নয়াদিল্লি, 5 মে: 2014 সালের জুন মাস থেকে 2024 লোকসভা নির্বাচন ৷ এই 10 বছরের শাসনকালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির প্রাপ্তি হল দেশের 140 কোটি মানুষের আস্থা অর্জন ৷ তবে, প্রথম পাঁচবছর সময় তাঁর নষ্ট হয়েছিল ৷ কারণ, কংগ্রেস সরকারের খনন করা গর্তগুলি, এই পাঁচবছরে তিনি বুজিয়েছেন ৷ এতদিন ভারত ও তার নাগরিকদের সময় নষ্ট হয়েছিল ৷ তাই বিশ্বকে শাসন করার সুযোগ এলে, তা হাতছাড়া করার পক্ষপাতি নন মোদি ৷ এর রাজনৈতিক ব্যাখ্যা খুঁজতে গেলে, পুরোটাই কংগ্রেসের দিকে নিশানা ছিল তাঁর ৷
মোদির মতে, "দেশের সেবা করার সুযোগ... আমি বলব, এটা আমার কাছে ভগবানের আর্শিবাদ ৷ আমাকে এই পদের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে, দেশের 140 কোটি মানুষের আশাপ্রত্যাশা পূরণ করতে ৷ মাঝে মধ্যে আমার মনে হয়, কোনও ঐশ্বরিক শক্তি আমাকে প্রতিনিয়ত সাহায্য করে যাচ্ছে, ভারতকে তার লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে ৷ আর এই চিন্তাই আমাকে এখন আরও অনুপ্রেরণা জোগায় ৷"
মোদির কথায়, "সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে 25 কোটি মানুষ দারিদ্রসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে ৷ যেখানে সরাসরি নগদ ট্রানসফার করার সুবিধা দেওয়া হয়েছে ৷ আমরা বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের 3.5 লক্ষ কোটি টাকা প্রদান করেছি সরাসরি ৷ যার ফলে দুর্নীতি দূর করতে সক্ষম হয়েছি ৷ একটা সময় আমরা ডিজিটাল পেমেন্টের কথা বললে, লোকে হাসতো ৷ আর 2014 সালে দাঁড়িয়ে ভারত এখন এই ডিজিটাল কারেন্সির দুনিয়ায় রাজত্ব করছে ৷"
2019 সাল ও তার পরে বিভিন্ন সময়ে মোদি সরকার একাধিক দুঃসাহসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ৷ যা নিয়ে মোদি বলেন, "370 অনুচ্ছেদ বাতিলের থেকে শুরু করে, আমরা মহিলা সংরক্ষণ বিলের অনুমোদন করিয়েছি ৷ আমরা এদেশের আইনের মাধ্যমে শ্রী রামচন্দ্র প্রভুর বাড়ি ফিরিয়ে আনতে পেরেছি ৷ স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপনের সময় ভারতকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি ৷ তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার প্রথম 100 দিনের মধ্যে আমরা এ নিয়ে কাজ শুরু করব ৷ আমি খুব কম সংখ্যক প্রধানমন্ত্রীদের একজন, যার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ করার ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে ৷ আর সেই কারণে, আমি রাজ্যগুলির উদ্বেগ বুঝতে সক্ষম হয়েছি ৷"
প্রশ্ন- আপনাকে সুস্বাস্থ্য এবং শারীরিক সুস্থতার প্রতীক বলে মনে করা হচ্ছে ৷ আপনার স্বাস্থ্যের রহস্য কী ? আপনি দিনে কত ঘণ্টা কাজ করেন ? আর লাগাতার কাজ করে যাওয়ার এই অনুপ্রেরণা কোথা থেকে পান ?
মোদি- আমি তেমন মানুষ নই যে দিনে কতঘণ্টা কাজ করছি, তার হিসেব রাখব ৷ কিছু অভ্যেস আমি ছোটবেলায় রপ্ত করেছি, যা এখনও পালন করে চলেছি ৷ হিমালয়ে থাকার সময় আমি ব্রহ্ম মুহূর্তে জেগে যেতাম এবং স্নান সেরে ফেলতাম ৷ তখন থেকে আমি সেই অভ্যেস বজায় রেখেছি ৷ আর নিয়মিত যোগ ব্যায়াম ও ধ্যান করি ৷ আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুমোতে পারি না ৷ আমার জীবনে কাজ ও বিশ্রামের কোনও ফারাক নেই ৷ আমি কাজের মধ্যেই বিশ্রামের অবকাশ খুঁজি ৷
প্রশ্ন- এই নির্বাচনকে কি আপনার সরকারের পারফরম্যান্সের গণভোট হিসেবে দেখছেন ?
মোদি- আমরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের উৎসবের আয়োজন করছি ৷ দেশের মানুষ আমাদের সরকারের কঠোর পরিশ্রম ও ট্র্যাক রেকর্ড দেখেছে ৷ এক দশকে কীভাবে দেশ বদলে গেল তা লক্ষ্য করেছে ৷ তাই জনগণ চায় এই সরকার আবার ক্ষমতায় আসুক ৷ তারা বিশ্বাস করে যে আমরা 2047 সালের মধ্যে উন্নত ভারতের লক্ষ্য অর্জন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব ৷ সর্বত্র আমি ইতিবাচকতা দেখতে পাই, যা সরকারের উপর মানুষের মধ্যে খুব কমই দেখা যায় ৷ আমি যেখানেই যাই মা-বোনেরা আমাকে দু’হাত তুলে আশির্বাদ করেন ৷ দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যুবসমাজ ইতিবাচক ভঙ্গিতে আমার সঙ্গে কথা বলেন ৷
এ কারণেই যারা প্রথমবার ভোটাধিকার পেয়েছেন, তাঁরা বিপুল সংখ্যায় ভোট দিতে আসছেন ৷ মানুষ এই নির্বাচনে এমনভাবে অংশগ্রহণ করছে, যেন তারা নিজেদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ৷ মানুষ জানে যে আমাদের দেওয়া প্রতিটি ভোট একটি উন্নত ভারতের জন্য ৷ একদিকে যেখানে আমরা করেছি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলে মানুষের কাছে ভোট চাইছি ৷ অন্যদিকে, বিরোধীরা মোদির বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে ৷ কোন কাজ করার নেই ৷ ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোন চিন্তা নেই ৷ তারা আমাকে অপমান ও নিশানা করার মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছে ৷
প্রশ্ন- আগামী 5 বছরের জন্য আপনার শীর্ষ অগ্রাধিকার কী ?
মোদি- আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার একটা উন্নত ভারত গড়ার দিকে যাত্রা শুরু করা ৷ তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার প্রথম 100 দিনের মধ্যে আমরা এ বিষয়ে কাজ শুরু করব ৷ এরপর আমরা আগামী 5 বছরে সকল পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়িত করব ৷ আমরা যখন 2014 সালে দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন দেশের ক্ষতি এড়াতে আমরা মিশন মোডে কাজ করেছি ৷ যেখানে সম্পূর্ণ মেরামতের প্রয়োজন, আমরা তা করেছি ৷ ইউপিএ সরকারের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অব্যবস্থাপনা, ভুল-ত্রুটি সংশোধন করা, আমাদের জন্য একটা ভারী বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৷ দ্বিতীয় পর্যায়ে, আমরা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলির সমাধান খুঁজতে কাজ করেছি ৷
প্রশ্ন- ভারতকে 5 ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির লক্ষ্যে আপনার নেতৃত্বে দেশ কতটা অগ্রগতি করেছে ? আর কবে থেকে মানুষ সেই অর্থনৈতিক উন্নতির ফল ভোগ করতে পারবে ?
মোদি- যারা মনে করছে, আমরা প্রথম থেকে উন্নয়নের ফল পাচ্ছি না ৷ তারা বড় ছবিটা মিস করছে ৷ এমন এক সময়ে যখন আমাদের চারপাশের বিশ্বের দেশগুলি মুদ্রাস্ফীতি এবং মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভুগছে, ভারতের পরিস্থিতি তখন পুরো আলাদা ৷ এটি আমাদের অনন্য উন্নয়নমূলক রাষ্ট্রের একটি প্রত্যক্ষ এবং প্রভাবশালী লক্ষণ ৷ আমরা বিশ্বের যেকোনো বড় অর্থনীতির চেয়ে দ্রুত এগিয়ে চলেছি ৷ বিশ্বজুড়ে কোভিড, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং মূল্যবৃদ্ধির মতো সমস্যা থাকা সত্ত্বেও, গত দশ বছরে আমরা মুদ্রাস্ফীতি গড়ে 5%-এ সীমাবদ্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছি ৷
প্রশ্ন- দশ বছরের মেয়াদ কেমন ছিল ? আপনার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কী ? কোন জিনিসগুলি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু করতে পারেননি ? আর কোনও অপ্রত্যাশিত সাফল্য ?
মোদি- আমাদের প্রধান সাফল্য 140 কোটি মানুষের মনে বিশ্বাস ও আস্থা তৈরি করা ৷ এদেশে পরিস্থিতি কখনও বদলায় না ৷ 2014 সালে মানুষ উন্নতির জন্য মরিয়া ছিল ৷ তারা ভেবেছিল যে, দুর্নীতি সর্বদা ভারতীয় জীবনধারার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হবে ৷ সরকারের একটি ধারণা ছিল যে, তারা গরিবদের নিজেদের হালে ছেড়ে দেবে, তারা নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরা করে নেবে ৷ আর মধ্যবিত্তের কথা চিন্তা করবে না ৷ এমন পরিস্থিতিতে আমরা ক্ষমতায় এসে সরকারের কর্মসংস্কৃতি বদলে দিয়েছি ৷ প্রথমবারের মতো, মানুষ অনুভব করেছিল যে, সরকার তাদের সমস্যা ও প্রত্যাশা বুঝবে ৷ সেই মতো সেই সবকিছুর সমাধান করবে ৷
আমাদের প্রচেষ্টার কারণেই 4 কোটি মানুষ তাদের মাথার উপর ছাদ পেয়েছে ৷ 'ইজ্জতঘরে'র নামে নির্মিত শৌচালয়গুলি মহিলাদের সম্মানরক্ষা করেছে ৷ প্রতিটি পরিবার নিরাপদ ও পরিশ্রুত পানীয় জল পাচ্ছে ৷ 11 কোটি মহিলাকে গ্যাসের কানেকশন দেওয়া হয়েছে ৷ তাঁরা স্বচ্ছ পরিবেশে পুষ্টিকর খাবার তৈরি করছেন ৷ বিষাক্ত ধোঁয়া থেকে রক্ষা পেয়েছেন মহিলারা ৷ এসব জিনিসগুলি মানুষের জীবনযাত্রার মানে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে ৷ আর এই পদক্ষেপগুলির কারণে দেশের 25 কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার উপরে উঠে এসেছেন ৷
অন্যদিকে ডিজিটাল পেমেন্টের বিষয়টি দেখুন ৷ যখন আমি এটি উল্লেখ করেছিলাম, একজন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করেছিলেন, যে কীভাবে নগদ ছাড়া রাস্তার ধারের বিক্রেতারা তাদের জিনিসপত্র বিক্রি করবেন ? তাঁরা ইন্টারনেট পাবে কীভাবে ? 2024 সালে ফিরে দেখুন, এই ক্ষেত্রে রাজত্ব করার পর্যায়ে চলে গেছে ভারত ৷ আপনি আজ যে কোনও জায়গায় যান, যে কোনও দোকানে যান, কিউ-আর কোড দেখতে পাবেন ৷ এই ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবস্থা এখন পুরো বিশ্বে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে ৷
প্রশ্ন- কোন জিনিসটা এই 10 বছরে আপনাকে সন্তুষ্ট করে ?
মোদি- আমি সহজে কিছুতেই সন্তুষ্ট হই না ৷ আমি প্রতিনিয়ত দেশের জন্য কিছু করতে চাই ৷ আমি সবসময় দ্রুততার সঙ্গে কঠিন কাজ করে যেতে চাই ৷
আরও পড়ুন: