নিউইয়র্ক, 25 সেপ্টেম্বর: প্রতিবেশী দেশ চিনের সঙ্গে সম্পর্কের ইতিহাসটা তিক্ত ৷ এর জন্য দায়ী আন্তর্জাতিক সীমান্ত বিতর্ক ৷ এই মুহূর্তে চিনের সেনাবাহিনী ভারত-চিন সীমান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বা লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) থেকে সরলেও আরও বড় সমস্যা সীমান্তে উত্তেজনা ৷ সেখানে শান্তির বিষয়টি সুনিশ্চিত না-হওয়া পর্যন্ত ভারত-চিন সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না ৷ নিউইয়র্কে এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউট-এ কথোপকথনে বললেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ৷
ভারত-চিন বৈরিতা যে আজকের নয় ৷ এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, 1962 সাল থেকে শুরু করে বারবার দু'দেশই সীমান্ত এলাকা নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়েছে ৷ সংঘাতের ঘটনাও ঘটেছে ৷ এখন পরিস্থিতি একটু বদলেছে ৷ সেনা সরানোর ফলে সম্পর্ক কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে ৷ জানালেন বিদেশমন্ত্রী ৷
এস জয়শঙ্কর বলেন, "চিনের সঙ্গে আমাদের যে ইতিহাস, তা সমস্যায় জর্জরিত ৷ 1962 সালে চিনের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ হয় ৷ এর 14 বছর পর ভারত-চিন দু'দেশের মধ্যে রাষ্ট্রদূত বিনিময় করে ৷ সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক করতে আরও 12 বছর সময় লেগে গিয়েছে ৷ সেটা হয়েছে 1988 সাল থেকে ৷"
এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততার মূল কারণ আন্তর্জাতিক সীমান্ত বিতর্ক ৷ সীমান্ত এবং সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে শান্তি, স্থিতি বজায় থাকলে তখনই অন্য বিষয়ে চিনের সঙ্গে সম্পর্কটা ভালো হতে পারে, পরিষ্কার জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ৷
ভারত-চিন সীমান্ত 3 হাজার 500 কিমি দীর্ঘ এবং পুরোটা নিয়েই বিতর্ক রয়েছে ৷ সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে একের পর এক চুক্তি হয়েছে চিনের সঙ্গে ৷ এই প্রসঙ্গে এস জয়শঙ্কর বলেন, "সীমান্তে শান্তি সুনিশ্চিত করতে পরপর একগুচ্ছ চুক্তি হয়েছে ৷ 1993, 1996, 2005, 2006 সালে ৷ সীমান্তে শান্তি ফেরানো নিয়ে প্রতিটি চুক্তিতে বিস্তারিত জানানো হয়েছে ৷"
এরপর জয়শঙ্কর 2020 সালে এলএসি-তে গালওয়ানে ভারত ও চিনের সেনার মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার কথা উত্থাপন করেন ৷ বিদেশ মন্ত্রী বলেন, "2020 সালে, তখন কোভিডের সময় ৷ চিন দু'দেশের মধ্যে সীমান্ত সংক্রান্ত চুক্তিগুলি লঙ্ঘন করে ৷ সীমান্তে লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল-এ (এলএসি) বিশাল সেনাবাহিনী পাঠায় ৷ আমরা আমাদের মতো করে এর জবাব দিয়েছি ৷ দুই দেশের সেনাবাহিনী কাছাকাছি চলে আসায় অঘটন ঘটার আশঙ্কা ছিলই ৷ আর সেটাই হল ৷ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ৷ দু'তরফেই বেশ কয়েকজন সেনার মৃত্যু হয়েছে ৷"
তিনি আরও বলেন, "তাই যতদিন না পর্যন্ত সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠা হচ্ছে এবং এটা সুনিশ্চিত হচ্ছে যে দু'দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তিগুলি ফের কার্যকর ও পুনরুদ্ধার হবে, ততদিন পর্যন্ত চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া মুশকিল ৷" এই মুহূর্তে ভারত ও চিন- দু'তরফেরই সেনা মোতায়েন রয়েছে ৷ এলএসি থেকে সেনাদের সরিয়ে তাঁদের ক্যাম্প অর্থাৎ ঘাঁটিতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে, জানালেন বিদেশমন্ত্রী ৷
বর্তমানে ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যা প্রসঙ্গে এস জয়শঙ্কর বলেন, "এই ঝামেলার 75 শতাংশ মিটেছে ৷ এটা বলছি, কারণ এখন সীমান্ত এলাকা থেকে চিন শুধুমাত্র সেনা সরিয়েছে ৷ সমস্যার একটা পর্বের সমাধান হয়েছে ৷ এই মুহূর্তে চিন্তার বিষয়, সীমান্তে প্রহরা ৷ দু'পক্ষই কীভাবে এলএসি-তে পাহারা দেবে, সেই বিষয়টা ৷ 2020 সালের পর এলএসি-তে টহলদারি ব্যবস্থাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷ কয়েকটি বিতর্কিত পয়েন্টে এই প্রহরার ব্যাপারটারও সমাধান প্রয়োজন ৷"
সেনা সরানোর পরে আরও বড় চ্যালেঞ্জে সীমান্তে সংঘর্ষের ঘটনা যেন আর না-ঘটে ৷ ভারত-চিন দু'পক্ষেরই বিশাল সেনা রয়েছে এলএসিতে ৷ 2020 সালের সংঘর্ষের ঘটনার ফলে ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্কের যথেষ্ট অবনতি হয়েছে ৷ কিন্তু সীমান্ত এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় শান্তি নিশ্চিত না হলে দু'দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক হবে না, জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী ৷ অন্য আরও বিষয় আছে, যেমন ভারত ও চিন- দু'টি দেশ প্রতিবেশী ৷ এছাড়া দু'দেশের জনসংখ্যা 100 কোটির বেশি ৷ দু'টি দেশই বিশ্বে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে ৷ বিশ্বে একটি জ্বলন্ত সমস্যা ৷