দেওঘর, 19 নভেম্বর: ফের লাইনচ্যুত লোকাল ট্রেন ৷ জসিডির নওয়াদিহ রেলগেটের কাছে একটি ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে লাইনচ্যুত হল ঝাঝা থেকে বর্ধমানগামী লোকাল ট্রেন ৷ হঠাৎ রেল গেট ভেঙে একটি ট্রাক ট্রেনটিকে ধাক্কা দেওয়াতেই এই বিপত্তি ঘটে ৷
এই দুর্ঘটনার জেরে পাটনা ঝাঝা, ধানবাদ, রাঁচি, আসানসোল-সহ বহু রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় । ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার খবর পেয়ে রেলের অনেক আধিকারিক নওয়াদিহ রেলগেটে পৌঁছন ।
স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-সহ পুলিশের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ৷ ট্রাকটি ট্র্যাক থেকে সরানোর চেষ্টা চলছে । যদিও এই ঘটনায় কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন জসিডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবি ঠাকুর ।
ঘটনার খবর পেয়ে আসানসোল ডিভিশনের ডিআরএম চেতানন্দ সিংও ঘটনাস্থলে পৌঁছে গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখেন । পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, "রেলগেট পার হওয়ার সময় হঠাৎ একটি ট্রাক ভেঙে পড়ে । এরপর রেলের কর্মচারীরা চালককে সরাতে বললেও চালক জানান, ট্রাকটি ভেঙে গিয়েছে । কথোপকথনের সময়, হঠাৎ একটি ট্রেন আসে এবং যেহেতু এটি একটি বোঝাই ট্রাক ছিল, তাই এটি সরানো যায়নি । যার জেরে ট্রেনটিও লাইনচ্যুত হয় ।"
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, গেটম্যান ট্রাক চালকের সঙ্গে কথা বলে ট্রাক সরিয়ে নেওয়ার কথা বলছিলেন । কিন্তু ট্রাকটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চালক ট্রাক সরাতে পারেননি । পুরো ঘটনাটি যথাযথ তদন্ত করা হবে । সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করা হবে এবং তারপর কেন্দ্রীয় দল পুরো বিষয়টি তদন্ত করবে ।
ট্রাকের মালিক করণ কুমারের অভিযোগ, রেলগেট খোলা ছিল এবং ট্রাকটি রেলগেট পার হতেই হঠাৎ ট্রেন চলে আসে ৷ ট্রাক চালককে ট্রাক ফেলে পালিয়ে যায় এবং এই দুর্ঘটনা ঘটে । রেলওয়ে দফতরের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন ট্রাক মালিক । তবে পুরো ঘটনায় কোনও প্রাণহানি হয়নি । রেলের দল ট্র্যাক পরিষ্কার করতে ব্যস্ত ।
দুর্ঘটনার পর অনেক ট্রেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে ছিল, কিন্তু সন্ধ্যা নাগাদ একটি ট্র্যাক পরিষ্কার করা হয় এবং আটকে থাকা ট্রেনগুলোকে যেতে দেওয়া হয় । এই ঘটনার পর স্থানীয় লোকজনকেও দীর্ঘক্ষণ রেলগেটে অপেক্ষা করতে হয়েছে । অনেককে গেটের দুই পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে রেল প্রশাসনের গাফিলতির কথা বলতে দেখা গিয়েছে । পুরো ঘটনায় কার দোষ তা তদন্তের পরই পরিষ্কার হবে, তবে বর্তমানে রেল প্রশাসনের কর্মশৈলী নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ ।
ট্রেনের লাইনচ্যুত হওয়ার খবর এখন যেন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ 13 নভেম্বর তেলেঙ্গানার পেদ্দাপালি এবং রামাগুন্ডমের মধ্যে রাঘবপুরে একটি মালগাড়ি লাইনচ্যুত হয় । তার জেরে বাতিল করতে হয় 39টি ট্রেন ৷ তার আগে 9 নভেম্বর শালিমার স্টেশনে ঢোকার আগে নলপুরে লাইনচ্যুত হয় সেকেন্দ্রাবাদ-শালিমার এক্সপ্রেস ৷ যার জেরে বহু ট্রেনের যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করা হয় ৷ কিছু ট্রেন বাতিল করা হয় ও কিছুর যাত্রাপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয় ৷ তবে এর কোনওটাতেই হতাহতের খবর ছিল না ৷ তবুও বারবার এভাবে ট্রেন বা মালগাড়ি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের মুখে ভারতীয় রেল ৷ প্রাণহানি না হলেও বারংবার এহেন ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়েও ৷