নয়াদিল্লি, 13 ফেব্রুয়ারি: ফের কৃষকদের আন্দোলন শুরু হয়েছে ৷ যে আন্দোলনকে অনেকে ফার্মার্স প্রোটেস্ট 2.0 বা কৃষকদের প্রতিবাদ 2.0 বলছেন ৷ এবার তাঁরা ডাক দিয়েছেন ‘দিল্লি চলো’র ৷ দু’বছর আগে অনেকটা এভাবেই পঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের কৃষকরা তিনটি কৃষি আইনের প্রতিবাদে আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন ৷ দু’বছর পর ফের মঙ্গলবার পথে নামলেন তাঁরা ৷ এর আগে দু’জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বৈঠক ৷ কিন্তু সেখানে কোনও রফাসূত্র বের হয়নি বলে এক কৃষক নেতা জানিয়েছেন ৷
কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা এবং খাদ্য ও উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল দু’দফায় কৃষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ৷ তিনি অবশ্য জানিয়েছেন, কৃষক নেতারা অধিকাংশ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে ৷ এই নিয়ে একটি কমিটিও গড়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে ৷ আগামিদিনে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদী ৷
- কৃষকদের প্রাথমিক দাবি হল সমস্ত ফসলের জন্য ন্যূনতম সমর্থন মূল্যের (এমএসপি) আইনি গ্যারান্টি। সরকার সংসদে তার লিখিত উত্তরে জানিয়েছে যে তারা রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় মন্ত্রক, সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলির মতামত বিবেচনা করে কৃষি খরচ ও মূল্য কমিশনের (সিএসিপি) সুপারিশের ভিত্তিতে বিভিন্ন কৃষি ফসলের এমএসপি নির্ধারণ করছে । কমিশন উৎপাদন খরচ এবং চাহিদা-সরবরাহ পরিস্থিতি, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক দামের প্রবণতা, আন্তঃশস্যের মূল্য সমতা, কৃষি ও অকৃষি খাতের মধ্যে বাণিজ্যের শর্তাবলী এবং এমএসপির সম্ভাব্য প্রভাবের মতো কারণগুলিকেও বিবেচনা করবে । এর মধ্যে জমি ও জলের মতো দুষ্প্রাপ্য প্রাকৃতিক সম্পদের যৌক্তিক ব্যবহার-সহ উপভোক্তার বিষয় এবং সামগ্রিক অর্থনীতিও জড়িয়ে রয়েছে ।
- কৃষকরা স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশের বাস্তবায়ন চায় । প্রয়াত এমএস স্বামীনাথনের নেতৃত্বে কৃষকদের জন্য জাতীয় কমিশন 2006 সালে তার রিপোর্ট জমা দেয় । কমিশনের প্রধান সুপারিশ ছিল যে এমএসপি উৎপাদনের ওজনের গড় খরচের চেয়ে কমপক্ষে 50 শতাংশ বেশি হওয়া উচিত । এই সুপারিশটি 2007 সালের কৃষকদের জন্য জাতীয় নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি ।
- কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের জন্য পেনশন । 60 বছরের বেশি বয়সী প্রতিটি কৃষক ও খামার শ্রমিকদের জন্য মাসে 10 হাজার টাকা মাসিক পেনশনের জন্য জোর দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা ।
- কৃষকের ঋণ মকুব হল প্রতিবাদী কৃষকদের আরেকটি প্রধান দাবি । কৃষকদের মতে, কৃষিঋণই কৃষকদের জীবন চলে যাওয়ার প্রধান কারণ । এটি সামগ্রিকভাবে কৃষিজীবী সম্প্রদায়কে শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় রেখেছে ৷ কৃষকরা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া সমস্ত কৃষিঋণ সম্পূর্ণ মকুবের দাবি তুলেছেন ৷
- কৃষকরা দাবি করেছেন যে 2020-21 সালে সরকারের বিরুদ্ধে এর আগে যে কৃষকরা আন্দোলন করেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে ৷ সরকার এই দাবিতে সম্মত বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে ৷
- 2020-21 কৃষকদের বিক্ষোভের সঙ্গে যুক্ত আরেকটি দাবি হল, আন্দোলনের সময় প্রাণ হারিয়েছে এমন বেশ কয়েকজন কৃষকের পরিবারের জন্য আর্থিক সাহায্য দেওয়া ৷
- কৃষকরা চায় কেন্দ্রীয় সরকার জমি অধিগ্রহণ আইন 2013 ফিরিয়ে আনুক । কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জমি অধিগ্রহণের পর কৃষকরা ভূমিহীন হয়ে পড়েছে । তাঁরা উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের দ্বারা অধিগৃহীত জমির ন্যায্য ক্ষতিপূরণ চান ৷ তাঁদের আরও দাবি, তাঁদের জমিতে গড়ে ওঠা আবাসিক বা বাণিজ্যিক প্লটে পরিবারের জন্য 10 শতাংশ জমি নির্ধারণ । কৃষকদের যুক্তি, তাঁরা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন, তা মোট অধিগৃহীত জমির 5 থেকে 7 শতাংশ । নয়ডা অথরিটি, গ্রেটার নয়ডা অথরিটি এবং যমুনা অথরিটির মতো বেশিরভাগ কর্তৃপক্ষের ক্ষেত্রেই এই অবস্থা । কৃষকরা বলছেন, এর আগে কম দামে জমি অধিগ্রহণের কারণে তাঁরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ।
- লখিমপুর খেরির ঘটনায় নিহত কৃষকদের পরিবারের জন্য আর্থিক সাহায্যের দাবিও তোলা হয়েছে ৷ পাশাপাশি 2021 সালের 3 অক্টোবর ঘটে যাওয়া ওই ঘটনায় দোষীদের কড়া শাস্তির দাবিও করা হয়েছে আন্দোলনকারীদের তরফে ৷ ওই ঘটনায় চারজন প্রতিবাদী কৃষককে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে ৷ এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্রের ছেলে আশিস মিশ্র ৷
- মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট অনুযায়ী কাজের দিন 100 থেকে বাড়িয়ে 200 এবং দৈনিক মজুরি 700 টাকা করার দাবি তুলেছেন কৃষকরা ৷ পাশাপাশি এটি কৃষির সঙ্গে সংযুক্ত করার দাবিও তুলেছেন তাঁরা ৷
- কৃষকরা চায় ভারত সরকার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) থেকে সরে যাক । কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় সরকারকে ডব্লিউটিও থেকে বেরিয়ে আসার এবং এই সংস্থার সঙ্গে সম্পাদিত সমস্ত বাণিজ্য চুক্তি বন্ধ করার জন্যা চাপ দিয়ে আসছে । কৃষকদের মতে, ডব্লিউটিও ছোট জমির মালিক কৃষকদের উপেক্ষা করে বাণিজ্যিক ও শিল্প সংক্রান্ত চাষের পক্ষে জোর দেয় ৷
আরও পড়ুন: