নয়াদিল্লি, 5 সেপ্টেম্বর: হাসপাতালগুলিকে সুরক্ষিত করার দাবির পাশাপাশি যাতে রোগীরা নির্দ্বিধায় ডাক্তারদের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারে সেই পরিবেশ বজায় রাখতে হবে ৷ এই দুটি বিষয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে ৷ আরজি কর-কাণ্ডে চিকিৎসকদের দাবির মাঝে সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই বললেন দিল্লি এইমসের ডিরেক্টর ডক্টর এম শ্রীনিবাস ৷
আরজি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা অন্যান্য হাসপাতালের পরিকাঠামোর ফাঁকের পাশাপাশি কাজের অবস্থা এবং চিকিৎসা পেশাদারদের নিরাপত্তা নিয়ে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে । ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের সদস্য ডাঃ শ্রীনিবাসের কথায়, "আবাসিক ডাক্তারদের দাবি সকলের চোখ খুলে দিয়েছে । আপনি যদি এইমস এবং পিজিআই চণ্ডীগড়ের মতো জাতীয় গুরুত্বের ইনস্টিটিউটগুলিতে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন তারা এখনও ডিউটি রুম, মৌলিক সুযোগ-সুবিধা, হস্টেল এবং নির্ধারিত কাজের সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে পরিকাঠামো ভালো মানের ৷"
তিনি জোর দিয়ে বলেন, "যাইহোক ডাক্তার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের আরামের ব্যবস্থা করার জন্য ইকোসিস্টেমকে আপগ্রেড করতে হবে ৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যা ঘটেছে তাতে বেশিরভাগ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হাসপাতালের মানোন্নয়নের দিকেই নজর দিয়েছে ৷ সেখানকার হস্টেলের দিকে নয় । তাই, গত 5 থেকে 10 বছরে কিছু প্রতিষ্ঠানে একটি অমিল হয়েছে ৷"
চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক সম্প্রসারণ উপেক্ষা করা হয়েছে ৷ তাঁর কথায়,"আমরা মানসিকভাবে রোগীর যত্ন এবং পরিষেবার সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছি (এখন পর্যন্ত)।" চিকিৎসকদের জন্য একটি নিরাপদ কাজের পরিবেশ তৈরির দাবিতে আমাদের একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য থাকা দরকার ... আপনি এটিকে বিমানবন্দর বা দুর্গের মতো করতে চান বা আপনি চান যে রোগী এসে আপনার সঙ্গে নির্দ্বিধায় কথা বলুক ।"
ডাক্তারদের দীর্ঘক্ষণ ডিউটি (24 ঘণ্টা) এবং কখনও কখনও 36 ঘণ্টা পর্যন্ত থাকার বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন (NMC) ডাক্তারদের কাজের সময় সংক্রান্ত নির্দেশিকা বের করেছে ৷ এইমস-দিল্লি সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান, এটি প্রায় বাস্তবায়ন করেছে এবং এনএমসি যা সুপারিশ করেছে তার সঙ্গে একই পৃষ্ঠায় রয়েছে বিশ্বের কিছু অংশে, এমন কিছু নিয়ম রয়েছে যার অধীনে চিকিৎসকদের প্রসারিত বা এক সপ্তাহে নির্দিষ্ট সংখ্যক ঘন্টার বেশি কাজ করার কথা নয় । আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন তাহলে বলব, এটি প্রসারিত হোক বা প্রতি সপ্তাহে এবং ডিউটি-পরবর্তী সময়ের জন্য একটি সীমিত সংখ্যা থাকা উচিত ৷ যদি কাজের সময় ঘণ্টা হিসেবে একটি সীমার বাইরে বাড়ানো হয়, অবশ্যই এটি প্রদত্ত চিকিৎসা পরিষেবার মানের ফলাফলের উপরও কিছুটা প্রভাব ফেলবে ৷"
ডাঃ শ্রীনিবাস স্বীকার করেছেন যে, কল্যাণমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে এবং স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের কর্মক্ষেত্রে আরামদায়ক করার জন্য অনেক কিছু করা দরকার ৷ যেমন: খাবার, ডিউটি রুম, আন্তঃ-প্রাতিষ্ঠানিক ক্যাম্পাসের কোনও অংশে পর্যাপ্ত আলো ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকলেও নেভিগেশনে ধরে যাতে গন্তব্যে পৌঁছনো যায় ৷ সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য একটি বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজন ৷ তাঁর কথায়, "একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে হবে যাতে তারা নিশ্চিন্ত হন । এটিকে আমরা খুব বেশি গুরুত্ব দিইনি । কিন্তু, আমি মনে করি আমরা রোগীর সেবায় নিমগ্ন থাকা ডাক্তার, নার্স এবং হাসপাতালের কর্মীদের প্রয়োজনীয়তার দিকে নজর দিইনি এবং এটি এমন একটি বিষয় যা আমাদের ফোকাস করা দরকার ৷"
কেউ কেউ চান একটি ডিউটি রুম, একটি নিরাপদ কর্মক্ষেত্র এলাকা, সীমিত কর্মঘণ্টা, ডিউটি-পরবর্তী অফ টাইম, মেস সুবিধা এবং রোগীর দেখভালের দায়িত্ব থাকা ব্যক্তি যাতে ডাক্তারদের উপর আঘাত না করে তা নিশ্চিত করতে । এই বিষয়ে ডক্টর শ্রীনিবাস বলেন, "ডাক্তাররা যখন রাতের ডিউটি বা বর্ধিত ডিউটিতে থাকে... রোগীর অ্যাটেনডেন্টদের এসে চিকিৎসকদের মারধর করা উচিত নয় । তবে আমরা যে ইকোসিস্টেম তৈরি করি তা প্রতিটি হাসপাতালের উপর নির্ভর করে ৷ এটা এমন একটি এলাকা যেখানে আমাদের একরকম বাফার রাখতে হবে । যখন কিছু ভুল হচ্ছে, রোগীর অবস্থার অবনতি বা মৃত্যু হয় তখন অ্যাটেনডেন্টদের পাশাপাশি আত্মীয়রাও ডাক্তারদের আক্রমণ করে ৷ আমাদের প্রয়োজন এইসব জায়গায় সেই স্তরের কাউকে রাখা অর্থাৎ প্রবীণ ব্যক্তি বা মেডিকো সামাজিক কর্মী যিনি অ্যাটেনডেন্ট ও রোগীর আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলে তাদের শান্ত করবেন ৷"
তাঁর কথায়, "যেখানে মৃত্যু নিশ্চিত, সেখানেও দেখা যায় রোগীর পরিবার ডাক্তারদের মারধর করছেন ৷ ডাক্তাররা ঈশ্বর নন ৷ এটাও একজন রোগী, তার অ্যাটেনডেন্ট ও পরিবারকে বুঝতে হবে ৷ তাদের জানতে হবে সেই নির্দিষ্ট রোগের স্বাভাবিক কোর্স ও পূর্বাভাস কী ৷ কোন পরিস্থিতিতে মৃত্যুকে মেনে নেওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকে না ৷"