দেরাদুন: 2013 সালের কেদারনাথ বিপর্যয় হোক অথবা 2021সালের ঋষিগঙ্গা-ধৌলিগঙ্গা হিমবাহী তুষারঝড় বা সাম্প্রতিক অতীতে ঘটে যাওয়া সিকিমের দক্ষিণ লোনক হ্রদের বিপর্যয় ৷ এরকম একাধিক ঘটনা বারবার পাহাড়ের বুকে থাকা হিমবাহ থেকে তৈরি হ্রদে বিপদের জানান দিয়েছে ৷ সেই ঘটনা প্রবাহ থেকে শিক্ষা নিয়েই উত্তরাখণ্ড সরকার বিশেষজ্ঞদের দুটি দল গঠন করেছে ৷ যারা রাজ্যের পাঁচটি হিমবাহী হ্রদের ঝুঁকির মূল্যায়ণ করবেন ৷ পাশাপাশি পর্যালোচনা করা হবে এই হ্রদগুলি কতটা বন্যার ঝুঁকি সামনে আনছে ৷ উত্তরাখণ্ডের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব, রঞ্জিত সিনহা জানিয়েছেন এই টিম চলতি মে-জুন মাসেই এই সকল হ্রদ বা লেকের ঝুঁকির উপর কাজ শুরু করবে ৷
তিনি জানিয়েছেন হিমালয় প্রসারিত রাজ্যে মোট 188 হিমবাহী হ্রদ রয়েছে ৷ যার মধ্যে 13টি হ্রদ রয়েছে উত্তরাখণ্ডে ৷ হ্রদের এই পার্থক্যগুলি করা হয়েছে মূলত, সেগুলি কতটা ঝুঁকিপ্রবণ বা বন্যার আশঙ্কা তৈরি করছে তা দেখে ৷ 2021 সালের উত্তরাখণ্ডে চামোলিতে হিমবাহী হ্রদ বিস্ফোরণের সাক্ষী থেকেছে গোটা রাজ্য ৷ ঋষিগঙ্গার উপর একটি ছোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আকস্মিক বন্যায় মৃত্যু হয়েছিল একাধিক মানুষের ৷
হিমবাহী হ্রদ আউটবার্স্ট ফ্লাড (GLOF) আসলে কী? এর মানে হল, বড় বড় জলরাশি হিমবাহ গলে জমি ক্ষয় করে ৷ তারপর সেই ক্ষয় হওয়া জায়গায় হিমবাহের গলে যাওয়া জল পূর্ণ হতে থাকে। এগুলি বড় আকারের হয়। সঙ্গে অত্যন্ত বিপজ্জনকও হয়ে থাকে। কারণ হিমবাহের হ্রদগুলি বেশিরভাগই শিলার ধ্বংসাবশেষ এবং তার পলি দিয়ে তৈরি হয়। তার চারপাশের সীমানা ভেঙে গেলে, পাহাড়ের পাশ দিয়ে প্রচুর পরিমাণে জল নেমে আসে, যা নিম্নধারার এলাকায় বন্যার কারণ হতে পারে। একে হিমবাহী হ্রদ আউটবার্স্ট ফ্লাড বা হিমবাহী হ্রদ ভাঙা বন্যা অথবা জিএলওএফ বলে। অনেক সময় এই বন্যা হতে পারে বরফের ড্যাম বা মোরাইন ড্যাম ভেঙে ৷ উত্তরাখণ্ডের 13টি হ্রদবাহী লেকগুলিকে আবার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে ৷ যার মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে 'এ', 'বি', 'সি' ৷ এই 'এ' ক্যাটাগরি হল অত্যন্ত সংবেদনশীল ৷ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সঙ্গে অনলাইন মিটিংয়ের পর এমনটাই জানিয়েছেন রঞ্জিত সিনহা ৷
উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, সিকিম, জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখ এবং অরুণাচল প্রদেশ-সহ হিমালয় রাজ্যগুলির মুখ্য সচিব এবং আধিকারিকরাও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সিনহা জানিয়েছেন যে উত্তরাখণ্ডের 13টি হিমবাহী হ্রদের মধ্যে পাঁচটি 'এ' ক্যাটাগরিতে পড়ে, চারটি 'বি' ক্যাটাগরি যা সংবেদনশীল এবং চারটি 'সি' ক্যাটাগরি অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত কম সংবেদনশীল তালিকায় পড়ে।
এই পাঁচটি অত্যন্ত সংবেদনশীল হ্রদের মধ্যে, চারটি পিথোরাগড় জেলায় এবং একটি চামোলিতে এবং চারটি সংবেদনশীল হ্রদের মধ্যে দুটি পিথোরাগড়ে এবং একটি চামোলি এবং তেহরিতে রয়েছে । প্রথম পর্যায়ে পাঁচটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিমবাহী হ্রদের ঝুঁকি মূল্যায়ন পরিচালনার জন্য দু'টি পৃথক দল গঠন করা হয়েছে ৷ যার কাজ শুরু হবে চলতি বছরের মে-জুন মাসে ৷
কীভাবে হবে এই কাজ? সিনহা জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ের কাজটি স্যাটেলাইট ডেটা পর্যবেক্ষণ এবং তথ্য সংগ্রহ, বাথমেট্রি এবং এলাকা জরিপ করবে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হাইড্রোলজি, রুরকির বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত প্রথম দল ৷ দ্বিতীয় দল পুনের সি-ড্যাক (C-DAC)-এর নেতৃত্বে তৈরি প্রধান টেকনিক্যাল এজেন্সি হিসাবে কাজ করবে ৷ এই সংস্থার সঙ্গে থাকছে দেরাদুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ রিমোট সেন্সিং সংস্থা, হিমালয়ান জিওলজির ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট, উত্তরাখণ্ড স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি, উত্তরাখণ্ড ল্যান্ডস্লাইড মিটিগেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ৷ 'এ' ক্যাটেগরিতে পড়া অন্য তিনটি হিমবাহের হ্রদ অধ্যয়ন ও জরিপ করবে। এই দ্বিতীয় দল যে সকল হিমবাহী হ্রদ 'এ' ক্যাটাগরিতে রয়েছে তা নিয়ে জরিপ ও পর্যবেক্ষণ শুরু করবে ৷
আরও পড়ুন:
1. বিশ্লেষণ: জেলবন্দি অবস্থায় অরবিন্দ কেজরিওয়াল কি পারেন সরকার চালাতে?
2. আত্মনির্ভরতায় বদলে যাচ্ছে দেশের প্রতিরক্ষা মানচিত্র, পড়ুন বিস্তারিত বিশ্লেষণ
3. ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার পরের অর্থবর্ষে কমে 6.5 শতাংশে হতে চলেছে ! পড়ুন বিশ্লেষণ