাসে এর আগে রাজ্যসভার কোনও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এমন নোটিশ আনার ঘটনা ঘটেনি ৷ তবে ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল 2020 সালে ৷
রাজ্যসভায় বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়ের মনোমালিন্য নতুন কিছু নয় ৷ সম্প্রতি সেই আগুনে ঘি ঢালে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি সোনিয়া গান্ধির সঙ্গে জর্জ সোরসের যোগাযোগের বিষয়টি ৷ চেয়ারম্যান ধনকড় সরকার পক্ষের সাংসদদের এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার অনুমতি দেন ৷ এদিকে তিনি বিরোধী দলগুলির আলোচনার দাবি মেনে নেননি ৷ এতে চটে যান কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির সাংসদরা ৷