নয়াদিল্লি, 22 মার্চ: আবগারি নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতারের পরই রাজধানীতে রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে ৷ এবার সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আম আদমি পার্টি জানিয়েছে, কেজরিওয়াল তাঁর দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালন করে যাবেন ৷ এমনকী যদি তাঁকে জেলও থাকতে হয়, তবুও এর অন্যথা হবে না ৷ কিন্তু জেলে বসে কি আদৌ মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ?
সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, কেজরিওয়ালের পক্ষে জেল থেকে সরকার চালানো এক কথায় অসম্ভব ৷ দেশে আগে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি বলেও জানাচ্ছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা ৷ যদি রাজ্যে নতুন করে মুখ্যমন্ত্রী না হন তবে এর ফলে অবশ্যই সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে ৷ এর পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা এও জানাচ্ছেন, একজন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতারের ফলে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে সেই বিষয়ে সংবিধানে কোনও স্পষ্ট নির্দেশ নেই ৷ এমন কোনও আইনও নেই যার জেরে গ্রেফতারের পরে মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন ৷ তবে এক্ষেত্রে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রী যদি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন তবে অবশ্যই তিনি আর পদে থাকতে পারবেন না ৷
সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং লোকসভার প্রাক্তন মহাসচিব পিডিটি আচার্য জানান, এমন পরিস্থিতিতে আইনে কোনও কিছু বলা নেই ৷ তাঁর কথায়, "চারটি পরিস্থিতিতে একজন মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করেন- সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন হারালে, দল থেকে সরানো হলে, স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে এবং রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলে ৷"
আচার্য আরও বলেন, "জেল থেকে সরকার চালানো কঠিন। একজন মুখ্যমন্ত্রীকে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করতে হয় ৷ জেল থেকে তিনি কীভাবে তত্ত্বাবধানের ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন ? সরকারের বিভিন্ন ফাইল তাঁর কাছে পাঠাতে হবে। পদমর্যাদা অনুসারে সরকারের প্রতিদিনের কাজকর্মও তাঁকেই পর্যবেক্ষণ করতে হবে ৷ সুতরাং জেল থেকে সরকার চালানো সম্ভব নয় ৷"
পিডিটি আচার্যের মতে, মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হলে তাঁকে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করতে এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কাউকে মনোনীত করতে হবে। ঐতিহাসিকভাবে কোনও রাজনীতিবিদ জেল থেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সরকার পরিচালনা করেছেন ? এমন প্রশ্ন করা হলে, সিনিয়র আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী বলেন, "সরকারের প্রয়োজনে একজন মুখ্যমন্ত্রীকে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হয় ৷ জেলে বসে তা হবে না ৷"
পালটা তিনি প্রশ্ন তোলেন, "কেজরিওয়াল কীভাবে দিনের পর দিন চালাবেন ? জেল থেকে দিনের কাজ চালাবেন কীভাবে ?" দ্বিবেদী অবশ্য জোর দিয়ে এও বলেছেন, "সংবিধানে নির্দিষ্টভাবে কিছু বলা নেই। তবে জনসাধারণের মধ্যে নৈতিকতার একটি উপাদান রয়েছে,। সেই কারণে তাঁকে নিজের জায়গায় অন্য কাউকেে দায়িত্বে আনা উচিত।"
আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী আরও জানান, মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করতে পারেন। ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের ক্ষেত্রে যেমনটি ঘটেছে ৷ যদি কেজরিওয়াল জেল থেকে কাজ চালিয়ে যান, এটি একটি সাংবিধানিক ভাঙনের সমান ৷ সরকার সম্মিলিতভাবে বিধানসভার কাছে দায়বদ্ধ ৷" আইনের উদ্ধৃতি দিয়ে দিল্লির ন্যাশনাল ক্যাপিটাল টেরিটরি (সংশোধন) আইন 2023 যা জাতীয় রাজধানী সিভিল সার্ভিস অথরিটি (এনসিসিএসএ)-কে জাতীয় রাজধানীতে আমলাদের বদলি পরিচালনা করার ক্ষমতা দেয় ৷ এতে মুখ্যমন্ত্রীও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন ৷ সঙ্গে মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্র দফতরের মুখ্য সচিবও রয়েছেন। তিনি বলেন, "কর্তৃপক্ষকে কর্মকর্তাদের বদলি, পোস্টিং এবং শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে লেফটেন্যান্ট গভর্নরের (এল-জি) কাছে সুপারিশ করতে হবে ৷ এটি কীভাবে কাজ করবে মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে ?"
চাণক্য ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটি (সিএনএলইউ) পটনার উপাচার্য অধ্যাপক ফয়জান মুস্তফা বলেন, "কোনও মুখ্যমন্ত্রী জেল থেকে সরকার চালাতে পারেন না। দেশের ইতিহাসে এমনটা কখনও হয়নি। যদি কেউ 24 ঘন্টার বেশি জেলে থাকে তবে তাঁকে সাসপেন্ড করা হবে ৷” তিনি জোর দিয়েছেন, এটি একটি খুব ভুল ধারণা যে কেজরিওয়াল জেল থেকে সরকার চালাতে পারেন ৷ তিনি যদি চালিয়ে যান তবে লেফটেনেন্ট গভর্নর কেন্দ্রীয় সরকারকে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করার সুপারিশ করতে পারেন।
আরও পড়ুন
'নির্বাচনে নাক গলাচ্ছেন রাজ্যপাল', কমিশনে নালিশ তৃণমূলের
'কেজরি দুর্নীতির কিংপিন', 10 দিন হেফাজতের আবেদনে নির্দেশ রিজার্ভ রাখল আদালত