নয়াদিল্লি, 20 ডিসেম্বর: প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের বহু ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে ৷ এই সংখ্যায় পাকিস্তানকেও ছাপিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ ৷ শুক্রবার সংসদে প্রতিবেশী দেশগুলিতে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের ঘটনা সংক্রান্ত প্রশ্নের লিখিত জবাব দিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং ৷
তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে 8 ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর 2 হাজার 200টি হিংসার ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে ৷ অক্টোবর পর্যন্ত পাকিস্তানে এই ধরনের 112টি ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে ৷ হিন্দুদের উপর অত্যাচারের ঘটনা পাকিস্তানের থেকে বাংলাদেশে অনেক বেশি হয়েছে ৷ প্রতিমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, এই পরিসংখ্যানের পরেও ভারত আশা করে অন্তর্বর্তী ইউনুস সরকার হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে ৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা মানবাধিকার সংগঠন থেকে এই ডেটা সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গিয়েছে ৷
মন্ত্রী তাঁর লিখিত জবাবে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার পাকিস্তানের কাছে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, জাতিবিদ্বেষ, কোনও একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের উপর ধারাবাহিক অত্যাচার, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার বন্ধ করে তাঁদের নিরাপত্তা ও ভালো থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করার আর্জি জানিয়েছে ৷ এছাড়া আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের সংগ্রামের কথা তুলে ধরেছে ভারত ৷
বিগত তিন বছরে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলিতে কোথায় কত সংখ্যক হিন্দু এবং অন্য সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের কতগুলি ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে তা দেশ ও বছর অনুযায়ী তথ্য চাওয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ৷ পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দিকটি মাথায় রেখে কূটনৈতিক স্তর থেকে শুরু করে ত্রাণ সাহায্য পাঠানো নিয়ে বিজেপি সরকার কী কী পদক্ষেপ করেছে তাও জানতে চান এক সাংসদ।
এই প্রশ্নের লিখিত জবাবে সরকার জানিয়েছে, হিন্দুদের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনাগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে ভারত ৷ এই বিষয়ে উদ্বেগের কথা বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছে ৷ এরই সঙ্গে মন্ত্রক জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ছাড়া প্রতিবেশী অন্য কোনও রাষ্ট্রে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের ঘটনা নথিবদ্ধ হয়নি ৷
"ভারত আশা করে, হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং ভালো থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে বাংলাদেশ ৷ গত 9 ডিসেম্বর ঢাকায় গিয়ে একই কথা জানিয়েছেন বিদেশ সচিব ৷ ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতির উপর কাছ থেকে নজর রাখছে ৷ কিন্তু সংখ্যালঘু-সহ দেশের সব নাগরিকের সুরক্ষা এবং স্বাধীনতার প্রাথমিক দায়িত্ব সেই দেশের সরকারের", জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন ৷
মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, 2022 সালে বাংলাদেশে 47টি সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছিল ৷ একই ক্ষেত্রে পাকিস্তানে সংখ্যাটা 241 ৷ 2023 সালে এই ধরনের অত্যাচারের 302টি ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশে এবং 103টি পাকিস্তানে ৷
চলতি বছরের 5 অগস্ট ছাত্র আন্দোলনের চাপে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৷ এরপর 8 অগস্ট শান্তিতে নোবেল জয়ী মহম্মদ ইউনুস অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা হিসাবে শপথ নেন ৷ বাংলাদেশে এক নয়া রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হয় ৷ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সমাজের পাশাপাশি রাজনৈতিক চেহারাও বদলাতে শুরু করে ৷
হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে থাকে ৷ এই বিষয়ে ভারত তার উদ্বেগের কথা বাংলাদেশকে জানায় ৷ এমনকী অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস নিজে প্রধানমন্ত্রীকে ফোনে হিন্দুদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ৷ এরপরেও কোনও পরিবর্তন হয়নি ৷
হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ক্রমশ তিক্ত হতে থাকে ৷ দুর্গাপুজোর সময় বাংলাদেশের মন্দিরে হামলা চালানোর ঘটনার সমালোচনা করে ভারত সরকার ৷ এরই মধ্যে গত 25 নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার হন সনাতনী নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ৷ এর পরদিনই তিনি চট্টগ্রামের একটি আদালতে জামিনের আবেদন করলেও তা খারিজ হয়ে যায় ৷
এর পরেই বাংলাদেশের কয়েকটি এলাকায় প্রতিবাদে নামেন চিন্ময়কৃষ্ণের অনুগামীরা ৷ উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ ৷ ইসকনকেও নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি ওঠে ৷ এই দাবি অবশ্য বাতিল করে দেয় আদালত ৷ এই ঘটনাগুলিতে ভারত বাংলাদেশের ইউনুসের সরকারের কড়া সমালোচনা করে ৷