কাঙ্কের, 8 মার্চ: চারিদিকে ঘন জঙ্গল ৷ তারই মাঝে কাঁধে বন্দুক নিয়ে এগিয়ে আসছে বেশ কিছু কমান্ডো ৷ কখনও শোনা যায় ভারী বুটের আওয়াজ ৷ আবার কখনও সন্তর্পণে শত্রুকে ঘায়েল করতে প্রস্তুত তাঁরা ৷ কথা হচ্ছে কাঙ্কেরের মাওবাদী অধ্যুষিত সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গা বাস্তার নিয়ে ৷ যেখানে পুরুষ কমান্ডোদের পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বন্দুক উঁচিয়ে এলাকায় শান্তি রক্ষায় সর্বদা তৈরি প্রমীলা বাহিনী তথা বাস্তার ফাইটার্স ৷ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ইটিভি ভারত পৌঁছে গিয়েছিল মাওবাদী এলাকা বাস্তারে ৷ কর্তব্যরত এক মহিলা কমান্ডো জানান, জঙ্গলের মধ্যে একজন মেয়ের এইভাবে লড়াই করা সহজ বিষয় নয় ৷ তবে দেশের জন্য কিছু করার তাগিদ তাঁদের সেই সাহস জুগিয়েছে ৷
চারামা গ্রামের বাসিন্দা তথা মহিলা কমান্ডো কবিতা সিনহা বলেন, "এখানে চারিদিক পাহাড় দিয়ে ঘেরা ৷ সামনে রয়েছে শুধুই জঙ্গল ৷ আমাদের একাধিক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় ৷ তবে সাধারণ মানুষ ও দেশের সেবায় আমরা প্রস্তুত সবসময় ৷ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মহিলা সুরক্ষা ও সশক্তিকরণের উদ্দেশ্যে একাধিক কর্মসূচি নেওয়া হয় ৷ এমনকী, নারীদের সুরক্ষার জন্য আমরা জঙ্গলের মধ্যেও নজরদারি বজায় রাখি ৷"
তিনি আরও বলেন, "যেহেতু আমরা মেয়ে, বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন আমাদের হতেই হয় ৷ তার মধ্যে একটা বড় সমস্যা হল পোশাক পরিবর্তনের ৷ অনেক সময় এমন হয়, একই পোশাক আমাদের রোজ পরে থাকতে হয় ৷ তবে যেহেতু আমরা দেশ সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করেছি তাই এই সব অভ্যাস আমাদের করতেই হয়েছে ৷ ফলে পুরুষ কমান্ডোদের পাশাপাশি আমরাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে চলেছি ৷"
মহিলা কমান্ডো সুনীতা কুঞ্জম বলেন, "অ্যান্টি-নকশাল অপারেশনে বেরোনোর আগে আমাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ৷ কীভাবে লড়াই হবে, কীভাবে আমাদের বেরোতে হবে সবকিছু ৷ মাওবাদী দমনে যখন আমরা বেরোই তখন বড় কোনও গ্রুপ তৈরি করা হয় না ৷ ছোট ছোট গ্রুপ তৈরি করে এই ধরনের অপারেশন চলে ৷ এমনকী, এই ধরনের অপারেশনে পুরুষ কমান্ডোরাও থাকেন আমাদের সঙ্গে ৷ সবচেয়ে বড় কথা হল, যখন আমরা গভীর জঙ্গলে অভিযানে বেরোই তখন ভুলে যাই নিজেদের পরিবারকে ৷ আমার পরিবার আমাকে নিয়ে গর্বিত ৷ কারণ তাঁরা খুশি বাড়ির বৌমা মাওবাদী দমনে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছে দেখে ৷"
মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে অভিযানের সময় একাধিকবার নানা বিপদের সম্মুখীন হতে হয় মেয়েদের ৷ কমান্ডো শশীকলা সাহু জানান, "অভিযানের সময় পুরো টিমকে একসঙ্গে রাখা বড় দায়িত্ব ৷ সকলকে পুরো পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝিয়ে দেওয়া হয় ৷ পাশাপাশি অভিযানের সময় যদি কোনও কমান্ডো অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন আর এক মহিলা কমান্ডোকে তাঁকে কাঁধে করে বেসমেন্টে নিয়ে যেতে হয় ৷ শুধু তাই নয়, বর্তমানে মহিলা বাস্তার ফাইটার্সরা মাওবাদীদের কাছে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷"
তিনি আরও বলেন, "আমি একজন মহিলা কমান্ডো হিসাবে 20 বছর ধরে কাজ করছি ৷ একাধিকবার মাওবাদী হামলার সম্মুখীন হয়েছি আমি এবং আমার দল ৷ দিনের বেলার পাশাপাশি রাতের অন্ধকারেও আমাদের অভিযান করতে হয় ৷ সাহসিকতার সঙ্গে আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হয় ৷" বর্তমানে 25 বছর বয়সী বাস্তার ফাইটার্স বেদাবতি কুঞ্জমের দায়িত্ব পড়েছে জঙ্গলের ভিতরে ৷ তিনি বলেন, "ছোটবেলা থেকেই আমার দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছা ছিল ৷ সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য আমি বাস্তার ফাইটার্সে যোগ দিই ৷ এখন আমিও মাওবাদী বিরোধী অভিযানে যাই ৷ শুধুমাত্র দেশকে ভালোবেসে হাজারো বাধা-প্রতিকূলতাকে জয় করে চলেছি ৷"
বাস্তার ফাইটার্স কাদের বলে?
আসলে মহিলা কমান্ডোতে, মাওবাদী সংগঠন ত্যাগ করা মহিলাদের সঙ্গে পুলিশ স্থানীয় মেয়েদের এবং গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করেছে। যাঁরা জঙ্গলকে খুব ভালো করে চেনার পাশাপাশি স্থানীয় উপভাষা ও গ্রামীণ এলাকা সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল থাকেন। তারাই বাস্তার ফাইটার্স নামে পরিচিত ৷ এই পদ্ধতি চালু করার পর থেকে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় ভালো ফল পেয়েছে পুলিশ ৷ শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যেই স্থানীয় মানুষদের পাশাপাশি এলাকার মহিলাদের ভরসাও জিতে নিতে সক্ষম হয়েছে বাস্তার ফাইটার্স বাহিনী তথা প্রমিলা বাহিনী ৷
আরও পড়ুন
1. 'বড় দায়িত্ব পেলাম', নারী দিবসে রাজ্যসভায় মনোনয়ন পেয়ে মোদির প্রশংসা সুধা মূর্তির
2. মিলে সুর মেরা তুমহারা, নারী দিবসে পুরুষদের কী বার্তা জি20 মাতানো হাওড়ার সরোদ সিস্টার্সের