ETV Bharat / bharat

বিহারের এই গ্রাম হোলি উদযাপন করে না, ইতিহাস শুনলে অবাক হবেন আপনিও - Holi Banned Village

Holi Banned Village in Bihar: সারাদেশ হোলিতে মাতলেও বিহারের এই গ্রামে হোলি যেন একটা অভিশাপ ৷ হোলিকা দহন পালিত হলেও রং খেলা নিষিদ্ধ ৷ কিন্তু কেন ?

Etv Bharat
Etv Bharat
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Mar 26, 2024, 1:02 PM IST

বিহারের এই গ্রামে হোলি উদযাপন না হওয়া নিয়ে গ্রামবাসীদের বক্তব্য

মুঙ্গের, 26 মার্চ: সারাদেশে প্রায় সব জায়গাতেই অত্যন্ত সমারোহের সঙ্গে উদযাপিত হয় রঙের উৎসব । বিহারেও অন্যতম প্রধান উৎসবের মধ্যে পড়ে হোলি । এই সময় রং খেলার পাশাপাশি বাড়িতে অনেকরকমের খাবার তৈরি হয় ৷ কিন্তু এই হোলি বিহারের মুঙ্গের জেলার এক গ্রামে যেন অভিশাপ । এখানে কেউ হোলি উদযাপনের চেষ্টা করলে তার সর্বনাশ হয় ।

মুঙ্গের জেলা সদর থেকে প্রায় 55 কিলোমিটার দূরে আসারগঞ্জ ব্লক এলাকার সাজুয়া গ্রাম ৷ এখানে প্রায় 150টি বাড়ি রয়েছে এবং সব মিলিয়ে 700 লোক বাস করে ৷ কিন্তু কেউ হোলি উদযাপন করে না । রং খেলা তো দূর অস্ত, হোলি উৎসবের জন্য কোনও খাবারও বানানো হয় না এই গ্রামে ৷ এদের কাছে হোলি উদযাপন করা যেন পাপ ৷

পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, এখানকার লোকেরা মনে করে যে হোলি উদযাপন গ্রামে বিপর্যয় ডেকে আনে ৷ তাই এখানে বসবাসকারী লোকেরা রঙের উৎসব থেকে দূরে থাকে । এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে, পুরো ফাগুন মাসে এই গ্রামের কোনও বাড়িতে যদি কড়াইতে কোনও পিঠে বা পোয়া জাতীয় কোনও খাবার তৈরি করা হয় বা কেউ যদি তা করার চেষ্টা করে তাহলে সেই সংশ্লিষ্ট পরিবারের উপর দুর্ভোগ নেমে আসে ৷ লোকে এই গ্রামটিকে সতীস্থান গ্রাম বলেও ডাকে ।

Satisthan Village
সতীস্থান গ্রাম

বিষয়টি জানার জন্য গ্রামবাসী গোপাল সিংহের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় 200 বছর আগে হোলিকা দহনের দিন এই গ্রামে সতী নামের এক মহিলার স্বামীর মৃত্যু হয়েছিল । কথিত আছে যে, সতী তার স্বামীর সঙ্গে নিজেকে পুড়িয়ে সতীদাহ করার জন্য জোর করেছিলেন, কিন্তু গ্রামবাসীরা তাকে তা করতে দেয়নি ।

কিন্তু সতী তার জেদের উপর অনড় ছিলেন । লোকেরা তাঁকে একটি ঘরে তালাবদ্ধ করার পর তাঁর স্বামীর দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল ৷ কিন্তু সতীর স্বামীর দেহ তোলার সময় বারবার নিচে পড়ে যেতে থাকে । গ্রামবাসীরা ঘরের দরজা খুলে সতীকে বের করে আনলে তিনি দৌড়ে স্বামীর কাছে যান এবং তাঁর সঙ্গে নিজেকে পুড়িয়ে সতীদাহ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন । এরপর গ্রামবাসীরা গ্রামেই একটি চিতা তৈরি করে ৷ তখন হঠাৎ দেখা যায় স্ত্রীর হাতের কনিষ্ঠ আঙুল থেকে আগুন বের হচ্ছে এবং একই আগুনে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে পুড়ে যায় ।

এরপর কিছু গ্রামবাসী গ্রামে সতীর মন্দির তৈরি করে এবং তাঁকে সতীমাতা মনে করে পুজো করা শুরু করে ৷ লোকেরা এই গ্রামের নাম দেয় সতীস্থান ৷ যা পরে সতীস্থান নামেই বিখ্যাত হয় । তারপর থেকে এই গ্রামে হোলি পালিত হয় না ।

গ্রামবাসী কৈলাশ সিং জানান, এই গ্রামের মানুষ ফাগুন পার হওয়ার পর 14 এপ্রিল হোলিকা দহন পালন করে । আমরা হোলি উদযাপন করি না । এই প্রথা আমাদের পূর্বপুরুষদের সময় থেকে চলে আসছে এবং কেউ যদি এই পুরো মাসে পিঠে বা ওই জাতীয় কিছু তৈরি করার চেষ্টা করে তবে তার বাড়িতে আপনা আপনি আগুন ধরে যায় । এ ধরনের ঘটনা বহুবার ঘটেছে বলেও জানা গিয়েছে ।

আরেক গ্রামবাসী মহেশ প্রসাদ সিং বলেন,"আমাদের গ্রামে কেউ হোলি উদযাপন করার চেষ্টা করে না । আমাদের গ্রামে সব বর্ণের মানুষ আছে কিন্তু কেউ হোলি উদযাপন করে না । যে ঐতিহ্য চলে আসছে তা সবাই মেনে নেয় । অন্যান্য দিনের মতো, লোকেরা হোলিতেও সাধারণ খাবারই খায় । আমরা সতীস্থান গ্রামের মানুষ জেনেও গ্রামের বাইরে গেলেও কেউ আমাদের গায়ে রঙ বা আবির দেয় না ।

আরও পড়ুন :

  1. গ্রামে দীপাবলি উদযাপনে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা, শিশুরা বাজি পোড়ানোর বায়না করলে পাঠানো হয় মামাবাড়ি
  2. টানা 42 দিন বন্ধ টিভি-ফোন-চাষবাস, পাহাড়ি গ্রামটি মকর সংক্রান্তি থেকেই নিশ্চুপ !
  3. করবা চৌথ পালন করলে মৃত্যু হবে স্বামীর ! 250 বছর ধরে এমনই বিশ্বাস মথুরার গ্রামে

বিহারের এই গ্রামে হোলি উদযাপন না হওয়া নিয়ে গ্রামবাসীদের বক্তব্য

মুঙ্গের, 26 মার্চ: সারাদেশে প্রায় সব জায়গাতেই অত্যন্ত সমারোহের সঙ্গে উদযাপিত হয় রঙের উৎসব । বিহারেও অন্যতম প্রধান উৎসবের মধ্যে পড়ে হোলি । এই সময় রং খেলার পাশাপাশি বাড়িতে অনেকরকমের খাবার তৈরি হয় ৷ কিন্তু এই হোলি বিহারের মুঙ্গের জেলার এক গ্রামে যেন অভিশাপ । এখানে কেউ হোলি উদযাপনের চেষ্টা করলে তার সর্বনাশ হয় ।

মুঙ্গের জেলা সদর থেকে প্রায় 55 কিলোমিটার দূরে আসারগঞ্জ ব্লক এলাকার সাজুয়া গ্রাম ৷ এখানে প্রায় 150টি বাড়ি রয়েছে এবং সব মিলিয়ে 700 লোক বাস করে ৷ কিন্তু কেউ হোলি উদযাপন করে না । রং খেলা তো দূর অস্ত, হোলি উৎসবের জন্য কোনও খাবারও বানানো হয় না এই গ্রামে ৷ এদের কাছে হোলি উদযাপন করা যেন পাপ ৷

পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, এখানকার লোকেরা মনে করে যে হোলি উদযাপন গ্রামে বিপর্যয় ডেকে আনে ৷ তাই এখানে বসবাসকারী লোকেরা রঙের উৎসব থেকে দূরে থাকে । এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে, পুরো ফাগুন মাসে এই গ্রামের কোনও বাড়িতে যদি কড়াইতে কোনও পিঠে বা পোয়া জাতীয় কোনও খাবার তৈরি করা হয় বা কেউ যদি তা করার চেষ্টা করে তাহলে সেই সংশ্লিষ্ট পরিবারের উপর দুর্ভোগ নেমে আসে ৷ লোকে এই গ্রামটিকে সতীস্থান গ্রাম বলেও ডাকে ।

Satisthan Village
সতীস্থান গ্রাম

বিষয়টি জানার জন্য গ্রামবাসী গোপাল সিংহের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় 200 বছর আগে হোলিকা দহনের দিন এই গ্রামে সতী নামের এক মহিলার স্বামীর মৃত্যু হয়েছিল । কথিত আছে যে, সতী তার স্বামীর সঙ্গে নিজেকে পুড়িয়ে সতীদাহ করার জন্য জোর করেছিলেন, কিন্তু গ্রামবাসীরা তাকে তা করতে দেয়নি ।

কিন্তু সতী তার জেদের উপর অনড় ছিলেন । লোকেরা তাঁকে একটি ঘরে তালাবদ্ধ করার পর তাঁর স্বামীর দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল ৷ কিন্তু সতীর স্বামীর দেহ তোলার সময় বারবার নিচে পড়ে যেতে থাকে । গ্রামবাসীরা ঘরের দরজা খুলে সতীকে বের করে আনলে তিনি দৌড়ে স্বামীর কাছে যান এবং তাঁর সঙ্গে নিজেকে পুড়িয়ে সতীদাহ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন । এরপর গ্রামবাসীরা গ্রামেই একটি চিতা তৈরি করে ৷ তখন হঠাৎ দেখা যায় স্ত্রীর হাতের কনিষ্ঠ আঙুল থেকে আগুন বের হচ্ছে এবং একই আগুনে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে পুড়ে যায় ।

এরপর কিছু গ্রামবাসী গ্রামে সতীর মন্দির তৈরি করে এবং তাঁকে সতীমাতা মনে করে পুজো করা শুরু করে ৷ লোকেরা এই গ্রামের নাম দেয় সতীস্থান ৷ যা পরে সতীস্থান নামেই বিখ্যাত হয় । তারপর থেকে এই গ্রামে হোলি পালিত হয় না ।

গ্রামবাসী কৈলাশ সিং জানান, এই গ্রামের মানুষ ফাগুন পার হওয়ার পর 14 এপ্রিল হোলিকা দহন পালন করে । আমরা হোলি উদযাপন করি না । এই প্রথা আমাদের পূর্বপুরুষদের সময় থেকে চলে আসছে এবং কেউ যদি এই পুরো মাসে পিঠে বা ওই জাতীয় কিছু তৈরি করার চেষ্টা করে তবে তার বাড়িতে আপনা আপনি আগুন ধরে যায় । এ ধরনের ঘটনা বহুবার ঘটেছে বলেও জানা গিয়েছে ।

আরেক গ্রামবাসী মহেশ প্রসাদ সিং বলেন,"আমাদের গ্রামে কেউ হোলি উদযাপন করার চেষ্টা করে না । আমাদের গ্রামে সব বর্ণের মানুষ আছে কিন্তু কেউ হোলি উদযাপন করে না । যে ঐতিহ্য চলে আসছে তা সবাই মেনে নেয় । অন্যান্য দিনের মতো, লোকেরা হোলিতেও সাধারণ খাবারই খায় । আমরা সতীস্থান গ্রামের মানুষ জেনেও গ্রামের বাইরে গেলেও কেউ আমাদের গায়ে রঙ বা আবির দেয় না ।

আরও পড়ুন :

  1. গ্রামে দীপাবলি উদযাপনে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা, শিশুরা বাজি পোড়ানোর বায়না করলে পাঠানো হয় মামাবাড়ি
  2. টানা 42 দিন বন্ধ টিভি-ফোন-চাষবাস, পাহাড়ি গ্রামটি মকর সংক্রান্তি থেকেই নিশ্চুপ !
  3. করবা চৌথ পালন করলে মৃত্যু হবে স্বামীর ! 250 বছর ধরে এমনই বিশ্বাস মথুরার গ্রামে
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.