নয়াদিল্লি, 1 জুলাই: দেশে নতুন তিন ফৌজদারি আইনের অধীনে এফআইআর দায়ের হওয়ার তিন বছরের মধ্যে সব ক্ষেত্রেই সুপ্রিম কোর্ট স্তর পর্যন্ত ন্যায়বিচার দেওয়া হবে। সোমবার এমনটাই জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷ নতুন ফৌজদারি আইন কার্যকর হওয়ার পরে এক সাংবাদিক বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শাহ জানান, এই আইনি পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতে অপরাধ প্রবণতা কমার আশা করা যায় ৷
এদিন কারণ ব্যাখ্যা করে শাহ জানান, নতুন আইনের অধীনে 90 শতাংশ দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আশা রয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস), ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বিএনএসএস) এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়াম (বিএসএ) সোমবার থেকে দেশজুড়ে লাগু হয়েছে। নতুন আইনগুলি যথাক্রমে ব্রিটিশ আমলের ভারতীয় দণ্ডবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইনগুলির জায়গা নিয়েছে ৷ এরপর অমিত শাহ বলেন, "এফআইআর দায়েরের তিন বছরের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের স্তর পর্যন্ত ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে ৷" স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, তিনটি ফৌজদারি আইন প্রয়োগের সঙ্গেই ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক অপরাধমূলক বিচার ব্যবস্থাও প্রচলন হল ৷ তাঁর কথায়, "নতুন আইনগুলি একটি আধুনিক বিচার ব্যবস্থায় আনা হয়েছে, যেখানে জিরো এফআইআর, পুলিশ অভিযোগের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন, এসএমএসের মতো ইলেকট্রনিক পদ্ধতীর মাধ্যমে সমন এবং সমস্ত জঘন্য অপরাধের জন্য অপরাধ দৃশ্যের বাধ্যতামূলক ভিডিয়োগ্রাফির মতো বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ৷"
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, নতুন আইনের অধীনে একটি মোটরসাইকেল চুরির বিষয়ে প্রথম মামলাটি মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে মধ্যরাতের পর 10 মিনিটে নথিভুক্ত হয়েছে ৷ তিনি আরও জানিয়েছেন, পুলিশ তদন্তের পরে মধ্য দিল্লির কমলা মার্কেটে ঠেলাগাড়িতে জল এবং তামাকজাত পণ্য বিক্রির অভিযোগে রাস্তার এক বিক্রেতার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা খারিজও করে দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "বিচার প্রক্রিয়া সময়সীমাবদ্ধ হবে ৷ নতুন আইন বিচার ব্যবস্থার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে, দীর্ঘ বিলম্বের অবসান ঘটাবে ৷" শাহের কথায়, "নতুন আইনে শিশু ও নারী নির্যাতনের একটি অধ্যায় যুক্ত করে আরও সেই ধারার গুরুত্ব বারানো হয়েছে ৷ এ ধরনের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন সাত দিনের মধ্যে দাখিল করতে হবে। নতুন আইন অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় বিচার শেষ হওয়ার 45 দিনের মধ্যে রায় দিতে হবে ৷ প্রথম শুনানির 60 দিনের মধ্যে অভিযোগের চার্জ গঠন করতে হবে।"
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এদিন বলেন, "নাবালিকাকে গণধর্ষণের জন্য মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে নতুন আইনে। বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করার ক্ষেত্রেও নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে ৷ তার অভিভাবকের উপস্থিতিতে ধর্ষণের শিকার কোনও নারীর বয়ান রেকর্ড করতে হবে ৷" মন্ত্রকের আধিকারীকরা জানিয়েছেন, নতুন আইনের অধীনে, ভারতীয় দণ্ডবিধিতে 511টির পরিবর্তে মাত্র 358টি ধারা-সহ ওভারল্যাপিং বিভাগগুলিকে একত্রিত এবং সরলীকরণ করা হয়েছে। যেমন, ধারা 6 থেকে 52 পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত বিষয়গুলিকে একটি বিভাগের অধীনে আনা হয়েছে। আঠারোটি ধারা ইতিমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে ৷ বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, নাবালিকাদের গণধর্ষণ, গণপিটুনি এবং ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধিতে নির্দিষ্ট কোনও বিধান ছিল না ৷ এগুলি বিএনএস-এ যুক্ত করা হয়েছে ৷
বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করার পর তাকে ছেড়ে দেওয়ার মতো মামলার নতুন বিধান করা হয়েছে। নতুন আইনে একজন ব্যক্তি এখন শারীরিকভাবে থানায় যাওয়ার প্রয়োজন ছাড়াই ইলেকট্রনিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘটনার রিপোর্ট করতে পারবেন। জিরো এফআইআর প্রবর্তনের ফলে, একজন ব্যক্তি এখতিয়ার নির্বিশেষে যেকোনও থানায় এফআইআর দায়ের করতে পারেন। (পিটিআই)