আগরতলা, 3 ডিসেম্বর: আগরতলায় বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডেপুটি হাইকমিশন চত্বরে হামলার ঘটনায় 4 পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে ৷ মঙ্গলবার পশ্চিম ত্রিপুরার পুলিশ সুপার কিরণকুমার কে জানান, এই ঘটনায় পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে ৷ ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে 7 জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ এছাড়া কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে তিন সাব-ইনস্পেক্টরকে বরখাস্ত এবং একজন ডেপুটি সুপারকে 'ক্লোজ' করা হয়েছে ৷ ডেপুটি সুপারকে সদর দফতরে দ্রুত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷
বন্ধ বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডেপুটি হাইকমিশন
সোমবারের পর মঙ্গলেও সনাতনী হিন্দু নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে হাজার হাজার মানুষ 'সনাতনী যুব' ব্যানারে আগরতলায় বিক্ষোভ-মিছিলে অংশ নেয় ৷ এই পরিস্থিতিতে পরবর্তী নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ করা হল আগরতলার বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডেপুটি হাইকমিশন ৷
ডেপুটি হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি মহম্মদ আল-আমিন বলেন, "নিরাপত্তার দিকটি মাথায় রেখে পরবর্তী নোটিশ না পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডেপুটি হাইকমিশনে সব ভিসা এবং কনস্যুলার সংক্রান্ত কাজকর্ম বন্ধ রাখা হল ৷ এই মুহূর্ত থেকেই তা কার্যকর করা হচ্ছে ৷"
এদিন আগরতলায় সনাতনী হিন্দু নেতা চিন্ময়কৃষ্ণের মুক্তির দাবির পাশাপাশি হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অত্যাচারের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ পথে নামে ৷ আখাউরা ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্টের (আইসিপি) দিকে যাওয়ার আগেই বিক্ষোভকারীদের আটকানো হয় ৷ পুলিশ তাদের 'বাংলাদেশ চলো' মিছিলে করতে বাধা দেয় ৷ অন্যদিকে এদিনই অসমের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদ জানাতে পথে নামে রাজ্যের একাধিক হিন্দু সংগঠন ৷ বিশ্বনাথ জেলায় লোক জাগরণ মঞ্চ প্রতিবাদ মিছিল বের করে ৷ সেখানে বিশাল সংখ্যক মানুষ সামিল হয় ৷ তারা বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন ৷
বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক সাংবাদিকদের জানান, চিন্ময়কৃষ্ণ দাস গ্রেফতার করে বাংলাদেশ সরকার সংখ্যালঘুদের উপর চরম নিপীড়ন চালাচ্ছে ৷ তিনি বলেন, "বাংলাদেশে সম্পূর্ণ অরাজকতা চলছে ৷ সংখ্যালঘুরা তাঁদের নিজের দেশেই দমন-পীড়নের শিকার ৷ নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সবমিলিয়ে 17 হাজার সম্পত্তির উপর হামলা চালানোর ঘটনা ঘটেছে ৷ সারা বিশ্ব দুশ্চিন্তায় রয়েছে ৷ আমরা চিন্ময় প্রভুর মুক্তি চাই ৷ তিনি সংখ্যালঘুদের হয়ে কথা বলছিলেন ৷"
এদিকে সোমবার আগরতলায় বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডেপুটি হাইকমিশন চত্বরে তাণ্ডবের ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেছে ভারত ৷ বিদেশ মন্ত্রকের তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "আগরতলায় বাংলাদেশ অ্যাসিস্ট্যান্ট হাইকমিশনে ভাঙচুরের ঘটনা কোনও মতেই কাম্য নয় ৷ ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক । কোনও অবস্থাতেই কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার সম্পত্তি নিশানা হতে পারে না ৷ এই আবহে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং ভারতে তাদের অ্যাসিস্ট্যান্ট ও ডেপুটি হাইকমিশনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার ।"
Our statement on breach of premises at the Bangladesh Assistant High Commission, Agartala ⬇️https://t.co/hVVB0SITQn pic.twitter.com/li8TtmwfS8
— Randhir Jaiswal (@MEAIndia) December 2, 2024
সোমবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার এবং সনাতনী নেতা চিন্ময়কৃষ্ণের মুক্তির দাবিতে আগরতলায় বাংলাদেশ অ্যাসিস্ট্যান্ট ডেপুটি হাইকমিশন চত্বরে বসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন প্রতিবাদীরা ৷ জানা গিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা কট্টরপন্থী সংগঠন 'হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি'র সদস্য ৷ এরপর তাঁরা দূতাবাসে ভাঙচুর চালাতে শুরু করেন ৷ শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে ৷
এই বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন বিজেপির ত্রিপুরা রাজ্য সহ-সভাপতি সুবল ভৌমিক ৷ তিনি বলেন, " আমরা প্রতিটি হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি ৷ বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী এই নতুন সরকার দায়িত্বে আসার পর সংখ্যা আরও বেড়েছে ৷ আমরা আজ সেই সমস্ত ঘটনার প্রতিবাদে একজোট হয়েছি ৷"
আওয়ামী লীগ নেত্রী তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হামলার একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে ৷ এই আবহে 25 নভেম্বর ঢাকার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সনাতনী নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করা হয় ৷ তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ তুলেছে ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ৷ চট্টগ্রামের একটি আদালতে তাঁর জামিনের আবেদনও খারিজ হয়ে যায় ৷ এরপরই অশান্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি ৷ বাংলাদেশে অশান্তির আঁচ এসে পড়ে ভারতেও ৷