মুম্বই, 23 নভেম্বর: মারাঠি মানুষের মন কে ছোঁবে? এটাই ছিল প্রশ্ন। আর তার সোজাসুজি এবং স্পষ্ট জবাব দিল মহারাষ্ট্র । লোকসভা নির্বাচনের ঠিক উল্টো ফল দেখল মারাঠা-ভূম। মাত্র 6 মাসের মধ্যে এতটা পরিবর্তন যে আদৌ হতে পারে তা বুঝতে পারেননি অনেকেরই। লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে 151টি আসনে এগিয়ে থাকা বিরোধী শিবির 50টি আসনও ধরে রাখতে পারল না ৷
মহারাষ্ট্রে এনডিএ-র জয়ে উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ প্রথমে এক্স হ্যান্ডেলে এবং পরে বিজেপির সদর দফতরে গিয়ে তিনি বলেন, "এটা উন্নয়নের জয়, সুশাসনের জয়৷ একজোট হয়ে থাকলে আমরা আর উন্নতি করব ৷ আমাদের পাশে থাকার জন্য মহারাষ্ট্রের ভাইবোনেদের ধন্যবাদ ৷ বিশেষ করে যুব ও মহিলারা আমাদের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ৷ তাঁদের ধন্যবাদ ৷"
ভোটের হিসেব-নিকেশ
শনিবার রাত পর্যন্ত পাওয়া হিসেব বলছে, বিজেপি 137টি আসন পেয়েছে। একনাথ শিন্ডের শিবসেনা পেয়েছে 58টি আসন এবং অজিত পাওয়ারের এনসিপি পেয়েছে 41টি আসন। আর কংগ্রেস 15টি আসন পেয়েছে । শরদ পাওয়ারের এনসিপি পেয়েছে 14টি আসন। উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা পেয়েছে 20টি আসন। সবমিলিয়ে বিরোধী শিবিরে গিয়েছে 49টি আসন। এই হিসেব অনুযায়ী 2019 সালে 187 আসন পাওয়া মহাযুতি কমপক্ষে 50টি কেন্দ্র নিজেদের দিকে আনতে পেরেছে । আবার 72 আসন পাওয়া মহাবিকাশ আঘাড়ী কমপক্ষে 23টি আসন হারিয়েছে ৷
কী অঙ্কে গেরুয়া-ঝড়?
কিন্তু দুটো ভোটের মধ্যে এত বড় পরিবর্তন হল কী করে? রাজনৈতিক মহলের অনেকেই এই ফলাফলের সঙ্গে হরিয়ানার মিল দেখতে পাচ্ছেন । লোকসভা নির্বাচনে হরিয়ানায় জাঠেদের ভোট পায়নি বিজেপি । এরপর বিধানসভা ভোটে জাঠ বাদ দিয়ে অন্যদের কাছে টানার চেষ্টা করে সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি ।
সেই একই ঘটনা ঘটেছে মহারাষ্ট্রে । লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই বিরোধী শিবিরের প্রায় সমস্ত নেতা মারাঠি মননকে ছুঁতে চেয়েছেন । বালাসাহেবের মতো তাঁরাও মারাঠাদের হৃদয় সম্রাট হতে চেয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনে তাতে সাফল্যও মিলেছিল। এবার আর তা হল না । মহারাষ্ট্রের অন্য জনজাতিকর কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করে বিজেপি ও তাঁর সহযোগীরা। তাতেই বাজিমাত করলেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ থেকে শুরু করে একনাথ শিন্ডেরা ।
আসল সেনার লড়াই
মারাঠি মানুষের মন পাওয়ার পাশাপাশি লড়াইটা ছিল 'আসল শিবসেনা' হিসেবে মাথা তোলারও । ফলাফল থেকে স্পষ্ট এই প্রশ্নে বালাসাহেব-পুত্র আদিত্য ঠাকরের পক্ষ নেয়নি মহারাষ্ট্র। শিন্ডে শিবিরকেই মেনে নিয়েছেন শীব-সৈনিকরা। একমাত্র স্বস্তির খবর ওরলির মতো অভিজাত কেন্দ্র থেকে আদিত্য ঠাকরের জয় ।
কাকা বনাম ভাইপো
বিধানসভার এই নির্বাচন মহারাষ্ট্র তথা জাতীয় রাজনীতির অন্যতম চর্চিত চরিত্র শরদ পাওয়ারের সম্মানরক্ষার লড়াইও যে ছিল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । নির্বাচনের ফলাফল বলছে, ভাইপো অজিত পাওয়ারের কাছে হার মানতে হয়েছে কাকা শরদকেও। এবারও প্রায় 1 লাখ ভোটে জিতলেন অজিত পাওয়ার।
হাত-খালি
লোকসভা নির্বাচনের পর মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের ফলাফল সবচেয়ে বেশি অবাক করেছিল রাজনৈতিক মহলকে । জোটের বাকিদের থেকে বেশি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস । এবার ফল হল বেশ খারাপ। লোকসভায় 13টি আসন পাওয়া কংগ্রেসের পক্ষে গেল 15টি বিধানসভা আসন।
কে কী বললেন?
নির্বাচনে এমন জয়ের পর স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে মুখ্যমন্ত্রী পাবে কোন পক্ষ ৷ নির্বাচনের শুরু থেকেই এ নিয়ে প্রচার ছিল ৷ ফল প্রকাশ হওয়ার পর দেবেন্দ্র ফড়নবিশ জানান,মহারাষ্ট্রের নতুন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়ে কোনও জটিলতা নেই ৷ জোটের নেতাদের পাশে বসে এমনই দাবি করলেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ৷ তিনি জানান, বিরোধীরা শুরু থেকে অপপ্রচার করে আসছিল ৷ বলছিল, শাসক শিবিরে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া নিয়ে টানাপোড়েন আছে ৷ কিন্তু সেই বক্তব্য ঠিক নয় ৷ তাঁর কথায়, "আমাদের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে কোনও বিরোধ নেই ৷ তিনটি দলের নেতারা আলোচনা করে নেতার নাম ঠিক করে নেবেন ৷ "
জয় কার্যত নিশ্চিত হওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে ৷ তিনি বলেন, "আমরা দেখিয়েছি সরকার চাইলে কী করতে পারে ৷ কৃষক থেকে শুরু করে মহিলা-সকলের জন্য আমাদের সরকার কাজ করেছে ৷ গত আড়াই বছর ধরে ডবল ইঞ্জিনের সরকার চলেছে ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সকলেই বারবার আমাদের রাজ্যে এসেছেন ৷ উন্নয়নের কাজে প্রচুর সাহায্য করেছেন ৷ আমরা সবাই জানি মহারাষ্ট্র বড় রাজ্য ৷ এখানে এই বিপুল ভোটে জেতা আমাদের সকলের কাছেই একটা বিরাট উপলব্ধি ৷ বিধানসভার অধিবেশনেই আমি বলেছিলাম, আমাদের জোট 200-র বেশি আসন পাবে ৷ আর সেটাই হল ৷ আমরা সবাই একটা টিম হিসেবে কাজ করেছি ৷ দেবেন্দ্র ফড়নবিশ অজিত দাদা সবাই আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি ৷ সবাইকে ধন্যবাদ ৷"
জয়-পরাজয়
মহারাষ্ট্র নির্বাচনের একাধিক আসনে কেমন লড়াই হয় সেদিকে তাকিয়ে ছিল দেশ। তার মধ্যে প্রথমেই আছে বারামতী আসন। ভাইপো যুগেন্দ্র পাওয়ারকে 1 লাখেরও বেশি ভোটে হারিয়েছেন অজিত পাওয়ার। অন্যদিকে ওরলি বিধানসভা আসনে দুই শিবসেনার লড়াইয়ে শেষ হাসি হেসেছেন উদ্ধব-তনয় আদিত্য। এর পাশাপাশি একসময় শরদ পাওয়ারের অতিঘণিষ্ঠ নবাব মালিক অজিত পাওয়ারদের হয়ে ভোটে লড়েছিলেন। এবার তিনি হেরে গিয়েছেন। তবে তাঁর মেয়ে সানা মালিক জিতেছেন। এর পাশাপাশি প্রয়াত এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকীর ছেলে জিশান সিদ্দিকীও পরাজিত হয়েছেন। প্রত্যাশামতোই জিতেছেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ও একনাথ শিন্ডে ।