নয়াদিল্লি, 11 মার্চ: এই আন্তর্জাতিক মহিলা বিচারপতি দিবসে, বিচার বিভাগ এখনও অনেকাংশে পুরুষদের ক্লাব ৷ লিঙ্গ সমতার নিরিখে বিচার ব্যবস্থার প্রশাসন ও আদালত অনেকটাই পিছিয়ে ৷ যেখানে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে 34 জন বিচারপতির মধ্যে মাত্র তিন জন মহিলা বিচারপতি রয়েছেন ৷ আর দেশের 25টি হাইকোর্টের মধ্যে মাত্র দু’টিতে মহিলা প্রধান বিচারপতি আছেন ৷
মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের মহিলা বিচারপতি রুথ ব্যাডার গিন্সবার্গকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের 9 জন বিচারপতির মধ্যে কতজন মহিলা হওয়া উচিত ৷ তিনি জবাব দিয়েছিলেন, নয় জন ৷ গিন্সবার্গ বলেছিলেন, "সুপ্রিম কোর্টে 9 জন পুরুষ বিচারপতি ছিলেন এবং কেউ কখনও এটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি ৷" তিনি 2020 সালে প্রয়াত হন ৷
মহিলা বিচারপতি এবং আইনজীবীরা বাধার সম্মুখীন হতে হয়
এটা স্পষ্ট যে মহিলা বিচারপতি এবং আইনজীবীরা বেশ কিছু কাঠামোগত বাধার সম্মুখীন হন ৷ যেমন, জেন্ডার স্টিরিওটাইপ, বৈষম্য, হয়রানি এবং অপর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক ও পরিকাঠামোগত সহায়তা ৷ রাষ্ট্রসংঘের মতে, মহিলা বিচারপতিরা বিচার ব্যবস্থায় আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে আসেন ৷ তাঁরা বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেন এবং নেতৃত্বের ভূমিকায় মহিলারা ষড়যন্ত্রের উৎসগুলিকে নষ্ট করতে সাহায্য করে ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেন ৷
আত্মদর্শনের সুযোগ
আন্তর্জাতিক মহিলা বিচারপতি দিবস প্রাতিষ্ঠানিক এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতাগুলির বিরুদ্ধে আত্মদর্শনের একটি সুযোগ দেয় ৷ যে প্রতিবন্ধকতাগুলি সারা দেশে সাংবিধানিক আদালতে বিচার ব্যবস্থার প্রশাসনে নারী-পুরুষ সমানাধিকের বাধা তৈরি করে ৷ এমনকি বিচার বিভাগে মহিলাদের ঊর্ধ্বমুখী গতিশীলতায় বাধাসৃষ্টিকারী কারণগুলি কী, তা সামনে নিয়ে আসার সুযোগ দেয় ৷ আদালতে মহিলা বিচারপতিদের হতাশাজনক উপস্থিতির পটভূমিতে, এটা স্পষ্ট যে কলেজিয়াম ব্যবস্থা বৈচিত্র্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে কার্যকরী নয় ৷
এছাড়াও, সুপ্রিম কোর্টে উন্নীত হওয়া মহিলা বিচারপতিদের কার্যকালের মেয়াদও স্বল্প ৷ বিচারপতি বিভি নাগারথনা, যিনি 2021 সালের অগস্টে সুপ্রিম কোর্টে নিযুক্ত হয়েছিলেন, তাঁর 2027 সালের 29 অক্টোবর পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসাবে মেয়াদ রয়েছে ৷ যা তাঁর সমসাময়িক পুরুষ বিচারপতিদের থেকে একেবারে আলাদা ৷ ফলে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি নাগারথনার মেয়াদ এক মাসের কিছু বেশি সময়ই থাকবে ৷
হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে মহিলা বিচারপতির সংখ্যা
দেশের সাংবিধানিক আদালতগুলি আইনসভা বা সংসদ নয় ৷ যেখানে লিঙ্গ ভারসাম্যহীনতা মোকাবিলায়, মহিলাদের একটি নির্দিষ্ট মাত্রার উপস্থিতি যথেষ্ঠ ৷ সুপ্রিম কোর্টে 34 জন বিচারপতি রয়েছেন এবং এটা বলা স্বেচ্ছাচারিতা হবে না যে, অদূর ভবিষ্যতে কোনও সময়ে, সেরা আইনী মস্তিষ্ক হিসেবে শীর্ষ আদালতের বেঞ্চে মহিলা বিচারপতির সংখ্যা দুই অঙ্কে পৌঁছবে ৷ যেখানে বর্তমানে কাজ করছেন মাত্র তিনজন মহিলা বিচারপতি ৷ কিন্তু, হাইকোর্টগুলির ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভয়াবহ ৷ দেশের 25টি হাইকোর্টের 1114 জন বিচারপতির মধ্যে মাত্র 111 জন মহিলা বিচারপতি রয়েছেন ৷ যা 10 শতাংশের সামান্য বেশি ৷
মহিলা নেতৃত্বকে উৎসাহ প্রদান
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিমা কোহলি, 2024 সালের মার্চ মাসে, আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশন এবং মিডিয়েশন সেন্টার আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়েছিলেন ৷ সেখানে তিনি বলেছিলেন, মহিলাদের নেতৃত্বের পদে উন্নীত করা হলে, তাদের প্রকৃত মূল্যকে স্বীকৃতি দেওয়া যাবে ৷ যেখানে তারা সিন্ধান্ত গ্রহণকারী হিসেবে নিজেদের মেলে ধরতে পারবেন ৷
জানুয়ারি 2024-এ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগারথনা বলেছিলেন, বিচার বিভাগে মহিলাদের অংশগ্রহণ কেবল একটি সাংবিধানিকভাবে বাধ্যতামূলক নয় বরং শক্তিশালী, স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, কার্যকর এবং বিশ্বাসযোগ্য বিচার প্রক্রিয়ার লক্ষ্য পূরণের জন্য একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ৷ জাতীয় রাজধানীতে 28 তম বিচারপতি সুনন্দা ভান্ডারে স্মারক বক্তৃতায়, বিচারপতি নাগারথনা জোর দিয়েছিলেন যে, বিচারের বেঞ্চে আরও বেশি করে মহিলাদের অংশগ্রহণ ভারতে ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ায় আরও কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে ৷
2023 সালের নভেম্বরে, ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, ভীমরাও আম্বেদকরের আইন অনুশীলনের 100 তম বছর উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় বলেছিলেন, বিচার বিভাগের শীর্ষস্তরে মহিলাদের কম প্রতিনিধিত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন ৷ তিনি জানিয়েছিলেন, এই সমস্যার প্রতিকার রাতারাতি করা সম্ভব হবে না ৷ মহিলা বিচারপতিদের বিচার বিভাগের শীর্ষস্তরে উপলব্ধ করতে একটি পুল তৈরি করা হয়েছে ৷
আরও পড়ুন: