নয়াদিল্লি, 6 অক্টোবর: গত জানুয়ারির মাঝামাঝি নীতি আয়োগ একটি পরিসংখ্যান সামনে এনেছিল ৷ ওই পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ন’বছরে ভারতে 25 কোটি মানুষ দারিদ্রতার সীমার ঊর্ধ্বে চলে এসেছে ৷ নীতি আয়োগের সদস্য রমেশ চাঁদ ও সিনিয়র পরামর্শদাতা যোগেশ সুরি ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করেন ৷ এটা তৈরি করতে তাঁরা ইউনাইটেড নেশনস ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম বা ইউএনডিপি, অক্সফোর্ড পলিসি ও হিউম্যান ডেভলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ বা ওপিএইচডিআই-এর তথ্যের সহায়তা নেন ৷
এই পরিসংখ্যান নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রা অনুষ্ঠানে এই প্রসঙ্গ তোলেন ৷ উপভোক্তাদের কাছে সরকারি সুবিধা পাওয়ার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আসায় এটা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন ৷ যদিও কংগ্রেস নীতি আয়োগের এই রিপোর্টকে গুরুত্ব দিতে নারাজ ৷ তাদের বক্তব্য, এই পরিসংখ্যানের কোনও ভিত্তি নেই ৷ আসলে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প থেকে বহু মানুষকে বাদ দিতে চায় ৷ তাই এই কৌশল নিয়েছে ৷
ফলে এই নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷ কেন্দ্রের মোদি সরকারকে ভারতকে 2047 সালের মধ্যে বিকশিত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ৷ দারিদ্রতা ছাড়াই কি সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো হবে ? বিশেষজ্ঞদের প্রশ্নের উত্তর কেন মেলে না ? পরিসংখ্যান প্রকাশে রাজনৈতিক প্রভাব কি বেড়ে যাচ্ছে ?
দারিদ্রতার মাপকাঠি তৈরিতে ভুল কোথায় হচ্ছে ? নীতি আয়োগের বক্তব্য অনুযায়ী, ন্যাশনাল মাল্টিডাইমেনশনাল প্রভার্টি ইনডেক্স বা এনএমপিআই তিনটি সূচকের উপর নির্ভর করে ৷ সেগুলি হল স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মান ৷ এই সূচক তৈরি হয়েছে আরও 12টি সূচকের উপর ভিত্তি করে ৷
অর্থনীতিবিদ জিন ড্রিজ-সহ অনেকেই এনএমপিআই-এর মাধ্যমে দারিদ্রতা নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ৷ জিন ড্রিজ বলেন, “এনএমপিআই স্বল্পমেয়াদী ক্রয় ক্ষমতার কোনও সূচক অন্তর্ভুক্ত করে না । সুতরাং, প্রকৃত মজুরিতে মন্থর বৃদ্ধির সাম্প্রতিক প্রমাণ-সহ অন্যান্য তথ্য-সহ আমাদের অবশ্যই এই ডেটা পড়তে হবে । এই ডেটা পরিপূরক হতে পারে ৷ কিন্তু ভারতে দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া থাকা উপভোক্তা ব্যয় সমীক্ষা থেকে দারিদ্র্যের অনুমানের বিকল্প হতে পারে না ।’’
তাছাড়া এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সের কোনও মিল নেই ৷ প্রশ্ন উঠছে, ভারতে দারিদ্রতা দূরীকরণে এত ভালো কাজ হলে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স ভারতের পরিস্থিতি এত খারাপ দেখাচ্ছে কেন ? 2023 সালে 125 দেশের তালিকার এই ইনডেক্সে ভারতের স্থান ছিল 111-তে৷ প্রশ্ন আরও আছে ৷ তা হল - যেখানে দেশের 81 কোটি মানুষের জন্য 11.8 লক্ষ কোটি টাকা খরচ করতে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার জন্য, সেখানে ভারত কীভাবে দারিদ্রতা দূরীকরণ নিয়ে ইউএন-এসডিজি-1 এর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে ?
অন্যদিকে 2011 সালের পর থেকে ভারত দারিদ্রতা সংক্রান্ত কোনও বিস্তারিত তথ্যই প্রকাশ করেনি ৷ ফলে বিস্তারিত তথ্য ছাড়া এই নিয়ে যেকোনও বিতর্কই অর্থহীন৷ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ক্ষমতার অপব্যবহার ছিল বৈষম্যের প্রাথমিক উৎস । শিক্ষায় বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ, যা গণতন্ত্রের মূল চাবিকাঠি ৷ কারণ, এটা হল গভীর অর্থে প্রত্যেককে সুযোগ দেওয়া ৷ অন্যদিকে শিক্ষা অর্থহীন হয়ে যেতে পারে যদি শ্রমবাজার চাকরি না পাওয়া যায়... ক্ষমতার অতি-কেন্দ্রীকরণ দায়িত্বহীনতার জন্ম দেয় এবং অবশেষে এটি আরও দারিদ্র্যের দিকে নিয়ে যায় ।’’ তিনি আরও মনে করেন, ভারতের জাতীয় নীতি কাঠামো শুধু অসাম্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধই করেনি, বরং এটি সম্পর্কে কোনও বাস্তব আলোচনাও নেই ।
এদিকে উচ্চ আয় ও সম্পদের বৈষম্যের দিক থেকে ভারত অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় শীর্ষস্থানে রয়েছে ৷ অক্সফ্যাম ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী পাঁচ শতাংশ ভারতীয় দেশের 60 শতাংশের বেশি সম্পদের মালিক ৷ আর 50 শতাংশ জনসংখ্যার কাছে মাত্র 3 শতাংশ সম্পদ রয়েছে । সেই বৈষম্য কিভাবে দূর হবে, তার দিশা কি আছে ? প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা ৷
আরও পড়ুন: